বিদ্যাবার্তা ০৫১৮
  2020-05-18 14:39:48  cri

 


চলতি বছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে আমরা প্রতি সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' উপস্থাপন করছি। আজকের আসরের শুরুতেই থাকবে বঙ্গবন্ধুর গ্রন্থ থেকে পাঠ। তা ছাড়া, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের শানসি প্রদেশের পরিদর্শন সম্পর্কে দারিদ্র্যবিমোচনের কিছু চিন্তাধারা ও পদক্ষেপ তুলে ধরবো।

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের শানসি পরিদর্শন

চলতি বছর চীনের দারিদ্র্যমুক্তি বাস্তবায়ন ও সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ ও চূড়ান্ত বর্ষ। এ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি চীনের শানসি প্রদেশ পরিদর্শন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। স্থানীয় গ্রাম, কৃষক পরিবার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করার মাধ্যমে সংস্কারের ফলাফল পরীক্ষা করেন তিনি। এর সাথে সাথে স্থানীয় মহামারী প্রতিরোধক কাজ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কার্যক্রম এবং দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্যও পর্যালোচনা করেন সি।

৩ বছর পর আরেকবার শানসি পরিদর্শন করলেন তিনি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'শানসি প্রদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ওপর আমার মনোযোগ সবসময়ের।'

কৃষিক্ষেতে ডে লিলি চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে এখানকার মানুষ। এবার সি'র পরিদর্শনের সময় এ ফুল প্রায় ফুটেছে; সোনালী রঙয়ের ফুল বেশ সুন্দর। সূর্যালোক কৃষিক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছে, তাথুং শহরের ডে লিলির কৃষিক্ষেত সি চিন পিংয়র মুখে হাসি ফোটে।

তখন তিনি জানান, স্থানীয় গ্রামবাসী দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার পর কিভাবে এ সাফল্য সুসংবদ্ধ করতে পারবেন এবং অব্যাহতভাবে কৃষি-আয় বাড়িয়ে যাবেন—এ বিষয়টি নিয়ে অনেক চিন্তা করেন তিনি। তাই গাড়ি থেকে নেমে তিনি সরাসরি কৃষিক্ষেত এলাকায় প্রবেশ করেন।

ডে লিলির আরেকটি নাম হুয়াংহুয়া। এটি খাওয়া যায় এবং উদ্ভিজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাথুং শহরে হুয়াহুয়া চাষের ইতিহাস ৬০০ বছরেরও বেশি। স্থানীয় কৃষকরা ১৭ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে এই ফুল চাষ করেন এবং বার্ষিক এ থেকে আয় হয় ৯০ কোটি ইউয়ান। এর মাধ্যমে স্থানীয় ১৫ হাজারেরও বেশি কৃষিপরিবার দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। এই হলুদ ফুল যেন সোনার মতো দামী।

 

স্থানীয় কৃষকরা কৃষিক্ষেতে কাজ করছিলেন। প্রেসিডেন্ট সি-কে আসতে দেখে তারা দৌঁড়ে তার কাছে আসেন এবং তাকে শুভেচ্ছা জানান।

প্রেসিডেন্ট সি সবার সাথে কথা বলেন। গ্রামবাসীদের জীবনযাপনের অবস্থা, বার্ষিক আয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন।

তারা উত্তরে বলেন, প্রতিদিন কারখানায় কাজ করে ১৫০ ইউয়ান বেতন পান তারা। তা ছাড়া ডে লিলি বিক্রি করেও কিছু আয় হয়। দরিদ্র পরিবারপ্রতি ১০ সহস্রাধিক ইউয়ান আয় হয়।

কৃষকরা আরও বলেন, অতীতে ডে লিলির ব্যবসা নিয়ে তাদের মনে সন্দেহ ছিল। তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে পরে কারখানা নির্মিত হয়েছে। সেটি প্রক্রিয়াকরণ, বিক্রিসহ বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। তাদের কোনো চিন্তা নেই। এখন তারা আরও বেশি জমিতে এই ফুল চাষ করতে সাহস পাচ্ছেন।

সবার কথা শুনে সি হাসিমুখে বলেন, 'গত মাসে আমি শাআনসি প্রদেশের চিনমি গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে স্থানীয় কালো ছত্রাক চাষ করে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। আপনাদের এই ডে লিলি ফুলের চাষ করে বড় শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এটা হতে পারে জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক।'

স্থানীয় গ্রামের কর্মকর্তাদের এ শিল্পের উন্নয়নে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং স্থানীয় কৃষকদের আরও সুন্দর জীবন বাস্তবায়নে চেষ্টা করার নির্দেশনাও দেন প্রেসিডেন্ট সি।

সুখী জীবন ভবিষ্যতে আরও সুখের হবে

ডে লিলি ফুলের ক্ষেতের কাছে একটি ফাংছেং গ্রাম রয়েছে। সেটি নতুন নির্মিত গ্রাম। এখানে স্থানান্তরের মাধ্যমে অনেক পরিবার দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট সি এ নতুন গ্রাম পরিদর্শন করেন। এ গ্রামের সিপিসি'র সম্পাদক লিউ শি কুই বলেন, ২০১৮ সাল থেকে পুরনো তাফাংছেং গ্রাম ও সিজুই গ্রামের ২১০টি কৃষক পরিবার দূরবর্তী মাটির গুহা থেকে ধীরে ধীরে এ নতুন গ্রামে স্থানান্তরিত হয়। তখন থেকে গ্রামবাসীদের জীবনমান ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে।

 

কৃষক বাই কাও শানের বাড়িতে আসেন সি। কৃষকের বাড়ির প্রাঙ্গনের শাক-সবজি প্রেসিডেন্ট সি-র দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটা শসা, এটা টমেটো, ওখানে দুটি আপেল গাছ। শাকসবজি ও ফল দেখে সি হাসিমুখে বলেন, এ ফল ও সবজি পরিবারের জন্য যথেষ্ট।

লিভিং রুম, রান্না ঘর, বেডরুম ও টয়লেটসহ বাড়ির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন সি। সাদা দেওয়াল ও পরিস্কার মাটি এবং বিভিন্ন আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। ফেলে আসা মাটির গুহার তুলনায় ব্যাপক পার্থক্য!

কৃষক বাই প্রেসিডেন্ট সি-কে ৪০ বছরের আগের একটি ছবি দেখান। ছবিতে মাটির গুহার দৃশ্য। তখন সি জিজ্ঞেস করেন, 'এ নতুন বাড়িতে স্থানান্তরে কতো খরচ হয়েছে?' বাই উত্তরে বলেন, 'গত বছর সরকারের অর্থ সহায়তায় মাত্র ১০ হাজার ইউয়ান দিয়ে নতুন বাড়ি পেয়েছি।'

নতুন গ্রামে এসে এখন কি ব্যবসা বা কাজ করেন? আয় কেমন? সি আবার প্রশ্ন করেন।

তখন বাইয়ের ছেলে উত্তর দিয়ে বলেন, নতুন গ্রামে আসার পর তিনি কারিগরি স্কুলে প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হন। এখন তিনি বৈদ্যুতিক ওয়েল্ডারের কাজ করেন এবং বার্ষিক আয় ৪০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি।

এখন বিয়ের কোনো সমস্যা নেই, তাইনা? সি ঠাট্টাচ্ছলে বলেন।

কৃষক বাই উত্তর দেন, 'হ্যাঁ, বর্তমানে আমাদের জীবনমান অনেক উন্নত হয়েছে এবং আমার ছেলে গত বছরই বিয়ে করেছে। চলতি বছরে আমি দাদা হবো। নতুন বাড়ি নির্মাণ, বিয়ে করা কৃষক পরিবারের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সহায়তায় সবই পূরণ হয়েছে। সিপিসির প্রতি কৃতজ্ঞতা।'

সি বলেন, 'আমাদের পার্টি সবসময় জনগণের সুখী জীবন বাস্তবায়নে চেষ্টা করে থাকে। তা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কী?'

বাই উত্তর দেন, 'আশা করি আমাদের জীবনমান আরও ভালো হবে।'

সি তার কথা শুনে বলেন, 'তা তো অবশ্যই! আপনাদের সুখী জীবন আরও সুখের হবে।'

শানসি প্রদেশের দূরবর্তী এলাকা থেকে উন্নত এলাকায় স্থানান্তর পরিকল্পনার কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে প্রদেশের ৫৮টি দরিদ্র জেলা দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। তবে আরও ২০ হাজারেরও বেশি দরিদ্র মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে গেছে। তা ছাড়া, আরো ১.২ লাখ মানুষ আবার দারিদ্র্যের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এমন দরিদ্র্য লোকদের জীবনমান উন্নত করা এবং শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন বাস্তবায়ন করা হবে চলতি বছর শানসি প্রদেশের স্থানয়ী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ বিষয়ে যথাযথ পরামর্শ ও নির্দেশনা দেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040