বিদ্যাবার্তা ০৬২৯
  2020-06-29 16:31:08  cri

 


কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারে সি চিন পিংয়ের উদ্যোগ

জুন মাস ছিল চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের জন্য অতি ব্যস্ত সময়। চীন-আফ্রিকা ঐক্যবদ্ধ মহামারী প্রতিরোধক বিশেষ শীর্ষসম্মেলন আর 'এক অঞ্চল, এক পথ' আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উচ্চপর্যায়ের ভিডিও-সম্মেলন আয়োজিত হয় এ মাসে। দুই সম্মেলনে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার নিয়ে প্রস্তাব পেশ করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধক কাজ বন্ধ হয়নি। চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে এ পর্যন্ত সারা বিশ্ব এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এখন অনেক দেশের মহামারী প্রতিরোধক অবস্থাও শিথিল হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে আক্রান্তদের সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি হয়েছে। বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মহামারী অবস্থাও দিন দিন গুরুতর হচ্ছে। এরই মধ্যে গত ৮ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত চীনা চিকিত্সকদল ঢাকা সফর করেছে এবং স্থানীয় ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের সাথে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে; একাধিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছে। আসলে চীন ও বাংলাদেশের মহামারী প্রতিরোধক সহযোগিতা অনেক আগে শুরু হয়। যখন চীনে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তখন বাংলাদেশ চীনকে অনেক সহায়তা দিয়েছে। এখন চীনের মহামারী প্রায় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে আর বাংলাদেশের অবস্থা গুরুতর হয়েছে। এ কারণে চীনের সহায়তা প্রয়োজন বাংলাদেশের। কোভিড-১৯ ভাইরাস ঠেকাতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে চীনা চিকিত্সকদল বাংলাদেশে সফর করে এবং অনেক কার্যকর ও উপযোগী পরামর্শ দেয়। এ কার্যক্রমের সাথে জুন মাসে দুটি আন্তর্জাতিক শীর্ষসম্মেলনে সি'র ভাষণের বিষয়বস্তুর সাথে অনেক মিল রয়েছে।

চীন ও আফ্রিকার ঐক্যবদ্ধ মহামারী প্রতিরোধক শীর্ষসম্মেলনে সি বলেন, বহুপক্ষবাদ অনুসরণ করে যৌথভাবে জনস্বাস্থ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা অতি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ভৌগোলিক দিক থেকে চীন ও বিভিন্ন আফ্রিকান দেশের মাঝে অনেক দূরত্ব, তবে দীর্ঘকাল ধরে চীনের সাথে আফ্রিকান দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

২০২০ সালের শুরুতে কোভিড-১৯ মহামারী ঘটার পর বাংলাদেশ ও আফ্রিকান বিভিন্ন দেশসহ অনেক দেশ চীনে চিকিত্সাসামগ্রী পাঠায়। যদিও বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক অবস্থা দুর্বল, তবু আন্তরিক মৈত্রীর কারণে চীনকে নিজেদের সাধ্যমতো সাহায্য দেয় তারা। পরে আফ্রিকান দেশগুলো ও বাংলাদেশে চিকিত্সকদল পাঠিয়েছে চীন সরকার। আফ্রিকার ৪৫টি দেশের চিকিত্সক ও ডাক্তারদের ৪০০টিরও বেশি মহামারী প্রতিরোধক প্রশিক্ষণ দিয়েছে চীনা চিকিত্সকরা।

চীনা চিকিত্সকদলের বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য দিতে চাই। ২০ মে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপে কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকানোর কার্যক্রম ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য হয়। দু'নেতার মতৈক্য বাস্তবায়নের জন্য জুন মাসের শুরুতে চীনা চিকিত্সকদল বাংলাদেশ সফর করে।

এবার চীনা চিকিত্সকদলের প্রধানের নাম লি ওয়েন সিউ। তিনি চীনের হাইনান প্রদেশের জনস্বাস্থ্য কমিটির উপপরিচালক এবং হাইনান প্রদেশের কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধক কার্যক্রমের নির্দেশক ও পরিকল্পনাকারী। বাংলাদেশে পৌঁছে তিনি সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি শেয়ার করেন। বাংলাদেশের ডাক্তার ও চিকিত্সকদের সাথে সেমিনারে তিনি বার বার বলেন, চীনের কোভিড-১৯ মহামারীর নিয়ন্ত্রণ ও ঠেকানোর কাজ কার্যকর পরিচালনা ব্যবস্থার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানসম্মত ও নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্তদের খুঁজে বের করতে হবে; বিভিন্ন এলাকার চিকিত্সক ও হাসপাতালের সমন্বয়ে আক্রান্তদের যথাযথ চিকিত্সা দিতে হবে; এর সঙ্গে সঙ্গে বিগ ডেটাসহ বিভিন্ন হাইটেক প্রযুক্তির প্রয়োগে জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষায় চেষ্টা করতে হবে। চীনে ঠিক এমনটাই করা হয়েছে। হাইনান প্রদেশের মহামারী প্রতিরোধক অভিজ্ঞতা স্মরণ করে এবং বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে তিনি পরামর্শ দেন। বর্তমানে বাংলাদেশের টেস্টকিটের ব্যাপক অভাব; ভাইরাসে আক্রান্তদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষাকারীদের খুঁজে বের করা চ্যালেঞ্জিং; আক্রান্তদের আলাদা রাখা ও তাদের অধিকাংশের সুষ্ঠু চিকিত্সার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাপক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মনে করেন, অজানা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারী ঠেকাতে চীনের প্রতিরোধক ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ অনেক কার্যকর ও তাত্পর্যপূর্ণ। মহামারী ঠেকানোর পরিকল্পনা হবে মহামারী ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চীনের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকারও প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

বাংলাদেশ সফরকালে দেশের চিকিত্সক পরিষদ ও হাসপাতালের দক্ষ ডাক্তারদের সাথে বহুবার সেমিনারে বসেন চীনা চিকিত্সকরা। সরকারি প্রতিরোধক পদক্ষেপ ও নীতিমালা প্রণয়ন ছাড়া, পেশাগত প্রতিরোধক ও চিকিত্সা পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশি চিকিত্সক ও বিশেষজ্ঞরা মহামারীর শ্রেণীভাগ করা, ভিন্ন প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ, টেস্টকিটের সংকটের মধ্যেই আক্রান্তদের খুঁজে বের করা, এবং ভিন্ন মাত্রার রোগীদের ভিন্ন চিকিত্সাপদ্ধতি, চিকিত্সকদের বিজ্ঞানসম্মত পালাক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বহু প্রশ্ন করেন। চীনা চিকিত্সকরা এসব প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দিয়েছেন।

বাংলাদেশের চিকিত্সকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেন চীনা চিকিত্সকরা। তাঁরা ব্যাপক পরিসংখ্যান, চিকিত্সা স্যাম্পল ও প্রস্তাব সংগ্রহ করেন; মহামারী তদন্ত ও কোভিড-১৯ মহামারীর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, হাসপাতালে ভিন্ন ধরনের আক্রান্তদের ভিন্ন ভিন্ন চিকিত্সাপদ্ধতি, চীনা ঐতিহ্যিক ওষুধের প্রয়োগ এবং আক্রান্তদের নির্দিষ্ট হাসপাতালে বা অস্থায়ী হাসপাতালে হস্তান্তর নিয়ে পিপিটি ও ভিডিও তৈরি করেন। এসব তথ্য ইউএসবি ডিস্কে উপহার হিসেবে বাংলাদেশি ডাক্তাদের দেন চীনা বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে তাদের সফর ছিল মাত্র দুই সপ্তাহের। প্রতিদিন চীনা চিকিত্সকরা ব্যস্ত সময় কাটান। তাঁরা বাংলাদেশের কূটনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্য, পুলিশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংস্থা, হাসপাতাল এবং টেস্টলেবসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের সাথে আলোচনায় বসেন; স্থানীয় সহস্রাধিক প্রতিনিধির সাথে মোট ৪১টি সেমিনারে অংশ নেন; এবং চিকিত্সক ও ডাক্তারদের জন্য ১৩টি পেশাগত প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করেন। তা ছাড়া, অনলাইনে একাধিক প্রশিক্ষণকোর্সও পরিচালনা করেন তারা। এতে আরো বেশি অঞ্চলের চিকিত্সক ও নার্সরা কোভিড-১৯ চিকিত্সার পদ্ধতি জানতে পারে।

কোভিড-১৯ ভাইরাস অনেক বিপজ্জনক। তবে চীনা চিকিত্সকরা সাহসের সাথে বাংলাদেশি নাগরিকদের জীবন রক্ষায় চেষ্টা করেন। এতে চীন ও বাংলাদেশের গভীর ও আন্তরিক মৈত্রীর সম্পর্ক প্রতিফলিত হয়। চীন একটি বড় দেশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এবং প্রেসিডেন্ট সি'র উত্থাপিত মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির চিন্তাধারা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের চিকিত্সকগণ ও জনগণের যৌথ প্রয়াসে যত দ্রুত সম্ভব কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকানোর কাজ সফল হবে বলে আমরা আশা করি।

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040