সংবাদ পর্যালোচনা: দেশে দেশে ভাইরাস সংক্রমণ ও চীনের পদক্ষেপ
  2020-03-21 19:01:59  cri

পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনের ভেতর নতুন করে রোগাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এটি একদিকে চীনসহ সারা বিশ্বের জন্য ভালো খবর। তবে, অন্যদিকে চীনের বাইরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এমনকি চীনে আসা বিদেশিদের মধ্যে এখন এ রোগ দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদ্যোগ নিয়েছে চীন। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে ভাইরাস মোকাবিলার অভিজ্ঞতা বিনিময় করছে চীন।

প্রিয় শ্রোতা, বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

চীনে দীর্ঘ তিন মাসের আত্মরক্ষামূলক জীবনযাত্রা, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও সারা বিশ্বে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া এবং আক্রান্ত দেশগুলোতে চীনের সহযোগিতা ইত্যাদি দেখে ক্রমাগত একটি বিষয় বোঝা যায়। তা হলো, এ বিশ্বে কেউ একা নিরাপদ থাকতে পারে না। বিশ্বায়নই (Globalization) সবার ভবিষ্যৎ। বিশ্বায়নের এ যুগে সময়ের দাবি হলো একসঙ্গে চলা। আর এমন চলার পথে, সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ যাচাই করাটাই হলো আত্মরক্ষার একমাত্র পথ।

ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চীন যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা পর্যালোচনা সময়ের দাবি। যাতে ভবিষ্যতে মানুষ যে যার অবস্থানে থেকে সাধ্যমত তা বাস্তবায়ন করতে পারে।

ভয়াবহ সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথম কার্যকর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি হলো, সংক্রমণের স্থানটিকে অবরুদ্ধ বা লকড-ডাউন করা। যাতে সেখান থেকে ভাইরাস অন্যত্র না ছড়ায় এবং কেউ সেখানে গিয়ে প্রাণঘাতী ভাইরাসের বাহকে পরিণত না হয়!

ঠিক যেমন ২৩ জানুয়ারি উহান শহরকে 'লকড-ডাউন' করা হয়। ওই দিন কর্তৃপক্ষ এক কোটি দশ লাখ মানুষের শহরের সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। সবাইকে যার যার ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়। তবে, একান্ত প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই বা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাবার অনুমতি ছিল। শহরের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস ও কারখানা একেবারে বন্ধ করা হয়। শহরের রাস্তায় ব্যক্তিগত যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়।

এরপর লকড-ডাউন অবস্থা আরও প্রসারিত হয়ে জনসাধারণের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে ফেলে। বিভিন্ন স্তরে কঠোরভাবে এ নিয়ম বাস্তবায়ন করা হয়। এরপর স্বেচ্ছাসেবকরা ঘরে ঘরে গিয়ে কোটি কোটি মানুষের শরীরের তাপমাত্রা যাচাই করা শুরু করেন। এভাবে যাদেরকে পাওয়া গেলো তাদেরকে পৃথক করে চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যাওয়া হলো। সেই সঙ্গে, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদেরও দীর্ঘমেয়াদী নজরদারির আওতায় আনা হলো এবং চিকিৎসা দেওয়া হলো।

দীর্ঘ তিন মাসে চীনের ভেতর কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ ও বিভিন্ন তথ্যে দেখা যাচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকায় ভাইরাসের সংক্রমণ ইতোমধ্যে চীনের চেয়েও খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। যেমন, গত দুই সপ্তাহে ইউরোপের অবস্থা আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে শোচনীয় হয়ে উঠেছে। যদিও অনেক তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইউরোপের পরিস্থিতিকে অনুসরণ করছে। ১৯ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১৩৩৫০, ফ্রান্সে ১০৯৯৫, ও ইতালিতে ৪১০৩৫ জন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে।

এদিকে, এক ফোনালাপে চীন প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে সাফল্য পাওয়ায় ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং তার দেশকে দেওয়া চীনের চিকিৎসা-সহায়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মহামারী এখন ফ্রান্সে ছড়িয়ে পড়ছে। চীনের অভিজ্ঞতা থেকে ফ্রান্স শিখতে চায়। ফ্রান্স শক্তিশালী ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত মহামারীকে পরাজিত করার চেষ্টা করছে।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ইতালিতে পাঠানো চীনের সহায়তা চিকিৎসকদলের কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে সেদেশের গণমাধ্যম। নিয়মিত তাদের কার্যক্রম নিয়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এবার চীনে কোভিড-১৯ রোগীদেরকে চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে চীনা ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ওষুধ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এসব আশাব্যাঞ্জক খবর সবসময় প্রকাশিত হচ্ছে।

চীনের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা উহানে ভিডিও-সম্মেলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040