চীনে মহামারী চলাকালে দারিদ্র্যবিমোচন
  2020-03-25 16:26:14  cri

চলতি বছর তথা ২০২০ সালে চীনে সার্বিকভাবে গড়ে তোলা হবে সচ্ছল সমাজ এবং দেশ হবে সম্পূর্ণ দারিদ্রমুক্ত। এ বছর দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমের শেষ বছর এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। অনেক কঠিন পথ এ বছর অতিক্রম করতে হবে। এরই মধ্যে হঠাৎ দেখা দিয়েছে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব। ফলে দারিদ্র্যবিমোচনের কাজটি কঠিনতর হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী কী কী নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে? বর্তমানে দারিদ্র্যবিমোচন কাজ কেমন চলছে? কীভাবে এ দুটি যুদ্ধে জয় একসাথে লাভ করা যাবে? আজকের 'পুবের জানালা' আসরে আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।

১০ মার্চ, চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের যৌথ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে, জাতীয় পরিষদের দারিদ্র্যবিমোচন বিভাগের প্রধান সু কুও সিয়া জানান, মহামারী ব্যক্তি ও পণ্যের যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করে বলে দরিদ্র পরিবারগুলোর আয় আরও কমে যায়।

৫ মার্চ পর্যন্ত, চীনের দরিদ্র পরিবারগুলোর ১ কোটি ৪২ লাখ সদস্য নিজ নিজ এলাকার বাইরে কাজ করতে যায়, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কম। এসব কর্মীর মধ্যে অর্ধেক গ্রামীণ-কর্মী নিজেদের কর্মস্থলে ফিরতে পারেনি। অন্যদিকে, মহামারীর কারণে কৃষিপণ্য বিক্রিতে সমস্যা হয়। বসন্ত উত্সব ব্যস্ত সময়। তবে চলতি বছরের বসন্ত উত্সবের সময়েই মহামারী শুরু হয়। তাই তখন থেকে কৃষিপণ্যের পরিবহন ও বিক্রিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। দরিদ্র পরিবারের আয়ের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া, দরিদ্র মানুষ স্থানান্তর প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণকাজও বন্ধ হয়ে যায়। এখন মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ প্রকল্প সময়মতো চালু হতে পেরেছে।

চীনা রেন মিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দারিদ্র্যবিমোচন গবেষণালয়ের প্রধান ওয়াং শান কুই মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে, লক্ষ্যযুক্ত বা টার্গেট-ওরিয়েন্টেড ব্যবস্থা নেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি দারিদ্র্যবিমোচন কাজ সুষ্ঠুভাবে না-চলে, তবে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তবায়িত হবে না।

মহামারীর কারণে, মানুষ বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারে না, আয়ও কমেছে। তাহলে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা দরকার। অন্যদিকে, যেসব অঞ্চল ইতোমধ্যেই দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে, সেসব অঞ্চলও মহামারীর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার। এমন কোনো কোনো স্থানে শিল্পের ভিত্তি দুর্বল হয়ে গেছে বা কর্মসংস্থান পরিস্থিতি হয়ে পড়েছে অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় ইতোমধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত ব্যক্তিরা পুনরায় দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনে ৯ কোটি দারিদ্র্যমুক্ত মানুষের মধ্যে একটা অংশ মহামারীর কারণে আবারও দারিদ্র্যের কবলে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে আছে। প্রতিটি গ্রামীণ কর্মী একটি পরিবারের দায়িত্ব বহন করে। এসব কর্মী বেকার হলে পরিবারগুলোও দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারবে । চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৯ সালে প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, চীনে গ্রামীণ কর্মীর সংখ্যা ২৯ কোটি। তারা শিল্প ও শ্রমের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশে পরিণত হয়েছে এবং চীনের অর্থনীতির উন্নয়নে বড় অবদান রাখছেন। রাষ্ট্রীয় পরিষদের দারিদ্র্যবিমোচন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে চীনের দরিদ্র পরিবারগুলোর ২ কোটি ৭২ লাখ মানুষ নিজের এলাকা ছেড়ে বাইরে কাজ করতে যায়। এসব পরিবারের আয়ের তিন ভাগের দু'ভাগ গ্রামীণ কর্মীর আয় থেকে আসে। তারা যত দ্রুত নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারবে, সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠনের জন্য তা তত গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে, বিভিন্ন স্থানীয় সরকার গ্রামীণ কর্মীদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ায় ব্যাপারে সাহায্য দিচ্ছে। এখন বড় সমস্যা হল, কোন কোন ছোট বা মাঝারি কারখানা সময়মতো উত্পাদন পুনরায় শুরু করতে পারছে না। পরিষেবা শিল্প সবচেয়ে বেশি গ্রামীণ কর্মী নিয়োগ করে থাকে। রেস্টুরেন্ট ও গৃহস্থালিসহ নানা শিল্প মহামারীর শিকার। দ্বিতীয়ত, এখন গ্রামীণ বাসিন্দারা গ্রামের বাইরে যেতে পারছে এবং পরিবহন-ব্যবস্থাও ধাপে ধাপে পুনরায় চালু হচ্ছে। তবে তারা যদি শহরে বিশেষ করে অন্য প্রদেশের শহরে যেতে চায়, তবে নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে। তা ছাড়া, চীনের বড় শহরে মহামারীর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোর। গ্রামীণ কর্মীরা সহজে সেসব শহরে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে পারেন না।

যারা এখন বাইরে যেতে পারেন না, তাদেরকে অস্থায়ী সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন প্রদেশ। যেমন, সিছুয়ান প্রদেশে, যেখানে বড় প্রকল্প বা কোম্পানি আছে, সেখানে বেশি কর্মী নিয়োগ করা হয়। হ্য নান ও কুয়াং সি প্রদেশ গ্রামীণ কর্মীদেরকে বিশেষ ভাতা দেয় এবং তাদেরকে নিজেদের ব্যবসা দাঁড় করাতে উত্সাহ দেয়। ইউন নান প্রদেশ ১০ লাখের বেশি অনলাইন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। চি লিন প্রদেশ ৫০০০টি অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং মহামারী চলাকালে গ্রামীণ কর্মীদের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করে। ফু চিয়ান প্রদেশের সিয়া মেন শহর এবং কান সু প্রদেশের লিন সিয়া স্বায়ত্তশাসিত জেলা দারিদ্র্যবিমোচন কারখানা খুলেছে। মাস্ক ও প্রতিরোধমূলক পোষাক উত্পাদনে আরও কর্মী নিয়োগ করছে।

পাশাপাশি, যারা ইতোমধ্যেই দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন, তাদের ওপরও গুরুত্ব দেয়া উচ্তি। মহামারীর কারণে যদি কেউ আবার দরিদ্র হয়, তবে তাদের মৌলিক চাহিদা মিটানোর ব্যবস্থা থাকাও জরুরি। দারিদ্র্যবিমোচন দীর্ঘমেয়াদি একটি যুদ্ধ। দরিদ্র মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা, চলমান যুদ্ধে জয়লাভের চাপাকাঠি।

মাহামারীর শিকার হলেও নতুন সুযোগ খুঁজতে হবে। ই-কমার্স এতে বড় ভূমিকা পালন করে। বিগ ডেটার মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলোকে সহায়তা করা হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের জন্য চালু হচ্ছে অনলাইন কৃষিপ্রশিক্ষণ।

আশা করা যায়, মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের পরিস্থিতি ভাল হয়ে ওঠার পাশাপাশি উত্পাদন ও জীবনের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার হবে। আরও বেশি কর্মী নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবেন।(শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040