শিক্ষা সম্পর্কিত খবর এবং শাআনসি প্রদেশের মেয়ে লি ইয়ানের পুনরায় স্কুলে ফিরে যাওয়ার গল্প
  2019-11-25 15:50:23  cri

 


চীন-ইউনেস্কো মহাপ্রাচীর বৃত্তি প্রতিষ্ঠার ২৫তম বার্ষিকী উদযাপন

১৯৯৪ সালে চীন সরকার ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে 'মহাপ্রাচীর বৃত্তি' স্থাপন করা হয়। এ বৃত্তির মাধ্যমে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর সরকারি বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণা সংস্থার কর্মীদের চীনে এক বছর মেয়াদি পড়াশোনা বা গবেষণার সুযোগ প্রদান করা হয়। ২০১৪ সালে ইউনেস্কোর সদরদপ্তরে ভাষণ দেওয়ার সময় বার্ষিক বৃত্তির সুযোগ ২৫ জন থেকে ৭৫ জনে বাড়ানোর ঘোষণা দেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

চলতি বছর মহাপ্রাচীর বৃত্তি প্রতিষ্ঠার ২৫তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে উদযাপনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। চীনের শিক্ষামন্ত্রী ছেন বাও শেং এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালক আউড্রেই আজুলে এবং আফ্রিকার বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী মহাপরিচালক ফিরমিন এডোয়ার্ড মাতোকো উদযাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং অভিনন্দন জানান।

অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে চীনা শিক্ষামন্ত্রী ছেন বাও শেং বলেন, মহাপ্রাচীর বৃত্তি প্রকল্প চীন সরকার ও ইউনেস্কোর সাথে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দক্ষ ব্যক্তি প্রশিক্ষণের এক সূচনা। গত ২৫ বছরে বিশ্বের ১০০টি দেশের ৭০৩ জন ব্যক্তি অর্থায়ন লাভ করেন এবং এ পর্যন্ত তা চীন সরকার ও ইউনেস্কোর সহযোগিতার দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে।

ছেন জোর দিয়ে বলেন, চলমান বিশ্বে বিরাট পরিবর্তন ঘটছে, মানবজাতি অতুলনীয় চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের সম্মুখীন হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাইলে শিক্ষা ও ব্যক্তি হবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। জাতিসংঘের ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন অ্যাজেন্ডা ও মানবজাতির সুন্দর ভবিষ্যত বাস্তবায়নে বিভিন্ন দেশের উচিত শিক্ষা সহযোগিতা ও বিনিময় জোরদার করা এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনে দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করা।

ইউনেস্কোর মহাপরিচালক আউড্রেই আজুলে মহাপ্রাচীর বৃত্তিকে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রশংসা করেন, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ইউনেস্কো এবং চীন সরকার বরাবরই অংশীদারি সম্পর্ক স্থাপন, জ্ঞান ও সম্পদের যৌথ বিনিময় আর উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে। চীন সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় ভিন্ন সংস্কৃতির বিনিময় ও সমঝোতা বাস্তবায়ন করা, আন্তর্জাতিক সমাজের সহযোগিতা চালু করা, শান্তির ভিত্তি সুসংবদ্ধ করা হবে বলে আশা করে ইউনেস্কো, যা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম।

চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী থিয়ান স্যুয়ে জুন বলেন, ভবিষ্যতের সম্মুখীনে চীন বরাবরই ইউনেস্কোর আফ্রিকাকে প্রাধান্য দেয়ার নীতি অনুসরণ করে, ইউনেস্কোর কাঠামোতে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা চালু করা এবং ব্যাপক উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিন্ন সমৃদ্ধির পথ যাত্রায় অবদান রাখে। অভিন্ন পরামর্শ, নির্মাণ ও উপভোগের ভিত্তিতে চীন ইউনেস্কোর সাথে মহাপ্রাচীর বৃত্তি প্রকল্প সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে প্রচেষ্টা চালাবে।

উদযাপনী অনুষ্ঠানে জ্যামাইকা, থাইল্যান্ড, ইউক্রেন ও জাম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বৃত্তি অর্জনকারীরা চীনে লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। মহাপ্রাচীর বৃত্তির কারণেই তারা চীনে এসে চীনা সংস্কৃতি ও উন্নয়ন অনুভব করার সুযোগ পান। ফলে তারা ভিন্ন দিক থেকে বিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এতে তাদের জীবনযাপনেরও ব্যাপক পরিবর্তন হয়।

'ছুনলেই পরিকল্পনায়' ৩.৩ কোটি ইউয়ান অর্থায়ন চীনা সশস্ত্র পুলিশ ইউনিটের

নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বেইজিংয়ে চীনা সশস্ত্র পুলিশ ইউনিট ষষ্ঠবারের মতো 'ছুনলেই পরিকল্পনায়' ৩.৩ কোটি ইউয়ানেরও বেশি অর্থ প্রদান করে। চীনের নারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ম্যাডাম শেন ইউয়ে ইউয়ে অর্থ-প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং ভাষণ দেন।

তিনি বলেন, চীনা সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী বহু বছর ধরে চীনের নারী ও শিশু কর্তব্যে সমর্থন দেয়, তা থেকে দেশপ্রেম, চীনা জনগণের প্রতি আন্তরিকতা এবং দরিদ্র এলাকার মানুষদের দারিদ্র্যমুক্ত বাস্তবায়নের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়। সংশ্লিষ্ট অর্থ লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত ছাত্রীদের পুনরায় শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা দেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে থেকে 'ছুনলেই পরিকল্পনা' চালু হয়, তা চীনের নারী ফেডারেশন ও শিশু তহবিলের যৌথ উদ্যোগে লেখাপড়া বঞ্চিত মেয়েদের সহায়তা প্রকল্প। এ পর্যন্ত চীনা সশস্ত্র পুলিশ এ প্রকল্পে মোট ৯.১ কোটি ইউয়ান অর্থ প্রদান করেছে, তাতে হাজার হাজার মেয়েকে পুনরায় স্কুলে ফিরে যেতে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

চীনের শাআনসি প্রদেশের পাহাড়াঞ্চলের মেয়ে লি ইয়ানের পুনরায় স্কুলে ফিরে যাওয়ার গল্প

'লি ইয়ান,তাড়াতাড়ি এসো! আমাদের চর্চা শুরু হবে!' সহপাঠীদের কথা শুনে একজন মেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে খেলার মাঠে আসে। তার নাম লি ইয়ান, শাআনসি প্রদেশের জুওশুই জেলার ছাওপিং মাধ্যমিক স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর পুনরায় স্কুলে ফিরে আসতে পারা তার কাছে অনেক আনন্দের ব্যাপার।

ছাওপিং জেলার ইনকৌ গ্রামের একটি পুরনো বাড়ি মেয়ে লি ইয়ানের বাসা। বাসায় বিদ্যুত্ নেই। খালি ৩টি ঘরের এ বাড়িতে শুধু অল্প আসবাবপত্র সাজানো আছে। মেয়ে লি ইয়ান নানীর সাথে এখানে বাস করে। ৩ বছর বয়সে তার বাবা মা মারা যান, তাই ছোটবেলা থেকে সে নানীর সাথে থাকে। পারিবারিক কারণে মেয়ে লি ইয়ান সবসময় চুপচাপ থাকে, ক্লাসে কখনো কথা বলে না বা শিক্ষকের প্রশ্নোত্তর করে না। অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলতে লজ্জা পায় এবং সবসময় মাথা নিচু করে হাটাহাটি করে। তার পড়াশোনা বন্ধ হবার আগে শিক্ষক চাও থাও এমন কথা বলেন।

জুওশুই জেলা ছিনলিং পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। এখানে বেশিরভাগ এলাকাই পাহাড়াঞ্চল। ছোট ছোট গ্রাম পাহাড়াঞ্চলের দূরবর্তী এলাকায় অবস্থিত, তাই প্রতি বছর কোনো না কোনোভাবে পাহাড়ের বাচ্চাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

পাহাড়াঞ্চলের বাচ্চাদের লেখাপড়ার অবস্থা জানার জন্য জুওশুই জেলার বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও শিক্ষা খেলাধুলা বিভাগ ২০১৭ সাল থেকে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি চালু করে। তাতে অনলাইন তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, স্থানীয় অধিবাসীদের পরিচয়পত্র, স্কুলে ভর্তির অবস্থা আর অর্থ সহায়তা ডেটা একসাথে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া, বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে প্রতিটি পরিবারের বাচ্চাদের লেখাপড়ার অবস্থা জানা হয়। এতে দেখা যায়, এখানে পিতা-মাতার বাইরে চাকরি করা বা পিতা-মাতার সাথে না থাকার কারণেই বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় ।

চলতি বছরের মে মাসে লি ইয়ান স্কুল ছেড়ে দেয় এবং জেলায় স্বল্পকালীন চাকরি করতে শুরু করে। এ অবস্থা জানার পর ছাওপিং মাধ্যমিক স্কুল আলাদাভাবে তার জন্য সহকারী শিক্ষকের ব্যবস্থা করে। তারপর থেকে ক্লাসের শিক্ষক ও স্কুলের প্রেসিডেন্ট অনেক বার তার বাড়িতে যান।

পাহাড়াঞ্চলের বাচ্চাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ মোট তিন রকমের। জুওশুই জেলার বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও খেলাধুলা বিভাগের প্রধান ফু সিয়ান লিয়াং বলেন, এ তিনটি কারণ হলো পরিবারের আর্থিক অবস্থা দুর্বল, নিজের লেখাপড়ার আগ্রহ কম এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব। মেয়ে লি ইয়ানের মধ্যে এ তিনটি কারণের সবগুলোই দেখা যায়।

এমন বাচ্চাদের আত্মবিশ্বাস পুনরায় গঠন করা এবং তাদের লেখাপড়া পুনরুদ্ধার করা একটি অতি জটিল ব্যাপার। এ সম্পর্কে জুওশুই জেলায় 'লেখাপড়ায় অনাগ্রহী শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস গঠন' অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর অবস্থা বিবেচনা করে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। জেলায় খেলাধুলা, নৃত্য, বিজ্ঞান প্রযুক্তিসহ প্রায় ৩০ ধরনের সহস্রাধিক কমিউনিটি চালু হয়েছে, যাতে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ তৈরি এবং আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সহায়তা দেওয়া যায়।

এ সম্পর্কে সহকারী শিক্ষক ইয়াও সিন ইয়ু বলেন, আমরা প্রথমবারের মতো লি ইয়ানের বাড়িতে যাওয়ার সময় অনুভব করেছি যে, মেয়ে লি ইয়ান এবং নানীর মধ্যে খুব কম কথাবার্তা হতো। সে নিজেকে একা একা করে রাখতো। তার সাথে অনেকবার কথা বলার পর সে স্কুলে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষকরা তাকে শুধু ক্লাসের পাঠ্যপুস্তক-ই বুঝিয়ে দেন না, পাশাপাশি মানবিক অবস্থা ও তার প্রিয় কাজ অনুযায়ী তাকে নৃত্য ও পিয়ানো কমিউনিটিতে পাঠিয়ে দেন। এভাবে তার মনের দুঃখ এবং অন্যদের সাথে কথা বলার সমস্যা দূর করা হয়।

সাংবাদিকদের সাক্ষাত্কার দেওয়ার সময় লি ইয়ান বলে, 'আমি নৃত্য পছন্দ করি, প্রতি সপ্তাহে দুবার আমি নৃত্য ক্লাসে যাই। নৃত্য কমিউনিটিতে আমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু রয়েছে, আমাদের কমিউনিটিতে মাঝে মাঝে নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেই।'

জুওশুই জেলার শিক্ষা বিভাগ লি ইয়ানের মতো ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে উপস্থিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন কল্যাণমূলক অর্থ দিয়ে দরিদ্র শিক্ষার্থীকে সহায়তা দেওয়া। ১৯০০ জন শিক্ষক এ ধরনের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করেন এবং নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পারিবারিক শিক্ষাবিষয়ক ক্লাস নেন। তাছাড়া, কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু করা হয়,যাতে দরিদ্র পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে।

সেপ্টেম্বর মাসে স্কুলের সহায়তায় মেয়ে লি ইয়ান এবং নানী স্কুলের কাছে একটি ছোট বাড়ি ভাড়া করেছে। স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীদের প্রভাবে লি ইয়ানের মুখে মিষ্টি হাসি দেখা যায়। লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়া অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরাও এখন স্কুলে ফিরে এসেছে।

ভবিষ্যতের জীবনযাপন সম্পর্কে মেয়ে লি ইয়ান বলে, আমি ভালোভাবে লেখাপড়া সম্পন্ন করতে চাই। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে চাকরি করে টাকা অর্জন করবো এবং নানীকে যত্ন নেবো।

প্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও এখানেই শেষ করতে হবে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.bengali.cri.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, থাকুন সুন্দর ও আনন্দে। আগামী সপ্তাহের একই দিনে একই সময়ে আবারো কথা হবে। যাই চিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল/শুয়ে ফেই ফেই)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040