মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ
  2019-12-08 18:34:25  cri
জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক ২৫তম সম্মেলন কপ-২৫ এ যোগ দিতে গত সপ্তাহে স্পেন সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাদ্রিদে ওই সম্মেলনে যোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং স্পেনের রাজারানীর সংবর্ধনায় যোগ দেন তিনি। সম্মেলনে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম- সিভিএফের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসু ছিল প্রধানমন্ত্রীর স্পেন সফর। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা নজর দেব প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের ওপর।

কপ-২৫ সম্মেলনে যোগ দিতে ১ ডিসেম্বর মাদ্রিদে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিনই মাদ্রিদের হোটেল ভিলা ম্যাগনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে প্রবাসীদের সঙ্গে এক মতবিনিয় সভায় যোগ দেন তিনি। দেশের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন সরকার প্রধান। বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ সব দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করা ছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যা শিখিয়ে গেছেন, পরবর্তী প্রজন্মকেও সে শিক্ষা দিতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসছিল তাদের অপকর্মের কারণে সমাজে মানুষের চারিত্রিক স্খলন দেখা দিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজের অসুস্থতাগুলো দূর করতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ও স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

২ ডিসেম্বর মাদ্রিদে জলবায়ু সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের নিষ্ক্রিয়তা মানবজাতিকে ধংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে নতুন প্রজন্ম বর্তমান নেতৃত্বকে ক্ষমা করবে না বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের জন্য এক নির্মম বাস্তবতা। তা এখন মানবজীবন, পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ। এ সময় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে অভিবাসী সংকট মোকাবেলায় একটি যথাযথ কাঠামো তৈরি করতেও বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বাস্তুচ্যুতদের স্থানান্তর ও সুরক্ষায় বিশ্বসম্প্রদায়ের আরো নজর দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে সম্মেলনের ওয়ার্কিং সেশনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি বক্তব্য রাখে প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিদ্যমান ঝুঁকির পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করেছে। বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এবারের কপ-২৫ সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-সিভিএফ-এ আগামী বছরের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, কপ-২৫'র উদ্বোধনী দিনে মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান সভাপতি হিলদা হেইনে আগামী বছরের সিভিএফের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। প্রধানমন্ত্রী এ দায়িত্ব পালনে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে মালদ্বীপের উদ্যোগে সিভিএফ গঠিত হয়। এ ফোরামের কাজ হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব চিহ্নিত করা। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের জন্য এমন একটি ফোরামে সভাপতিত্ব গুরুত্ববহ একটি বিষয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজের অবস্থার কথা আরো ভালোভাবে তুলে ধরতে পারবে।

সব মিলিয়ে জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদান ফলপ্রসু হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040