অনলাইনে শিক্ষা
  2020-01-13 16:37:15  cri

 


চীনের চেচিয়াং প্রদেশের চৌশান শহরের পুথুও এলাকার থাওহুয়া কেন্দ্রীয় স্কুলের ছাত্রী চুং ইয়ু ছি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে। ক্লাসে একটি নতুন স্ক্রিন লাগানো হয়েছে। এ স্ক্রিনের মাধ্যমে সে ১৫ কিলোমিটার দূরে তুংকাং মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।

স্ক্রিনের মাধ্যমে ছাত্রী চুং বলে, 'সিছুয়ান প্রদেশের লোকেরা ঝাল খাবার খেতে ভালোবাসে। এ অভ্যাস স্থানীয় জলবায়ুর সাথে সম্পর্কিত।' তুংকাং মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক ওয়াং তান ফেং তার উত্তর শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ নতুন স্ক্রিনের মাধ্যমে বিভিন্ন দ্বীপের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন তিনি।

'এক কেবল লাইন, এক স্ক্রিন' প্রকল্প সমুদ্রের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বাধা দূর করেছে এবং দ্বীপাঞ্চলের শিক্ষাসম্পদও সমৃদ্ধ হয়েছে। এ সম্পর্কে শিক্ষক ওয়াং বলেন, 'ইন্টারনেট প্লাস বাধ্যতামূলক শিক্ষা' পদ্ধতি মৌলিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে নতুন শক্তি যুগিয়েছে।

এ সম্পর্কে দ্বীপ এলাকার স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষক ইং চিয়ান ছেং বলেন, নতুন স্ক্রিনে অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণে অন্যান্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে দ্বীপের শিক্ষার্থীরাও। এতে দ্বীপের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান বাড়ছে। চৌশান শহরের তাইশান জেলার কাওথিং প্রাথমিক স্কুলের বিজ্ঞান ক্লাসে শিক্ষক ইং 'অগাস্ট মাসে চৌশান শহরের আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য' সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। তখন স্ক্রিনের মাধ্যমে ছাংথু প্রাথমিক স্কুলের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী হাত তুলে প্রশ্নের উত্তর দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

'ছাংথু প্রাথমিক স্কুলের বাচ্চারা শুরুর দিকে একটু লজ্জা পায়, পড়াশোনার গতিতেও একটু পিছিয়ে পড়ে। তবে বর্তমানে নতুন স্ক্রিন তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়েছে। তারা এখন নিজে থেকেই অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে।' কাওথিং প্রাথমিক স্কুলের প্রেসিডেন্ট কুও ইয়াং সুং এমন কথা বললেন। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে এক স্থানের শিক্ষকের সঙ্গে অন্য স্থানের শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। অনলাইন ক্লাস ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহও সৃষ্টি করে। কম সময়ের মধ্যে স্ক্রিনের উল্টোদিকে বসে থাকা ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথাবার্তা শুরু করা যায়।

অন্যদিকে চেচিয়াং প্রদেশের শাওশিং শহরের ক্যছিয়াও এলাকার চিচিয়াং প্রাথমিক স্কুলের 'গ্রাম গাইড' হু জুন ইয়ান ৬০ কিলোমিটার দূরে ক্যছিয়াও শিইয়ান প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য গ্রামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি তুলে ধরেন। এক স্ক্রিনের মাধ্যমে গাইড হু'র মাধ্যমে শহরের বাচ্চারা গ্রামের কৃষিক্ষেত ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়।

চেচিয়াং প্রদেশের উন্নত ইন্টারনেট-ব্যবস্থার কারণে প্রদেশের ১০০০টি মাধ্যমিক স্কুল ও প্রাথমিক স্কুল এবং জেলা ও গ্রামের স্কুলের মধ্যে অনলাইন শিক্ষাসম্পদ বিনিময় বাস্তবায়িত হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চেচিয়াং প্রদেশের শহরাঞ্চলের ১৪৫৮টি স্কুল জেলা ও গ্রামের স্কুলের সাথে অনলাইন শিক্ষা বিনিময় করেছে। এ সম্পর্কে চেচিয়াং প্রদেশের চিয়াসিং শহরের নানহু এলাকার শিক্ষা সমিতির প্রধান স্যু সিয়াও ইয়ান মনে করেন, 'ইন্টারনেট প্লাস বাধ্যতামূলক শিক্ষা'র উদ্দেশ্য শুধু 'ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাগ্রহণে সহায়তা করা নয়', বরং 'শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া'-ও। শহরের একজন শিক্ষক গ্রামের একজন শিক্ষককে সহায়তা করেন এবং এভাবে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকদের মান উন্নত হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সাথে সাথে অনলাইন শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে পার্থক্যও কমে আসে।

সি চিন পিংয়ের প্রিয় বাক্য

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিদেশে সফরকালে, আন্তর্জাতিক ফোরাম বা শীর্ষসম্মেলন অংশগ্রহণকালে বা চীনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপস্থিত থাকাকালে ভাষণ দিয়ে থাকেন। এসব ভাষণে তাঁর নিজস্ব চিন্তাভাবনা প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন স্থানে তার দেওয়া ভাষণ নিয়ে 'দেশ প্রশাসন' শীর্ষক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। আসলে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও প্রস্তাবসমূহ ধারাবাহিকভাবে উত্থাপিত হয়েছে। এসবই তাঁর কাজের অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত। তিনি অনেক সময় প্রাচীন চীনের শ্রেষ্ঠ কবিতা, উপন্যাস বা বিখ্যাত ব্যক্তিদের কথা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। আমরা তাঁর কিছু কিছু প্রিয় বাক্য বাছাই করে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করবো। আশা করি শ্রোতারা অনুষ্ঠান শুনে সি'র চিন্তাভাবনা ভালভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।

আজকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের লেখা একটি কবিতা তুলে ধরবো। এ কবিতা চীনের হ্যনান প্রদেশের লানখাও জেলার তত্কালীন সিপিসি'র সম্পাদক চিয়াও ইয়ু লু'র স্মরণে রচনা করেন প্রেসিডেন্ট সি।

১৯২২ সালের অগাস্ট মাসে চীনের শানতুং প্রদেশের জিবো শহরের বোশান জেলার বেইকুশান গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চিয়াও ইয়ু লু। ১৯৪৬ সালে তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। হ্যনান প্রদেশের লানখাও জেলার সিপিসি'র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি অনেক পরিশ্রমের কাজ করতেন এবং স্থানীয় গ্রামবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালান। লানখাও জেলার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বন্যা, বালিঝড় ও লবণাক্ত মাটির কারণ অনেক দুর্ভোগ পোহাতো। তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে চিয়াও অনেক অনুসন্ধান ও গবেষণাকাজ করেন। স্থানীয় বালি সমস্যার সমাধানে তিনি স্থানীয় গ্রামবাসীদের নিয়ে পালোনিয়া বন এবং বাদাম ও জুজুরে চাষ করেন। স্থানীয় সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কঠোর প্রশাসনিক নীতি চালু করেন। কখনো স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে টাকা বা উপহার গ্রহণ করেননি তিনি।

ব্যস্ততার মধ্যে অফিসে কাজ করার কারণে শরীর অসুস্থ হলেও সময়মতো হাসপাতালে ডাক্তারের সাথে দেখা করতেন না চিয়াও ইয়ু লু। তিনি কাজে মগ্ন থাকতেন। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৬৪ সালে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

১৯৯০ সালে যখন চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচৌ শহরে সিপিসি'র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন সি চিন পিং জনাব চিয়াও ইয়ুর অবদান ও পরিশ্রমের প্রশংসায় এ কবিতা রচনা করেন।

কবিতার বাংলা অনুবাদ অনেকটা এমন: 'আপনার প্রাণ আকাশে উড়ছে। এ নদী, এ পাহাড়, এ মাটি আপনার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকে। আপনার মতো সৎ কর্মকর্তাকে কে মিস না-করে?! বালিয়াড়ি আপনার জীবনের সাথে চলে গেছে। তুষার হোক, বরফ হোক আপনার মহান বীরত্বের কথা কখনও মুছে যাবে না।

চাঁদ আগের মতো আকাশে; আর আপনাকে মিস করে সবাই কাঁদে। দুর্নীতিমুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে আপনি স্থানীয় নাগরিকদের জীবনে কল্যাণ বয়ে এনেছেন....'

আসলে সি চিন পিংয়ের দৃষ্টিতে জনাব চিয়া ইয়ু লু একজন শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা, যিনি জনগণকে ভালোবাসতেন, পরিশ্রম ও সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতেন, সমস্যার সমাধানের পদ্ধতি খুঁজতেন। এ সম্পর্কে তিনি তার 'দেশ প্রশাসন' শীর্ষক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে লিখেছেন, 'চিয়াও ইয়ু লু'র স্মৃতি কোটি কোটি মানুষের মনে বেঁচে থাকবে। তাঁর স্মৃতি আমাদের পরিশ্রমী, সংগ্রামী ও জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল ক্ষমতাসীন পার্টি গঠন করতে উত্সাহ দেয়। তিনি আমাদের আধ্যাত্মিক সম্পদ।'

সুপ্রিয় বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়। আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

রেডিওতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা মিস করলে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো- www.bengali.cri.cn

এবার তাহলে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আবারো কথা হবে। চাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040