প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফলপ্রসু আমিরাত সফর
  2020-01-19 19:15:05  cri
গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাষ্ট্রীয় সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে তিনি আবুধাবি সাসটেইনিবিলিটি উইক ও জায়েদ সাসটেইনিবিলিটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী, আবুধাবীর ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। আলোচনা করেন বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানি ও ভিশন-২০৪১ নিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনেও যোগ দেন শেখ হাসিনা। আবুধাবিতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দেন গালফ নিউজকে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা নজর দেব বিষয়গুলোর দিকে।

১২ জানুয়ারি স্থানীয় সময় রাতে আবুধাবী পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা। পরদিন ১৩ জানুয়ারি আবুধাবি সাসটেইনিবিলিটি উইক ও জায়েদ সাসটেইনিবিলিটি পুরস্কার প্রদানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আবুধাবি ন্যাশনাল এক্সিবিশন হলে পৌঁছলে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য, পানি, খাদ্য, জ্বালানি ও হাইস্কুল- এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠানকে জায়েদ সাসটেইনিবিলিটি পুরস্কার দেওয়া হয়। সুলতান আল নাহিয়ানের সঙ্গে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাহাজ ও আইসিটি খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য আমিরাতের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

১৪ জানুয়ারি আবুধাবির একটি হোটেলে মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইরান, ইরাক, আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত ও ওমানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা ওই সম্মেলনে অংশ নেন। মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি বাড়াতে কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে- সেটি খুঁজে বের করতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার না হয়- সেদিকে খেয়াল রাখতেও বলেন রাষ্ট্রদূতদের।

রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়- বঙ্গবন্ধুর এ পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে প্রতিবেশি ও বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ সব সমস্যা ও ভুল বোঝাবুঝির সমাধান করতে চায়।

এদিকে, আবুধাবি সফরকালে প্রধানমন্ত্রী গালফ নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দেন-যা ১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে। সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, নাগরিকপঞ্জি, রোহিঙ্গা সমস্যা ও পরিবেশ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাগরিকপঞ্জি বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে সংশোধিত নাগরিক আইনের বিষয়টি তার বোধগম্য নয়। এটার দরকার ছিল না বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তবে, বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়গুলোতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, বাংলাদেশের এতে কোনো সমস্যা হবে না।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও কার্যকর পুনর্বাসনে মিয়ানমার কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী হতাশা ব্যক্ত করেন সাক্ষাৎকারে। বলেন, প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতেও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় নিয়েও কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে কাজ করছে তার সরকার।

সবকিছু মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আমিরাত সফর ফলপ্রসু এবং এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040