মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান চাং কুই মেই
  2020-09-18 16:21:51  cri

১৪ জুলাই সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে হুয়া পিং মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাচের প্রশিক্ষণ শুরু করে। তারা যে নাচ শিখছে, তা সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে।

গত জুন মাসে, হুয়া পিং মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান চাং কুই মেই একজন নাচের শিক্ষককে ছাত্রীদের জন্য তরুণ-তরুণীদের মধ্যে জনপ্রিয় নাচ শেখানোর অনুরোধ জানান। তিন সপ্তাহ পর মেয়েরা সেই নাচ শিখে ফেলে। সকালে ক্লাসের মাঝে বিশ্রাম নেয়ার সময় মেয়েরা এই নাচের মাধ্যমে শরীরচর্চা করে। প্রধান চাং কুই মেই বলেন, আমি মেয়েদেরকে বাইরের বিশ্ব দেখাতে চাই, তাদের চিন্তাধারা উন্মুক্ত করতে চাই।

হুয়া পিং জেলা ইয়ুননান প্রদেশের লিচিয়াং শহরে অবস্থিতি। চার দিকে উঁচু উঁচু পাহাড়। দেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সেখানে গ্রামের মাধ্যমিক স্কুলে ১৫.৫ শতাংশ শিশু স্কুলচ্যুত হয়। বলা যায়, প্রতি ৬টি গ্রামীণ মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থীর মধ্যে ১জন স্কুলচ্যুত হয়। ২০০৮ সালে চাং কুই মেই দেশের প্রথম বিনা খরচের সরকারি মেয়েদের জন্য 'হুয়া পিং মাধ্যমিক স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন। বিশেষ করে দরিদ্রতা ও বিভিন্ন কারণে স্কুলচ্যুত মেয়েদের ভর্তি করা হয় এখানে। এ পর্যন্ত ১৬৪৫টি মেয়ে শিশু প্রথম শ্রেণীর বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।

চাংয়ের বয়স ৬৩ বছর। তাঁর মুখ দেখে বোঝা যায় তার শারীরিক অবস্থা ভালো না। ২০১৫ সালে তাঁর হাড়ের ক্যান্সার হয়েছিল। ডাক্তার বলেছিল, অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে চাং ভাবেন, এখনও ততটা ব্যথা হয় না, তিনি ক্যান্সার সহ্য করতে পারবেন, তিনি চিকিত্সা গ্রহণ করতে চান না। তিনি বলেন, আমার সময় উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য।

মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট ৯টি ক্লাস আছে, এর মধ্যে তিনটি ক্লাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্লাস। পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, চাং প্রতিদিন ভোর ৫টায় বিছানা থেকে ওঠেন, হোস্টেলের লাইট জ্বালান, মেয়েদের ঘুম থেকে ওঠান। স্নাতক গ্রেডের ১৫৯টি মেয়ে ভোর সাড়ে ৫টায় উঠে, তারপর সকালের লেখাপড়া করে, হোস্টেল পরিষ্কার করে, নাস্তা খায় তারপর ক্লাসে যায়। দুপুরের খাবার খেতে ১০ মিনিট সময় লাগে, খাবার খাওয়া শেষে আবারও ক্লাস শুরু হয়। মধ্যরাত পর্যন্ত লেখাপড়া চলতে থাকে।

প্রতি রোববার, মেয়েদের ছুটির সময়। মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে চাং খুব কঠোর। চলতি বছর চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগে ১১জন মেয়ে ছুটি নেয়। চাং তাদের জন্য খুব উদ্বিগ্ন এবং এজন্য খুব রাগ করেন। তবে মেয়েরা জানে যে, তাদের প্রধান চাং তাদের প্রতি খুব যত্নশীল। গত ডিসেম্বর মাসে, চাং হাসপাতালে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করেন। ডাক্তার বলেছিল, তার ১৭ ধরনের রোগ আছে। গত বসন্ত উত্সবের সময়, তার রোগ বেড়ে ২৩টি হয়। তবে তিনি চিকিত্সা নেওয়ার জন্য সময় ব্যয় করতে চান না। তিনি হাসপাতালে থাকতেও চান না, তিনি সব সময় মেয়েদের লেখাপড়ায় দিতে চান। বিভিন্ন রোগের কারণে তার ওজন আগের ৬৫ কেজি থেকে বর্তমানের ৪৫ কেজিতে নেমে এসেছে।

মেয়েরা চাংয়ের কষ্ট বোঝে। তারা জানে যে, চাংয়ের ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হল লেখাপড়ায় ভালো ফলাফল করা। একবার স্কুলে হঠাত্ চাংয়ের বুকে ব্যথা হয় এবং তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। তখন একটি মেয়ে তার কাছে আসে। মেয়েটি এ্যাম্বুলেন্স ডাকে নি, কোনো মানুষকেও ডাকে নি, শুধু চাংকে বলে, চিন্তা করবেন না, আমি চীনের সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়- ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করবো। আশ্চর্যের বিষয় হল, মেয়ের এ কথা শুনে চাংয়ের ব্যথা ভালো হয়ে যায়। পরে ওই মেয়েটি চীনের চ্যচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এটিও চীনের প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছর চাংয়ের উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮২ শতাংশেরও বেশি মেয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এটি লি জিয়াং শহরের প্রথম ঘটনা।

ইদানীং চাং মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। কারণ, এখন শিক্ষার্থীদের উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রদেশের অনেক শহরের পরিবারও তাদের মেয়েকে চাংয়ের বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে চায়, তারা ফোন করে অনুরোধ জানায়। তবে চাং তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। তার এই উচ্চ বিদ্যালয় শুধু গ্রামীণ মেয়ের জন্যই।

সম্প্রতি এক টিভি অনুষ্ঠানে প্রধান চাং বলেন, একটি মেয়ে শিক্ষিত হলে তিনটি প্রজন্ম উদ্ধার করতে পারে। এই কথা শুনে অনেকেই অবাক হয়। তবে যদি আপনি একবার হুয়া পিং উচ্চ বিদ্যালয়ে আসেন তাহলে আপনি সব বুঝতে পারবেন।

অন্য জায়গার মানুষ হুয়া পিং জেলায় যেতে চাইলে, সবচেয়ে দ্রুত পদ্ধতি হলো, প্রথমে কাছাকাছি প্রদেশ সিছুয়ান প্রদেশের ভান জি হুয়া শহরে যেতে হয়। কারণ কাছাকাছি শহরের মধ্যে শুধু এই শহর থেকে হুয়া পিং জেলায় যাবার হাইওয়ে আছে। এই হাইওয়ের পাশেই বড় নদী। এক ঘন্টা পর হুয়া পিং জেলায় পৌঁছানো যায়, তারপর ১৫ মিনিট পাহাড় বেয়ে ওঠার পর মেয়েদের এই উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌঁছানো যায়।

চাং বলেন, আগের হুয়া পিং জেলায়, প্রতিটি পরিবারে পুরুষ ছিল। পরিবারে মেয়ে শিশুর জন্ম হলে, তারা মনে করত, মেয়ে কোনও কাজ করতে পারে না, তাই মেয়ে শিশু পছন্দ করে না।

চাং বলেন, গ্রামে শিশুর যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব নারীদের। মেয়েরা শিক্ষিত হলে, তাদের গুণগত মানসিক অবস্থা বৃদ্ধি পায়। তারা বুঝতে পারে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা দেওয়া কত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী মেয়ে শিশুর লেখাপড়ায় গুরুত্ব না দিলেও, মা তার জন্য চেষ্টা করে। এভাবে মেয়েদের জীবন পরিবর্তন করা যায়। এভাবে অন্তত তিনটি প্রজন্মকে উদ্ধার করা যায়।

তবে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। হুয়া পিং জেলার শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক প্রধান ইয়াং ওয়েন হুয়া জানান, তখন জেলা কর্তৃপক্ষ চাংয়ের স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে। সবাই এর বিরোধিতা করেছিল। তারা বলেছিল, প্রাচীনকালে মেয়েদের আলাদা স্কুল থাকত, এখন আর মেয়েদের স্কুল দরকার নেই। আরো কঠিন সমস্যা হল- টাকার অভাব। ইয়াং ওয়েন হুয়া বলেন, উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে একটি রাসায়নিক ক্লাসের পরীক্ষাগার নির্মাণের চেয়েও ২০ হাজার ইউয়ান বেশি লাগে। এসব টাকা কোথা থেকে আসবে? তিনি চাংকে প্রস্তাব দেন, উচ্চ বিদ্যালয়ে আপনি একটি ক্লাস শুরু করেন, কেমন?

চাং রাজি হন নি। তিনি বলেন, 'মেয়েদের স্কুলের পরিবেশ বেশ ভালো হবে।

২০০৭ সালে সুযোগ আসে। তিনি সে বছর দেশের ১৭তম কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। ইয়াং ওয়েন হুয়া বলেন, চাং তখন থেকে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন, তিনি তৃণমূল পর্যায়ের দাবি-দাওয়া বেইজিংয়ে পৌঁছে দিতে পারেন। বিভিন্ন স্তরের সরকারও তাঁর প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেয়। তখন শহর ও জেলা কর্তৃপক্ষ ১০ লাখ ইউয়ান বরাদ্দ দেয়। এক বছর পর হুয়া পিংয়ে মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্কুল শুধু দরিদ্র মেয়েদের জন্য। তারা বিনাখরচে এই স্কুলে লেখাপড়া করতে পারে। সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, ১০০টি মেয়ে এই স্কুলে ভর্তি হয়।

স্কুল প্রতিষ্ঠার শুরুতে চাং পাশ্চাত্য শিক্ষার চিন্তাধারা অনুসরণ করতেন। মেয়েদেরকে লেখাপড়ায় অনেক স্বাধীনতা দিতেন। তবে তিনি আবিষ্কার করেন যে, এ ব্যবস্থা পাহাড়ি এলাকার মেয়েদের জন্য সহায়ক নয়। মেয়েদের লেখাপড়ার ভিত্তি ভালো না। কারণ, পাহাড়ের মেয়েদের জ্ঞানের ভিত্তি খুব দুর্বল, তাই তাদের অবস্থা অনুযায়ী উপযোগী শিক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেওয়া; যাতে তারা পাহাড় থেকে বের হতে পারে। তাই চাং স্কুলে লেখাপড়ার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেন।

মেয়েরা উচ্চ বিদ্যালয়ে রুদ্ধদ্বার পরিবেশে লেখাপড়া করে। পরিচালনাও খুব কঠোর। তাহলে তাদের ছাত্রী কি ভালোভাবে বাইরের জীবনের সঙ্গে মিশতে পারবে? আসলে শুরুর দিকে সত্যিই তা একটু কঠিন ছিল।

চাংয়ের স্কুলের প্রথম পর্যায়ের স্নাতক ছাত্রী সিয়াও মিন দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। প্রথম বছর সিয়াও মিনের ফোন পান চাং। সিয়াও মিনের হোস্টেলের অন্য সাতটি মেয়ে শহরের, তারা সিয়াও মিনের জরাজীর্ণ কাপড় দেখে তাকে পছন্দ করে না। একবার ওই সাতটি মেয়ে আধা ঘন্টা ধরে এক ব্যারেল পানি হোস্টেলে নিয়ে আসে এবং সিয়াও মিনকে পানি দিতে রাজি হয় নি। তারা বলে, তুমি পানি পান করতে চাও? নিজে গিয়ে নিয়ে আসো। সিয়াও মিন বলে, ঠিক আছে তোমরা অপেক্ষা করো। তারপর মাত্র ছয় মিনিট পর সিয়াও মিন একাই এক ব্যারেল পানি নিয়ে ফিরে আসে। সাতটি মেয়ে এরপর থেকে আর সিয়াও মিনকে উত্যক্ত করে না। সিয়াও মিন চাংকে জানায়, শহরের ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ায় অনেক ভালো, ইংরেজি খুব ভালো বলে। চাং সিয়াও মিনকে উত্সাহ দিয়ে বলেন, ভয় পেও না, কঠিনতা থাকলে তাকে পরাজিত করার চেষ্টা করো।

চাং আবিষ্কার করেন যে, তাঁর উচ্চ বিদ্যালয়ের মেয়েরা যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে সামনের দিকে থাকতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চাকরিতে যোগ দেয়ার পরও খুব সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কাজ করে।

স্কুল পরিচালনার এত বছরে চাং আবিষ্কার করেছেন, গ্রামীণ মেয়েদের চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে। প্রথম দফার ছাত্রীরা কোনো কঠিনতার ভয় পায় না। আগে পরিবারে অনেক ছেলেমেয়ে থাকতো। মেয়ের মর্যাদা সবচেয়ে কম ছিল, পরিবার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করত না, ভালো খাবার দিত না। এমন পরিবেশে মেয়েরা কোনো কঠিনতার কাছে নতি স্বীকারও করে না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রামের মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটেছে। কারণ, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্যবিমোচনের নীতির কারণে সবার জীবনমান অনেক উন্নত হয়েছে। চাং এ অবস্থায় কিন্তু আরো উদ্বিগ্ন হন। 'এখন গ্রামীণ মেয়েরা পাহাড়ে থাকতে অভ্যস্ত হয়েছে। হঠাত্ একবার বাইরে গিয়ে দেখে, তারা পিজা খায় নি, বার্গারও দেখে নি, তারা বাইরের বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। তাই বাইরে যেতে ভয় লাগে। তারা শুধু পাহাড়েই থাকতে চায়, নিজের পরিচিত পরিবেশে থাকতে চায়।

তাই চাং নিজের স্কুল পরিচালনার লক্ষ্যও পরিবর্তন করেন। তাদেরকে শুধুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো নয়, মূল থেকে তাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে হয়।

চাং চীনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর বাবা আগে সেনাবাহিনীতে ঘোড়া লালন-পালন করতেন। তাঁর মা অনেক বছর আগে রোগের কারণে অচল হয়ে যান। চাং পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে। তাঁর ভাই বোনের মধ্যে কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, চাংয়ের চরিত্র ছেলের মতই- ভয়ডর অনেক কম।

চাং ১৭ বছর বয়সে বড় বোনের সঙ্গে ইয়ুননান প্রদেশে আসেন। সেখানে বিয়ে করেন। এরপর তিনি তালি শহরে গিয়ে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ক্লাসে সবসময় লাল কাপড় পরতেন। তিনি নাচতে পছন্দ করতেন। তাঁর সহকর্মীরা সবসময় বলে, ৩০ বছর বয়সের মানুষ কেন শিশুর মত। চাংয়ের স্বামী স্কুলের প্রধান ছিলেন, তবে ১৯৯৩ সালে তাঁর স্বামী রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান। চাং খুব মর্মাহত হন এবং হুয়া পিং জেলায় স্থানান্তরিত হয়ে শিক্ষকতার কাজ করার আবেদন জানান। পরে তাঁর মুত্রথলিতে টিউমার হয়। তবে অস্ত্রপচারে অনেক খরচ হবে। এর আগে স্বামীর রোগে তাঁর পরিবারের সব অর্থ শেষ হয়ে যায়। তাই চাং বাধ্য হয়ে চিকিত্সা করা ছেড়ে দেন। পরে তাঁর ছাত্রছাত্রীরা তাঁর রোগের কথা জানতে পারে। তারা পাহাড়ে গিয়ে ফল তুলে তাঁকে খাওয়ায়, গ্রামের বাসিন্দারা এক ইউয়ান দুই ইউয়ান করে তাঁকে অর্থ প্রদান করে। এই এক ইউয়ান, দুই ইউয়ান হলো বাসিন্দাদের যাতায়াতের ফি, চাংকে দেওয়ার পর গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েক ঘন্টা ধরে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরতে হয়। এভাবে স্কুল ও জেলার সাহায্যে, চাং হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করেন। চাং কাঁদতে কাঁদতে বলেন, হুয়া পিং জেলাকে আমি নিজের সব কিছু দিতে পারি। পরে তিনি একটি মেয়েদের স্কুল তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

চাং বলেন, এখন অনেকেই পাশ্চাত্যের চিন্তাধারা মেনে নিয়েছে। প্রথমে নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া, তারপর অন্যের জন্য কিছু করা। আমি এতে রাজি না। যদি আগে অন্যের কথা ভাবতে না-পারি, অন্যকে কৃতজ্ঞতা না-জানাতে পারি, তাহলে আমাদের সমাজ স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হবে না।

(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040