বিদ্যাবার্তা ০৩৩০
  2020-03-30 16:30:36  cri

চলতি বছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে আমরা এ সপ্তাহের অনুষ্ঠান থেকে বিশেষ পর্ব যুক্ত করবো। সেটি বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়া চীন' উপস্থাপন। তা ছাড়া, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মার্কিন ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া চিঠি এবং সম্প্রতি চীনে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধক গল্পও থাকছে।

গত সপ্তাহে আমরা 'আমার দেখা নয়াচীনের' কিছু অধ্যায় পড়ে শুনিয়েছি। আজকের অনুষ্ঠানে তা অব্যাহতভাবে পরিবেশন করবো।

মার্কিন

ক্যাসকেড প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চিঠি লিখেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং

সম্প্রতি মার্কিন ইউটা অঙ্গরাজ্যের ওরেম জেলার ক্যাসকেড প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের চিঠি পেয়েছেন, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বড় খবর। স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী সারা চিঠির খবর শুনে মিষ্টি হেসে বলে, 'দাদা সি এখানে সফরে আসলে তাঁকে ডোনাট খাওয়াবো।' সারা নিজের হাতে তৈরি শুভেচ্ছাকার্ডে দাদা সি'কে জানিয়েছে যে, সে ডোনাট খেতে পছন্দ করে।

আসলে চীনের বসন্ত উত্সব উপলক্ষ্যে স্কুলের ৫০ জন ছাত্রছাত্রী চীনা ভাষায় চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে নববর্ষের কার্ড পাঠায়। এতে তারা কিভাবে চীনা ভাষা শিখছে, নিজেদের শখ কী, চীনা সংস্কৃতির প্রতি তাদের আগ্রহ ইত্যাদি উল্লেখ করে। সুযোগ পেলে চীন সফর করতে যাবে বলেও তারা জানায়। পাশাপাশি তারা প্রেসিডেন্ট সিকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়।

পরে প্রেসিডেন্ট সি ব্যস্ততার মধ্যে তাদের চিঠির উত্তর দেন। চিঠিতে ছাত্রছাত্রীদের চীনা সংস্কৃতি ও ভাষা শেখায় উত্সাহ দেন তিনি এবং দু'দেশের জনগণের মৈত্রী গভীরতর করার ক্ষেত্রে অবদান রাখার আহ্বান জানান।

ছাত্রছাত্রীরা প্রেসিডেন্ট সি'র চিঠি পেয়ে অনেক খুশী। শিক্ষার্থী ক্ল্যায়ার বলে, 'আমি দাদা সিকে জিজ্ঞেস করেছি, চীন কি অনেক বড় দেশ? তিনি আমাকে বললেন যে, চীন আমার দেশের মতো বড়।' ক্লুকলিন বলে, 'আমাদের চীনা ভাষায় লেখা সুন্দর চিঠির প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট সি। তার এ কথা শুনে আমার খুবই ভালো লাগে।'

ইউটা অঙ্গরাজ্যর অনেক ভালো স্কি রিসোর্ট রয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা প্রেসিডেন্ট সিকে এখানে এসে স্কি করার আমন্ত্রণ জানায়। এ সম্পর্কে তাদের চীনা শিক্ষক চেং ইয়া মিন বলেন, ৩ বছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতা করছেন তিনি। ২০১৯ সাল থেকে তিনি এ স্কুলে চীনা ভাষা শেখাচ্ছেন।

মার্কিন ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ জীবনযাপনে নিয়মিতভাবে চীনা ভাষা বলা ও প্রয়োগ করতে উত্সাহ দেন তিনি। চীনে কোভিড-১৯ মহামারী দেখা দেওয়ার পর অনেক ছাত্রছাত্রী চীনে মাস্ক পাঠাতে চেয়েছে। পরে শিক্ষক চেং চীনা ভাষায় 'তোমার হাসি খুবই মিষ্টি ও সুন্দর' গানটি নতুন করে লেখেন। ছাত্রছাত্রীরা এ গান গাওয়ার মাধ্যমে ভাইরাসের বিরুদ্ধে উহানের বাসিন্দাদের দ্রুত জয় কামনা করে। তাদের গাওয়া গান ওয়বসাইটে অনেক প্রচলিত হয়ে উঠেছে। গানের কথা এমন: 'মাস্ক তোমার চেহারা লুকিয়ে রাখে; তবে মনের শক্তি লুকিয়ে রাখতে সক্ষম নয়। তোমার হাসি খুবই মিষ্টি, যেন বসন্তকালের ফুল। সকল ভাইরাস ও দুঃখ সবই চলে যাবে।'

স্কুলের প্রেসিডেন্ট লিন্ডা জনসেন বলেন, প্রেসিডেন্ট সি'র চিঠি তাঁদের জন্য গর্বের ব্যাপার। চীন এক বিশাল দেশ। মহামারী ঠেকাতে অবশ্যই ব্যস্ত প্রেসিডেন্ট সি। তবে এ সময়ের মধ্যে তিনি ছাত্রছাত্রীদের চিঠির উত্তর দিয়েছেন, যা বড় ব্যাপার।

কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে নিয়োজিত চিকিত্সকদের জন্য বিনামূল্যে কফি

চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচৌ শহরের একটি কফি দোকানে তিন জন কর্মী কফি বানাতে ব্যস্ত। তাইওয়ান প্রদেশের যুবক কুও ই ফান দু'জন সহকর্মীর সাথে কম সময়ের মধ্যে ৫০ কাপ কফি তৈরি করেন এবং হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ৩০ মিনিট পর কফি হাসপাতালে পৌঁছে যায়।

কুও ও তার সহকর্মীরা ফুচৌ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে যাওয়া-আসা করেন এবং সেখানে চিকিত্সকদের জন্য কফি সরবরাহ করেন। এ কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমরা মাস্ক দিতে পারি না, তবে কফি দিতে পারি।'

২০১৪ সালে কুও চীনের তাইওয়ান প্রদেশের তাইচুং শহরে তাঁর প্রথম কফি দোকান চালু করেন এবং পরে ফুচৌ বেড়াতে এসে শহরটি বেশ পছন্দ করেন তিনি। ২০১৭ সালে তিনি ফুচৌতে কফি দোকান চালু করেন। যদিও শূন্য থেকে ব্যবসা চালু করেন, তবে কফি দোকান গড়ে তুলতে অনেক অপরিচিত লোকের সাহায্য পেয়েছেন তিনি।

চলতি বছরের বসন্ত উত্সবে করোনাভাইরাস চীনে ছড়িয়ে পড়ে। বসন্ত উত্সবের দ্বিতীয় দিনে তিনি তাইওয়ান প্রদেশ থেকে ফুচৌতে ফিরে আসেন এবং প্রতিদিন ভাইরাসের খবর মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকেন। অনেকে হুপেই প্রদেশের মহামারী ঠেকাতে সহায়তা দিচ্ছেন দেখে, তিনি ভাবেন যে নিজেও কিছু কাজ করবেন। চিকিত্সকদের কাজ কষ্টের; বিশ্রামের সময় কফি হতে পারে তাদের জন্য আরামদায়ক। এই ভেবে তিনি সহকর্মীদের নিয়ে ফুচৌ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে বিনামূল্যে কফি পাঠাতে শুরু করেন।

'চিকিত্সকরা আমাদের কফি পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানান। তখন আমাদের অনেক ভালো লাগে। আমাদের ক্ষুদ্র অবদান জমে বড় অবদান হতে পারে।' জনাব কুও গর্বিতভাবে এমন কথা বলেন।

ফুচৌ ফুসফুস হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের বিশেষ হাসপাতাল। ওখানে কফি পাঠানোর সময় জনাব কুও'র বন্ধু অনেক উদ্বিগ্ন থাকেন। এ সম্পর্কে কুও বলেন, 'আমার বন্ধু আমাকে না যেতে বলে। কারণ ওখানে ভাইরাস থাকে। আসলে আমাদের একটু ভয় লাগে। তবে চিকিত্সকদের একটু আরাম দেওয়া আমাদের জন্য তাত্পর্যপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, ফুচৌ তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হবে এবং আমাদের যৌথ উদ্যোগে অবশ্যই এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জয় আসবে।'

(সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040