বিদ্যাবার্তা ০৫২৫
  2020-05-25 12:39:19  cri

 


চলতি বছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে আমরা প্রতি সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' উপস্থাপন করছি। আজকের আসরের শুরুতেই থাকবে বঙ্গবন্ধুর গ্রন্থ থেকে পাঠ। তা ছাড়া, ২২ মে থেকে ২০২০ সালের দুই অধিবেশন শুরু হয়েছে,এনপিসি ও সিপিপিসিসি'র এই দুটি অধিবেশন চীনা মানুষের জীবনযাপনের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।তবে চলতি বছরের এ অধিবেশন অন্য বছরের তুলনায় আড়াই মাস পিছিয়ে গেছে।আজকের অনুষ্ঠানে এবার দুই অধিবেশনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে তথ্য তুলে ধরবো।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' থেকে পড়ে শোনাচ্ছি। ....

'দুই অধিবেশন'

কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে অব্যাহত প্রচেষ্টা

কোভিড-১৯ মহামারী চীনে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার তার প্রতিরোধক কাজের ওপর অতি গুরুত্ব দেয়। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে চীনা জনগণের কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে মহামারী কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণও করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন দেশে মহামারী পরিস্থিতি এখনও ভয়ঙ্কর। সেসব দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের গবেষণা অনুসারে, কোভিড-১৯ ভাইরাস খুব সম্ভবত দীর্ঘকালের মতো টিকে থাকবে এবং সাময়িকভাবে কিছু কিছু এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তাই এ ভাইরাস ঠেকাতে দীর্ঘকালীন প্রস্তুতি নিতে হবে।

চীনের 'দুই অধিবেশন' সাধারণত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বেইজিংয়ে আয়োজিত হয়। তবে এ বছর কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আড়াই মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। এবারের দুই অধিবেশনের একটি আলোচ্য বিষয় হচ্ছে: চীনে মহামারীপরবর্তি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণকরণ এবং মহামারী প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় চীনের অংশগ্রহণ।

দুই অধিবেশনের আগে সিপিপিসিসি'র সদস্য, হুয়াচুং বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিয়েহ্য হাসপাতালের প্রধান ডক্টর হু ইয়ু বলেন, বর্তমানে মহামারী প্রতিরোধে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বিশ্ব। তাই চীনের বিভিন্ন প্রদেশে মহামারীর পুনরাবৃত্তি ও বিদেশ থেকে আক্রান্তদের চীনে প্রবেশসংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।

এবার মহামারীর সময় চীনের সংশ্লিষ্ট পূর্বাভাস ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং জনস্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা প্রতিফলিত হয়েছে। দুই অধিবেশন চলাকালে সংশ্লিষ্ট দুর্বলতা পূরণ করা এবং মহামারীর পূর্বাভাস দক্ষতা ও জনস্বাস্থ্য মোকাবিলা ব্যবস্থা উন্নত করা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

চলতি বছরে চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা কী হবে?

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারীর বিস্তার এখনো চলছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর আঘাতও স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্বের অর্থনীতি উন্নয়নের বহু চ্যালেঞ্জের ও ঝামেলার সম্মুখীন। জটিল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অর্থনীতি স্থিতিশীল করা এবং গণজীবিকা নিশ্চিত করা হবে মূল উদ্দেশ্য। তাই চলতি বছরের কর্মবিবরণীতে জিডিপি'র প্রবৃদ্ধির হার, কর্মসংস্থান, নাগরিকদের আয় এবং পরিবেশ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে। বর্তমানে চীনের অর্থনীতির ওপর চাপ বেশি। বছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপি'র পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যদিও পরিস্থিতি কঠোর, তবে দীর্ঘকাল ধরে চীনের অর্থনীতির সুষ্ঠু উন্নয়নের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।

এ সম্পর্কে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের গবেষণা কেন্দ্রের সামষ্টিক অর্থনীতি গবেষণা বিভাগের গবেষক চাং লি ছুন বলেন, দুই অধিবেশন চলাকালে অভ্যন্তরীণ চাহিদা সম্প্রসারণ করা, স্থিতিশীলতা বজায় রেখে অগ্রগতি অর্জন করা, এবং রপ্তানিকে উত্সাহ দেওয়াসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে অর্থনীতির উন্নয়নে কাজ করা হবে। সরকারি কার্যবিবরণীর ইতিবাচক ও ধারাবাহিক নীতিমালা আশাব্যঞ্জক।

দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যমাত্রা কিভাবে অর্জিত হবে?

২০২০ সাল চীনের দারিদ্র্যমুক্তির চূড়ান্ত বর্ষ। এখন পর্যন্ত দেশের ৫২টি জেলা, ২৭০৭টি গ্রাম ও ৫৫ লাখ ১০ হাজার লোক দারিদ্র্যমুক্ত হয়নি। এদের মধ্যে ১১১৩টি গ্রাম চরম দরিদ্র। সবচেয়ে দরিদ্র লোকদের দারিদ্র্যবিমোচনের চ্যালেঞ্জ অনেক বড়, তাই মহামারীর প্রেক্ষাপটে এসব লোকদের সহায়তা দেওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ।

কম সময়ের মধ্যে বড় চাপের সম্মুখীন হয়ে কিভাবে দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা হবে? এর জন্য সিপিপিসিসি ও এনপিসি'র সদস্যদের পরামর্শ প্রয়োজন। এ সম্পর্কে চীনের দারিদ্র্যবিমোচন গবেষণাগারের মহাপরিচালক ওয়াং সান কুই বলেন, চীনের দারিদ্র্যবিমোচন পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ অনুসারে বাস্তবায়িত হয়। শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্তি হবে কার্যকর পদ্ধতি। এর সাথে সাথে কিভাবে দারিদ্র্যমুক্ত লোকদের জীবনমান নিশ্চিত করা যায় এবং পুনরায় দরিদ্র হওয়া ঠেকানো যায়, সেটাও অতি গুরুত্বপূর্ণ।

কিভাবে সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা যাবে?

২০২০ সাল চীনের ত্রয়োদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা ও সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ বর্ষ। চীনের দুই শতাধিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দুই অধিবেশনের সদস্যরা ব্যাপক পরামর্শ দিয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ ও বড় ঝুঁকি মোকাবিলা করা, নির্দিষ্টভাবে দারিদ্র্যবিমোচন ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে সার্বিক সচ্ছল সমাজের প্রয়োজনীয় চাহিদা এবং গুণগত মান উন্নয়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে গণজীবিকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি। বর্তমানে দূষণ নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধ চলছে। পরিবেশ সংরক্ষণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে চীনের বিভিন্ন এলাকার পানি ও বায়ুর মান ২০১৮ সালের তুলনায় কিছুটা উন্নত হয়।

সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং জনগণের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি নয়, বরং ব্যক্তিগত অধিকার সংরক্ষণ ও সাংস্কৃতিক জীবন উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ও এর অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় একাডেমির অধ্যাপক সিন মিং বলেন, আবাসন, প্রবীণদের পেনশন, শিক্ষা, চিকিত্সাসহ বিভিন্ন বিষয় চীনাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় দুই অধিবেশনের সদস্যদের আলোচনার বিষয়ও বটে।

চতুর্থদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা প্রণয়নে অবশ্যই সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এ পাঁচ বছরের পরিকল্পনায় গভীর সংস্কার, গুণগত মান উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়নের বিষয় যুক্ত করা হবে।

গণজীবিকার উন্নয়ন কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে?

চলতি বছর কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে গণজীবিকার মান প্রত্যেক নাগরিকদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কর্মসংস্থানের চাপও বেশি। চলতি বছর চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের সংখ্যা ৮৭.৪ লাখেরও বেশি হবে, যা ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তবে মহামারীর প্রভাবে অনেক কোম্পানির কর্মী নিয়োগের হার হ্রাস পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে নিম্ন বেতনের লোকদের জীবনমান নিশ্চিত করা যায়, তা চীন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ সম্পর্কে চীনের গণনিরাপত্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যু চিয়ান কুয়াং বলেন, গণজীবিকার বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কর্মসংস্থান পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা কেন্দ্রীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য। ইতোমধ্যেই কর কমানো, ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া, স্নাতকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, চিকিত্সার খরচ কমিয়ে দেওয়া, বীমাব্যবস্থা সম্পূর্ণ করা, এবং শিশুদের বাধ্যতামূলক শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন সদস্যরা।

জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও চীন

মহামারীর কারণে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে; মন্দার হুমকি স্পষ্ট। চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের বিকৃত সমালোচনা, বাণিজ্যের সংরক্ষণবাদসহ নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মোকাবিলা করবে চীন? এ সম্পর্কে সিপিপিসিসি'র সদস্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় একাডেমির অধ্যাপক চাং চান বিন বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে মতভেদ ও পক্ষপাত নির্মূল করা, মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির চিন্তাধারায় সমস্যা মোকাবিলা করা, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা চীনের মূল পদক্ষেপ। যদিও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি জটিল, তবে স্থিতিশীলভাবে মহামারী প্রতিরোধ করার সাথে সাথে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে চীনকে। এতে বিশ্বও উপকৃত হবে।

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040