জার্মান আন্কালের নীরব বেকরি
  2020-08-22 19:58:47  cri
চীনের হুনান প্রদেশের ছাংশা শহরে একটি নয় বছরের পুরাতন বেকারি রয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই বেকারি লাভের মুখ দেখে নি।

বেকারির মালিক একজন জার্মান মানুষ। তিনি ভালো ম্যান্দারিন বলতে পারেন এবং চীনা সাইন ভাষা জানেন।

বেকারিটি ছাংশা একটি শান্ত সড়কে অবস্থিত। বেকারির কাছ দিয়ে গেলে ব্রেড ও কফির সুগন্ধ পাওয়া যায়। সুগন্ধ ছাড়াও বেকারিতে ভালবাসা, পরিশ্রম ও উষ্ণতা অনুভব করা যায়।

'আমার বেকারির মুনাফা বেশি না, তবে খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ।' জার্মান মালিক এমনটি বলেন।

তাঁর বেকারির আয়তন বড় না, কর্মীও বেশি না, বেশিরভাগ গ্রাহক হলেন পুরানো গ্রাহক।

মালিকের চীনা নাম উ চেং রং। তাঁর বয়স ৫০ বছরের বেশি। তিনি ভালোভাবে চীনা ভাষা বলতে পারেন। তিনি হুনান প্রদেশের আঞ্চলিক ভাষাও কিছু বলতে পারেন। কোন কোন গ্রাহক তাঁকে ডাকেন আঙ্কেল উ।

বেকারিটির রান্নাঘরে কাজের শব্দ ছাড়া অন্য কোনও শব্দ পাওয়া যায় না। সবাই শুধু কাজ করে।

উ চেং রং সবসময় ওভেনের কাছে দাঁড়িয়ে থাকেন। যখন ওভেন টাইমারের শব্দ শুনতে পান, তখন তিনি বাষ্পের রুটি নিজেই বের করে আনেন। উ চাচা বলেন, আমার সব কর্মী হলেন প্রতিবন্ধী মানুষ। তাঁরা টাইমারের শব্দ শুনতে পান না। সেজন্য আমি সবসময় ওভেনের কাছে দাঁড়িয়ে থাকি। যদিও আমার বেকারিতে শব্দ কম, তবুও এখানে উষ্ণতা অনেক বেশি।

১৮ বছরের আগে উ চেং রং ও তাঁর স্ত্রী জার্মানি থেকে ছাংশা শহরে এসে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তা দেওয়া শুরু করেন। সে সময় ছাংশা শহরে জার্মান একটি বেসরকারি দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে সহায়ক পরিকল্পনায় কাজ করতেন। তখন তাঁরা ভাবেন নি যে, ছাংশা শহরে ১৮ বছর থাকবেন!

১৮ বছরে তিনি ও তাঁর স্ত্রী প্রায় ৫ শতাধিক শিশুকে সাহায্য করেছেন। তাঁরা শিশুদেরকে কথা বলা শিখিয়েছেন, শিশুদেরকে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ায় সহায়তা করেছেন। উ চেং রং বলেন, ছাংশা শহরে খুবই গরম, প্রথমে এখানে কিছুটা অস্বস্তি লাগতো। আমার মনে হতো, আমাদের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সময় হিসাব করি নি, ধীরে ধীরে ১৮ বছর হয়ে গেছে!

২০১১ সালে উ চেং রং প্রতিবন্ধী মানুষদের সহায়তা করার জন্য একটি বেকারি খোলার চিন্তা করেন। তিনি বলেন, যদি প্রতিবন্ধী মানুষ এ ধরনের প্রযুক্তি পায়, তাহলে তাঁদের জীবনযাত্রা উন্নত হবে। পরিশ্রম করে সম্মান অর্জন করতে পারবে।

কয়েক সপ্তাহ পর উ চেং রং একজন জার্মান প্যাস্ট্রি শেফকে নিয়ে আসেন। শেফ উ চেং রং ও তাঁর কর্মীদের বেকারি প্রযুক্তি শিখান।

প্রথমে বেকারিটি ছিল ব্যস্ত রাস্তায়। কিন্তু বেকারির মুনাফা বেশি হতো না। তাই তিনি বেকারিটি একটি শান্ত ও ছোট রাস্তায় স্থানান্তরিত করেন।

২০১৪ সালে জার্মান শেফ জার্মানিতে ফিরে যান। এরপর তিনি নিজেই বধির কর্মীদেরকে কাজ শেখান। এ পর্যন্ত তিনি ২০জন প্রতিবন্ধী মানুষকে প্যাস্ট্রি তৈরির কাজ শিখিয়েছেন।

'আমি কখনও এদের ছেড়ে যাবার চিন্তা করি নি।'

উ চেং রং এভাবেই সাংবাদিককে জানান। এ সমস্ত বছর বেকারির কোন মুনাফা হয় নি। কিন্তু উ চেং রং তাদের ছেড়ে যান নি।

তিনি বলেন, ছাংশা শহরে তার কোনও নিজস্ব বড়ি নেই, ঘর ভারা করতে থাকেন। দেশ ত্যাগের এতগুলো বছর পরও তিনি মাতৃভূমি মিস করেন।

তিনি বলেন, আমি ছাংশা শহরে অনেক বন্ধু পেয়েছি। অধিকাংশই হলেন তাঁর বেকারির গ্রাহক।

'আমার স্ত্রীকে আমার পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি থাকলে আমার একাকী লাগে না।' উ চেং রংয়ের জার্মান বন্ধু ও আত্মীয়রাও তাঁকে সমর্থন করেন। যখন বেকারির সময় কঠিন হয়, তাঁরা উ চেং রংকে সহায়তা করেন।

এ বছরে মহামারীর অবস্থায় বেকারি ক্ষতির মুখে পড়ে। কিন্তু উ চেং রং কোনও কর্মী ছাঁটাই করেন নি, তাঁর ব্রেডের দামও বাড়ান নি। কারণ তিনি ভাবছেন, তাঁর প্রতিবন্ধী কর্মীরা অন্য কাজ খুঁজে নিতে পারবে না।

এতগুলো বছরেও আমি তাদের ছেড়ে দেই নি, মহামারীর সময়ও আমি তাদের ছেড়ে দিতে পারি না।

জার্মান চাচা বেকারির দেয়ালে একটি স্লোগান লিখে রেখেছেন। লেখা হয়, ব্রেড কিনলে ভালোবাসা পাঠানো হবে। এ স্লোগান তাঁর অতিথিদেরকে দিয়েছেন। এ বেকারিতে তৈরি ব্রেড শুধু খাবারই নয়, বরং প্রতিবন্ধীদের তৈরি ভালোবাসা ও প্রেম!

এক পিস ব্রেড, এক কাপ কফি, এক দল মানুষ। যখন আপনি এ নীরব এ বেকারিতে প্রবেশ করবেন, তখন সে উষ্ণতা অনুভব করতে পারবেন।

(ছাই/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040