২০১৯ সালে চীনে বিভিন্ন খাতে মোট ২ লাখ কোটি ইউয়ান কর কমানো হয়েছে
  2020-01-04 14:04:03  cri

১. যুক্তরাষ্ট্র ভুল আচরণ বন্ধ করে দু'দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলবে বলে আশা করে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের 'জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন বিল, ২০২০' গৃহীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এ কথা বলেন। মার্কিন বিলে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিকূলে অনেক নেতিবাচক ও ক্ষতিকর নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মুখপাত্র বলেন, সংশ্লিষ্ট বিলে চীনা পণ্য ক্রয় ও চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ-রফতানির ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যে মার্কিন প্রশাসনের হস্তক্ষেপের প্রমাণ। এমন আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত সমতাভিত্তিক, ন্যায়সংগত, ও অবাধ বাণিজ্যের শ্লোগানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের এহেন আচরণ আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যিক শৃঙ্খলা নষ্ট করছে এবং বৈশ্বিক শিল্প-চেইনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাজার অর্থনীতের নীতি মেনে, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা পরিত্যাগ করে, দু'দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক সহযোগিতার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানায় বেইজিং।

২. চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি ইউরোপীয় থিংকট্যাংকের মিডিয়া বিনিময় অধিবেশনে ইউরোপীয় সাংবাদিকের প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্নটি ছিল: চীন উন্নয়নশীল দেশ, নাকি উন্নত দেশ? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ অজুহাতে চীনের তীব্র সমালোচনা করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বলেন, চীন 'উন্নয়নশীল দেশের ভান করে অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে'। অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী চীনকে 'নবোত্থিত অর্থনৈতিক সত্ত্বা' হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বিশ্বের প্রতি চীনের নতুন অবস্থানকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান।

বস্তুত, পশ্চিমা দেশগুলোর এ আচরণ খুব আশ্চর্যজনক। প্রশ্ন হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলো কেন বার বার চীনকে 'উন্নত দেশ' হিসেবে আখ্যায়িত করে? ডিটার্সন ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল একোনোমিক-এর উধ্বর্তন গবেষক চাড পি বৌউন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে উন্নত দেশ হিসেবে গণ্য করতে চায়, কারণ দেশটি চায় যে, চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাঠামোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেওয়া ধারাবাহিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হোক।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওয়াং ই বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অর্থনীতি দ্রুত উন্নত হলেও, চীন এখনও উন্নয়নশীল দেশই রয়ে গেছে। মাত্র কয়েক দশক ধরে উন্নয়নের পথে পরিচালিত একটি দেশকে কয়েক শ বছর ধরে উন্নয়নের পথে চলা দেশের সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়।

বাস্তবতা হচ্ছে, একটি দেশ উন্নত না উন্নয়নশীল, তা বেশ কয়েকটি সূচক থেকে জানা যায়। বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে চীনের গড় মাথাপিছু জিডিপি'র পরিমাণ ছিল ৯৭০০ মার্কিন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৬ ভাগের এক ভাগ এবং ইইউ'র চার ভাগের এক ভাগ। চীনের গড় জিডিপি বিশ্বের গড় জিডিপি'র তুলনায়ও কম। জাতিসংঘ উন্নয়ন কার্যক্রম (ইউএনডিপি)-র প্রকাশিত মানব উন্নয়ন সূচক (এইচডিআই) অনুযায়ী চীনে মানব উন্নয়ন সূচক ০.৭৫২, যার বিচারে চীনের অবস্থান বিশ্বে ৮৬ নম্বরে। এ সংখ্যা জার্মানির ০.৯৩৬, যুক্তরাষ্ট্রের ০.৯৩৪ এবং জাপানের ০.৯০৯-এর তুলনায় অনেক কম। এ সব পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে, চীন উন্নয়নশীল দেশ।

৩. চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া সহযোগিতা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সহায়ক। সম্প্রতি ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা সচিবালয়ের উপ-মহাসচিব খাং তো হো চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে তিন দেশের মধ্যে সহযোগিতা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এ সহযোগিতা থেকে ব্যাপক সাফল্যও অর্জিত হয়েছে। চলতি বছর এ সহযোগিতার ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে 'আগামী ১০ বছরের জন্য তিন দেশের সহযোগিতার রোডম্যাপ' প্রকাশিত হয়, যা কার্যকরভাবে তিন দেশের সহযোগিতা গভীরতর করবে।

তিন দেশের মধ্যে বেসরকারি খাতে আদান-প্রদান সম্পর্কে মিস্টার খাং বলেন, 'এশিয়া ক্যাম্পাস' ও 'পূর্ব এশিয়া সাংস্কৃতিক শহর'সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তিন দেশের মধ্যে বেসরকারি খাতে বিনিময় জোরদার করা হবে।

প্রস্তাবিত চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল সম্পর্কে তিনি বলেন, তিন দেশের আর্থিক কাঠামো ও আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিবেচনা করে, অধিকতর যৌথ-কল্যাণ অর্জনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তিন দেশ অবাধ বাণিজ্য ও বহুপক্ষবাদ সংরক্ষণ করবে এবং আরসিইপি আলোচনার ভিত্তিতে তিন দেশের মধ্যে অবাধ বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য কাজ করে যাবে।

'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ সম্পর্কে খাং বলেন, চীনের এ উদ্যোগ একটি মহান পরিকল্পনা। তিন দেশের উচিত এ উদ্যোগের আওতায় যোগাযোগ জোরদার করে পারস্পরিক সহযোগিতায় বড় সাফল্য অর্জন করা। তিন দেশের মধ্যে গভীর সহযোগিতা ও পারস্পরিক আস্থা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।

৪. ২০১৯ সালে চীনের অর্থনীতি কঠিন দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীণ হয়। এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায়। পাশাপাশি চীনের অর্থনীতিতে কাঠামোগত ও ব্যবস্থামূলক সমস্যাও দেখা দেয়। এ প্রেক্ষাপটেও সারা বছরে চীনের অর্থনীতি চাপ থেকে বেরিয়ে স্থিতিশীল ছিল। এসময় অর্থনীতির নতুন চালিকাশক্তি যুক্ত হয় এবং গণজীবিকা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে।

বিশাল বাজার ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার মূল কারণ। ১৪০ কোটি জনসংখ্যা এবং ৪০ কোটি মধ্যবিত্তের সুবিধা রয়েছে চীনের, কোনো দেশের সঙ্গে যার তুলনা চলে না। চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ৬০.৫ শতাশ অবদান রেখেছে ভোগ। ভোগ এখন চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।

সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতির কারণে চীনের অর্থনীতির জন্য প্রযুক্তিগত ও আর্থিক ভিত্তি স্থাপন সম্ভব হয়েছে। গত ৪০ বছরে চীন বিশ্বের উন্নয়নের ইতিহাসে 'চীনা বিষ্ময়' সৃষ্টি করেছে। চীনে আছে ৯০ কোটি শ্রমশক্তি। নব্যতাপ্রবর্তনের সূচকের দিক দিয়ে বর্তমানে বিশ্বের ১৪তম অবস্থানে রয়েছে চীন, যা দেশটির হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শক্তি বাড়িয়েছে।

৫. চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ সম্প্রতি ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির পঞ্চদশ অধিবেশনে ২০১৯ সালের করসংক্রান্ত কর্মপ্রতিবেদন পেশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে সারা দেশে বিভিন্ন খাতে মোট ২ লাখ কোটি ইউয়ান কর কমানো হয়েছে, যা চলতি বছরের শুরুতে সরকারি বিবরণীতে উল্লেখিত লক্ষ্যমাত্রার সমান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন খাতে কর কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর সাফল্যও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চীনের অর্থমন্ত্রী লিউ খুন অধিবেশনে বলেন, চলতি বছর যে-পরিমাণ কর কমানো হয়েছে, তা জিডিপি'র ২ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা বিশ্বের যে-কোনো দেশের তুলনায় বেশি। কর কমানোয় জনগণও সন্তুষ্ট।

৬. সম্প্রতি তিব্বতের ১৯টি জেলা আনুষ্ঠানিকভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়। চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দারিদ্র্যবিমোচন পরিচালনা কমিটি এ তথ্য জানায়। এই ১৯টি জেলা ছিল তিব্বতের সর্বশেষ কয়েকটি দরিদ্র জেলা।

৭. ২০১৯ সালে ঘানার ৮২৮ জন বাসিন্দা চীনের বিদেশি-সহায়তা প্রশিক্ষণ-কর্মসূচির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। উপকৃত ঘানাবাসীদের মধ্যে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও কারুশিল্পীসহ বিভিন্ন মহলের ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত আছেন। ঘানায় চীনা দূতাবাসের অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিভাগ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী ঘানার উত্তরাঞ্চল উন্নয়ন ব্যুরোর যোগাযোগ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি চীনা প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছেন। এই জ্ঞান তাঁর নিজের ও দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে।

৮. রুশ সরকার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে উদ্যোগ নেবে। সম্প্রতি মস্কোয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, চলতি বছর রাশিয়া অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। এখন জনগণের আয় বাড়ানো সরকারের প্রধান কাজ।

৯. 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায়, 'চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর' পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানে এর প্রভাবে শিল্প ক্ষেত্র বিকশিত হচ্ছে। পাকিস্তান এখন বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে পারছে। চীনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত নাঘমানা এ হাশমি সম্প্রতি বেইজিংয়ে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর হলো 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে পাকিস্তান শিল্প ক্ষেত্রের আরও বিকাশে নতুন পরিকল্পনা করছে। এ অবস্থায় পাকিস্তান চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে সেদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানায়।

মাদাম হাশমি আরও বলেন, পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্ক দৃঢ় ও টেকসই। বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের কোনো পরিবর্তনই দু'দেশের সুসম্পর্ক নষ্ট করতে পারবে না।

১০. বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে ১১টি খাত চিহ্নিত করেছে। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ট্রেড কমিটির (জেটিসি) বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, হ্যানয়ে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে জয়েন্ট ট্রেড কমিটির বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে যে ১১টি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: কৃষি, ওষুধ, বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা, পোশাকশিল্প খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, হালাল পণ্যের বাণিজ্য বৃদ্ধি, সফটওয়্যার খাতে বিনিয়োগ, সরাসরি প্লেন চালু, পাটপণ্যের প্রসার বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও পর্যটন খাতে সহযোগিতা।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040