সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপ বা সিএমজি'র সাংবাদিকরা চিয়াংসি প্রদেশের সিছেং জেলার লিতি গ্রামের একটি প্রাকৃতিক কৃষি অঞ্চলে যান। সেখানে একটি পতিত জমি এখন উর্বর 'সোনার জমিতে' পরিণত হয়েছে। বিস্তারিত শুনুন প্রতিবেদনে।
দু'বছর আগে এটি পতিত জমি ছিল। দূরবর্তী অঞ্চল হওয়ায় গ্রামবাসীরা বাইরে গিয়ে কাজ করত। তাদের জমি ছিল অযত্ন-অবহেলায়। সাধারণত, দূরবর্তী এলাকাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করাও কঠিন একটি ব্যাপার। তবে কাও থিয়ান প্রাকৃতিক কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানির চেয়ারম্যান উ চিন ওয়েনের মতে, এমন জমি স্বর্ণের মতো মূল্যবান। তিনি বলেন, এখানে তার 'জৈব বাস্তুবিদ্যার' স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে দিন ও রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি। জমিতে পোকা বেঁচে থাকতে পারে না। এমন পরিবেশে 'জৈব বাস্তুবিদ্যার' জন্য উপযুক্ত।
কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়ায় থাকার পর উ চিন ওয়েন 'জৈব বাস্তুবিদ্যার' স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তিনি মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ার জৈব খাদ্য উত্পাদনের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেখা যায়। তার জন্মস্থান চিয়াংসি প্রদেশে ফিরে আসার পর, তিনি কয়েকবার লিতি গ্রাম পরিদর্শন করেন এবং ওই অঞ্চলটিকে তার উত্পদান কাজের ঘাঁটি হিসেবে বাছাই করেন। উ চিন ওয়েন ও তার অংশীদার সেখানে ৩ কোটি ৬০ লাখ ইউয়ান বিনিয়োগ করেন এবং কৃষি শিল্প উন্নয়ন করেন।
লিতি গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ বৈশিষ্ট্যময়। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০০ মিটার উঁচুতে এবং প্রচুর সূর্যালোক পায়। এজন্য জমিটি প্রাকৃতিক কৃষির চক্রের উপযুক্ত স্থান। ২০১৭ সাল ছিল লিতি গ্রামের দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। স্থানীয় সরকার বিনিয়োগ খাতে বেশ গুরুত্ব দেয়। গ্রামের সিপিসি সম্পাদক ছেং ইউং চিন বলেন, আমাদের জেলার সিপিসি সম্পাদকের উদ্যোগে কৃষি ও জলসেচ বিভাগের বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করেছেন। উ চিন ওয়েন সিছেংয়ে ধান চাষের প্রস্তাব দেন এবং সরকার তাকে সহযোগিতা করার জন্য গ্রামে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়।
সিছেং চালের ইতিহাসও বেশ দীর্ঘ। চীনের ছিং রাজবংশ আমলে রাজপরিবারে চাল সরবরাহ করা হতো সেখান থেকে। উ চিন ওয়েন সিছেংয়ে চাল উত্পাদনের সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে তারা ৩০০ মু জমিতে ধান চাষ করতেন। প্রতি মুতে ৩৫০-৪০০ কেজি চাল পাওয়া যায় এবং প্রতি ৫০ কেজি চালের মধ্যে ১৫ কেজি গুণগত মানের সিছেং চাল উত্পাদন করা হয়। এ চাল সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় ঊত্তীর্ণ হবার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানির অনুমতি পায়। এখন এ চাল প্রতি কেজি ৫২০ ইউয়ান দামে বেইজিংয়েও বিক্রি করা হয়।
অন্যদিকে পতিত জমি ভাড়া নিয়ে ঘাস, ধান ও ফল চাষ করা হয়। পাশাপাশি ১০ হাজার মুরগী ও হাঁস রয়েছে খামারে। তাতে এখানে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য ইকোসিস্টেম তৈরি হয়েছে। উ চিন ওয়েন বলেন, হাঁস যদি ক্ষেতের পোকা খায়, তাহলে ধান ভালোভাবে বড় হতে পারে।
উ চিন ওয়েনের কৃষি খামারে ৩০টি দরিদ্র পরিবারের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং তাদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৫ হাজার ইউয়ানেরও বেশি। গ্রামের বাসিন্দা লুও হুয়া চিনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। তার পরিবার সদস্য বেশি বলে দীর্ঘ সময়েও দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারেন নি। তিনি এখন এখানে কাজ করেন এবং তার মাসিক আয় ৪০০০ ইউয়ান। এভাবে তার পরিবার দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে কাজ করলে পরিবারে ভালোভাবে সমর্থন দিতে পারি। তাই তিনি অবহ্যাতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উ চিন ওয়েন জানান, কাছাকাছি ৩০০টির বেশি দরিদ্র পরিবার এখানে কাজ করতে পারে এবং তাদের আয়ও বাড়ছে। প্রতি বছর তারা অতিরিক্ত ১৫ হাজার ইউয়ান আয় করতে পারে। ভবিষ্যতে জমিতে চাষ, জৈব কৃষি ও পর্যটন পার্কসহ বিভিন্ন বিষয় উন্নত হবে। 'জমি+সমবায়+কৃষক' এ পদ্ধতিতে মানুষের দারিদ্র্যমুক্তি ও সচ্ছল জীবন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
(শিশির/তৌহিদ/মুক্তা)