চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির গতকাল (বুধবার) বেইজিংয়ে প্রকাশিত সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী, ২১ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত চীনের ১২টি প্রদেশ ও অঞ্চলে ৪৪০ জন নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন মারা গেছেন। বর্তমানে, রোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে—এমন ১৩৯৪ জনকে চিকিত্সা-পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এই ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির উপ-পরিচালক লি বিন বুধবার অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, সম্প্রতি নিশ্চিতভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি উন্নয়নের এটি স্বাভাবিক ফল। তিনি বলেন, 'এ রোগ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়ছে। পাশাপাশি রোগনির্ণয়-পদ্ধতিও উন্নত হয়েছে। তাই রোগীদের সংখ্যাও বাড়ছে।" বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রোগ উ হান শহরে প্রথম দেখা দেয় এবং মানুষ থেকে মানুষে এটি সংক্রমিত হতে পারে। এই ভাইরাস মূলত শ্বাসনালীর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরার আশঙ্কাও আছে। এখন চীনের বসন্ত উত্সবের সময়। কোটি কোটি মানুষ এসময় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবেন। যাতায়াতের এই সময়ে ভাইরাসও ছড়িয়ে পড়তে পারে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়।
চীনা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির উদ্যগে চালু হয়েছে যৌথ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মপ্রণালী। বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে লি বিন বলেন,
"যেখানে রোগী পাওয়া যাবে, সেখানে তার চিকিৎসার পাশাপাশি সম্ভাব্য মহামারী ঠেকানোর ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব রোগী চিহ্নিত করা, রোগীকে আলাদা রাখা ও রোগীর সর্বোচ্চ ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। যারা রোগীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছেন, তাদেরকেও পর্যবেক্ষণ করা হবে। যেখানে কোনো রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি, সেখানেও সম্ভাব্য জরুরি অবস্থা মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হবে। তা ছাড়া, চিকিত্সক ও গণস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রশিক্ষণও জোরদার করা হবে।"
উ হান শহরের স্বাস্থ্য কমিটির সূত্র থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কোনো কোনো চিকিত্সক ও নার্স নতুন ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে চীনা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির মেডিকেল প্রশাসন বিভাগের উপ-প্রধান চিয়াও ইয়া হুই বলেন, "আরও কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোগীদের চিকিত্সা দেওয়ার পাশাপাশি চিকিত্সকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। চিকিত্সকদের আক্রান্ত হবার খবর শুনে আমরা ব্যথিত। এটা প্রমাণ করে যে, এ ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। এ থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর দুর্বলতাও প্রমাণিত হয়। এর মোকাবিলায় আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। চিকিত্সকদেরকে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং দেশব্যাপী সকল মেডিকেল স্টাফদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।"
নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস দেখা দেওয়ার পরপরই চীনা সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চল এবং হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ানকে অবহিত করে। পাশাপাশি সম্ভাব্য মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য সহযোগিতা ও যোগাযোগ করে। এর প্রসঙ্গে লি বিন বলেন,
"আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছি এবং সংক্রমণের তথ্য ও সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত রাখছি। থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখা হচ্ছে। চীনা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির আমন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও হংকং, ম্যাকাও এবং তাইওয়ানের বিশেষজ্ঞরা উ হান শহরে আসবেন এবং স্থানীয় চিকিত্সকদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন।"
আগামী পর্যায়ের প্রতিরোধকাজ সম্পর্কে লি বিন বলেন, নানা পর্যায়ের সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগগুলো উ হানকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। পাশাপাশি, সংক্রমণ মোকাবিলার অগ্রগতি ও তথ্য যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে। (শিশির/আলিম/আকাশ)