মহামারীতে চীনের অর্থনীতির অর্ধ-বার্ষিক প্রতিবেদন
  2020-07-22 15:52:05  cri

১৬ জুলাই সকাল ৯টায়, চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্যকার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের অর্থনীতির অবস্থা তুলে ধরা হয়। ১০টা থেকে দেশ-বিদেশের তথ্যমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। খবর অনুসারে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩.২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং প্রথম প্রান্তিকের -৬.৮ শতাংশের তুলনায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

যদিও ২০২০ সালের প্রথম ৬ মাসে চীনের অর্থনীতি ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ১.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, তবে বিশ্ব অর্থনীতি যখন মারাত্মকভাবে সঙ্কুচিত হচ্ছে, তখন চীনের অর্থনীতির পারফরম্যান্স বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

১৬ জুলাই প্রকাশিত উপাত্তগুলো দেখে অনেক কোম্পানি আশ্বস্ত হয়েছে। তারা মনে করে উপাত্তগুলো আশাতিরিক্ত। শান তুং হাও মাই কোম্পানি যন্ত্রপাতি তৈরি করে এবং জিই ও সিমেন্সসহ বিশ্বের ৩০টির বেশি সেরা কোম্পানির জন্য সেবা প্রদান করে। বিশ্ব টায়ার ছাঁচ বাজারের তিন ভাগের এক ভাগ এ কোম্পানি দখল করে আছে। কোম্পানির সিইও সাংবাদিককে বলেন, 'সম্প্রতি অবকাঠামো নির্মাণের চাহিদা বাড়ছে এবং আমাদের ট্রাক ও ইঞ্জিনিয়ারিং যানবাহনের টায়ার ছাঁচের অর্ডার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুশক্তিচালিত বিদ্যুতবিষয়ক খুচরা যন্ত্রাংশের অর্ডারও আগের চেয়ে বেশি।'

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে মহামারী মোকাবিলার পাশাপাশি পণ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা-ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নবায়ন কাজের ওপর গুরুত্ব দেয় কোম্পানি। চলতি বছরের প্রথম অর্ধে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানির অর্ডার ১৫ শতাংশ বেড়েছে; উত্পাদনের পরিমাণ ও মুনাফা যথাক্রমে ১৫ শতাংশ ও ২২ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানি ৫০ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে এবং ১৩০০ জন কর্মী নিয়োগ করেছে। হাও মাই কোম্পানি উন্নয়নের ভাল প্রবণতা দেখাচ্ছে এবং তা চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনা অর্থনীতির দ্রুত পুনরুদ্ধার প্রমাণ করে। ২০২০ সালের প্রথম ৬ মাসে চীনের অর্থনীতি অসাধারণ একটি সময় কাটিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী ও বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাবস্থার মুখে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি ৬.৮ শতাংশ হ্রাস পায়। বিনিয়োগ ও ভোগসহ গুরুত্বপূর্ণ সূচকেও দেখা যায় বড় হ্রাস। অনেক কোম্পানি কঠিন অবস্থায় পড়ে যায় এবং কর্মসংস্থানের চাপ বাড়ে। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে মহামারী প্রতিরোধ সফল হবার সাথে সাথে উত্পাদন, বাজার ও ব্যবসা পুনরুদ্ধার শুরু হয়। ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র লিউ আই হুয়া বলেন, ধারাবাহিক নীতির সমর্থনে চীনের অর্থনীতি প্রথমে হ্রাস পরে উত্থান এবং স্থিতিশীলভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।

জুন মাসে চীনে শহরের বেকারত্বের হার ৫.৭ শতাংশ ছিল। এসময় সিপিআইর বৃদ্ধি স্থিতিশীল ছিল। প্রথম প্রান্তিকের ৪.৯ শতাংশের তুলনায় প্রথম ৬ মাসের সিপিআই ১.১ শতাংশ হ্রাস পায়। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৩.১ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায় এবং আন্তর্জাতিক আয় ও ব্যয়ে ভারসাম্য বজায় থাকে। ১৮ জুন অনলাইন শপিং দিবসে চীনের কয়েকটি অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মের বাণিজ্যের পরিমাণ ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। ২০ জুলাই থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সিনেমা হলগুলো আবার খোলা হয়। হোম অফিস ও অনলাইন শিক্ষাসহ নতুন শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। রয়টার্স বার্তা সংস্থা তার খবরে চীনা অর্থনীতির সক্ষমতার স্বীকৃতি দিয়ে বলে, ধারাবাহিক মোকাবিলা ব্যবস্থার সাহায্যে চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।

বড় কোম্পানির তুলনায় ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাদেরকে বাঁচানো গুরুত্বপূর্ণ। কোম্পানি অর্থনীতির কোষের মতো। ১২.৫ কোটি কোম্পানি যেমন চীনা অর্থনীতিকে সমর্থন দেয়, তেমনি কোটি কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।

লো জুং পিং একটি খড় কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। মহামারী, বিশেষ করে বিদেশের মহামারীর কারণে তাদের অর্ডার অনেক কম হয় এবং বন্দর বন্ধ থাকায় তাদের উত্পাদিত পণ্য বিদেশে পাঠানো সম্ভব না। গত বছরে তারা এ বছরের জন্য ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। তিনি বলেন, তারা এ লক্ষ্যমাত্রা পরিবর্তন করতে চায় না। বরং নতুন ক্ষেত্রে ব্যবসার সুযোগ খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারিত করবে।

কোম্পানিকে সাহয্য ও সমর্থন দেয়ার জন্য সরকার ধারাবাহিক নীতি গ্রহণ করেছে। পরিবহন, খাবার ও পর্যটনসহ মহামারীতে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পগুলোকে বিশেষভাবে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। শাংহাইয়ের একটি স্প্যানিশ রেস্তোঁরার মহাব্যবস্থাপক সাংবাদিককে বলেন, 'সরকারের সমর্থন না-থাকলে আমাদের রেস্তোঁরাও আর টিকে থাকতে পারতো না। মহামারীর কারণে এ রেস্তোঁরা একসময় বন্ধ ছিল। সরকার মে মাস পর্যন্ত এ রেস্তোঁরার ৫৩ হাজার ইউয়ানের শুল্ক মওকুফ করে এবং গৃহকর্তা ভাড়াও মওকুফ করেন। এখন এ রেস্তোঁরা আবার খোলা হয়েছে।'

মহামারীর মুখে কোনো কোনো কোম্পানি নিজকে উদ্ধার করার উপায় খুঁজে পায় এবং কোনো কোনো কোম্পানি সংকটে নতুন সুযোগ দেখে। মহামারীতে ডিজিটাল অর্থনীতি দ্রুততর গতিতে উন্নয়ন হচ্ছে। অনলাইন শিক্ষা, ভার্চুয়াল শিল্প পার্কসহ ১৫টি নতুন ধরনের শিল্পকে সমর্থন দিয়ে ধারাবাহিক নীতি গ্রহণ করে চীনা সরকার এবং এসংশ্লিষ্ট নতুন পেশাও সৃষ্টি হয়, যেমন: অনলাইন শিক্ষা কল্যাণভোগী, লাভ বিক্রেতা, মহামারী প্রতিরোধক কর্মী ইত্যাদি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে চীনের আছে বড় অভ্যন্তরীণ বাজার ও সম্পূর্ণ শিল্প চেন, যা চীনা অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করেছে।

২০২০ সালের অর্ধেক শেষ হয়েছে এবং পরিবর্তী অর্ধেক বছরে চীনের আর্থনীতির সামনে অনিশ্চয়তাও আছে। বহিরাগত চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী মহামারী এখনও ছড়িয়ে পড়ছে এবং বিশ্ব অর্থনীতি মন্দাবস্থায় পড়ছে। বিশ্ব ব্যাংকের অনুমান অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বের অর্থনীতি ৫.২ শতাংশ হ্রাস পাবে, যা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর সবচেয়ে গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা। অন্যদিকে, চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হলেও, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। কোনো কোনো সূচক এখনও হ্রাস পাচ্ছে। ২০২০ সালে চীনে সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা, সার্বিকভাবে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা এবং ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা পরিকল্পনার শেষ বছর। এ প্রেক্ষাপটে সব লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়ন সহজ ব্যাপর নয়। বিশেষ অবস্থায় বিশেষ উদ্যোগ দরকার।

কিছুদিন আগে হাইনান অবাধ বন্দরের দ্বিতীয় পর্যায়ের কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ প্রদেশের ১৮টি জায়গায় শুরু হয়। প্রকল্পগুলের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮১০ কোটি ইউয়ান।

এদিকে, কুয়াং চৌ বিনিময় মেলা প্রথমবারের মতো অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ জুলাই বিশ্ব সিইও কমিটির সদ্যসকে দেওয়া একটি জবাবি চিঠিতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, 'চীনের অর্থনীতির দীর্ঘকালীন উন্নয়নের প্রবণতা পরিবর্তিত হয়নি এবং হবেও না। আমরা সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ গভীর করব এবং দেশ-বিদেশের কোম্পানিগুলোর জন্য আরও সম্পূর্ণ বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করব।'

সম্প্রতি শান সি প্রদেশের আন চি গ্রামে একটি দারিদ্র্যবিমোচন কারখানায় কর্মীরা ক্লাভ তৈরি করছিলেন। পরে এ ক্লাভগুলো বিদেশে রপ্তানি হবে। দরিদ্র মানুষ মাও ফাং আই এখন বাড়ির পাশের কারখানায় কাজ করতে পারেন এবং নিয়মিত আয় করছেন। বর্তমানে শানসি প্রদেশে ৯৬৮টি কারখানা দারিদ্র্যবিমোচন কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং দরিদ্র মানুষর জন্য ২০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এখন চীনে আরও ৫২টি দরিদ্র জেলা, ২৭০৭টি দরিদ্র গ্রাম আছে। দারিদ্র্যবিমোচনের এ চূড়ান্ত লড়াইয়ে সারা দেশের প্রচেষ্টা প্রয়োজন এবং এতে জয় আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। (শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040