বিদ্যাবার্তা ০৯২১
  2020-09-21 17:28:02  cri

 

সম্প্রতি চীনের হুনান প্রদেশের ছেনচৌ শহরের ইয়াও জাতিঅধ্যুষিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। স্থানীয় দারিদ্র্যবিমোচন শিল্পের উন্নয়ন ও দারিদ্র্যমুক্তকরণ কার্যক্রমের ফলাফল সম্পর্কে তিনি খোঁজ-খবর নেন। চলতি বছরে সি'র ১১তম আঞ্চলিক পরিদর্শন এটি।

চীনের সংখ্যালঘু জাতির উন্নয়ন কি সাধিত হয়েছে? স্থানীয় দরিদ্র জনগণের জীবনমানে কি কোনো উন্নতি হয়েছে? এ প্রশ্ন বরাবরই প্রেসিডেন্ট সি'র মনোযোগ আকর্ষণ করে থাকে। তিনি আন্তরিকভাবে বলেছিলেন, 'বিভিন্ন জাতির লোকজন সুখী জীবন কাটাবে—এটা আমার দীর্ঘকালের আশা এবং আমাদের সকল প্রচেষ্টার লক্ষ্য।' আজকের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির বসবাস এলাকায় সি'র পরিদর্শনের গল্প তুলে ধরবো।

ঐতিহ্যিক ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে চীনের চরম দরিদ্র এলাকা অধিকাংশ দূরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এসব অঞ্চলের মধ্যে সংখ্যালঘু জাতির লোকদের বসবাস স্থান আছে। চীনের ১৪টি চরম দরিদ্র এলাকার মধ্যে ১১টিতে সংখ্যালঘু জাতির মানুষ বসবাস করে থাকে। ১২০টি দরিদ্র জেলার মধ্যে ৮৫টি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের দরিদ্র জেলার নামতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

তবে সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা হলে আর কোনো জাতি অভাবে থাকবে না। চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান বাস্তবায়নের সুফল থেকে কোনো জাতি বঞ্চিত হবে না। তাই যে কোনো জটিল অবস্থায় দারিদ্র্যবিমোচনের যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে।

পাহাড় যতই উঁচু হোক, রাস্তা হোক দূরের এবং আবহাওয়া যতই কঠোর হোক না কেন, সংখ্যালঘু জাতির দরিদ্র লোকদের দেখতে যেতেই হবে এবং স্থানীয় দারিদ্র্যবিমোচনে পরামর্শ দিতে হবে। এটা হচ্ছে সি চিন পিংয়ের নীতি।

২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি বহু পাহাড় অতিক্রম করে হুনান প্রদেশের সিয়াংসি অঙ্গরাজ্যের মিয়াও জাতিঅধ্যুষিত গ্রামে পৌঁছান। তখন তিনি বলেন, সংখ্যালঘু জাতির গ্রামের প্রকৃত চেহারা দেখতে চান তিনি; স্থানীয় গ্রামবাসীদের আসল জীবন উপলব্ধি করতে চান। সেখানে তিনি প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট দারিদ্র্যবিমোচন চিন্তাধারা পেশ করেন এবং এ চিন্তাভাবনা এখনো চীনের বিভিন্ন এলাকায় বাস্তাবায়িত হচ্ছে।

সিছুয়ান প্রদেশের লিয়াংশান পাহাড়ের ই জাতিঅধ্যুষিত এলাকা চীনের বৃহত্তম ই জাতির বসবাস স্থান এবং সেখানে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির লোকসংখ্যা অনেক বেশি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ৪ ঘন্টারও বেশি সময় নিয়ে গাড়িতে পাহাড়াঞ্চলের রাস্তা অতিক্রম করে পাহাড়ের ভিতরে দরিদ্র গ্রামবাসীদের দেখতে যান। একজন গ্রামবাসীর বাড়িতে বসে তিনি স্থানীয় দারিদ্র্যবিমোচন কর্মীদের সাথে বসে দরিদ্রতার কারণ বিশ্লেষণ করেন এবং দারিদ্র্যমুক্তির জন্য পরামর্শ দেন। দরিদ্র পরিবার জিতিএর্জির নতুন বাড়িতে তিনি স্থানীয় স্থানান্তর প্রকল্পের অবস্থার খবর নেন।

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ছোংছিং শহর পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট সি। বিমান ও ট্রেন থেকে নেমে ৩ ঘন্টার বেশি সময় গাড়িতে বসে তিনি শিজু জেলার থু জাতিঅধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছান। তখন স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাথে কথাবার্তায় সি বলেন, 'দারিদ্র্যবিমোচন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আপনাদের সাথে দেখা করার মাধ্যমে এখানে গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। জানতে পেরেছি কী কী সমস্যা রয়ে গেছে, তা সম্পর্ক।'

কানসু প্রদেশের লিনসিয়া হুই জাতিঅধ্যুষিত জেলা, ছিংহাই প্রদেশের থু জাতিঅধ্যুষিত জেলার বানইয়ান গ্রাম, ইয়ুননান প্রদেশের তালি জেলার বাই জাতিঅধ্যুষিত এলাকাসহ চীনের অনেক দূরবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেছেন সি।

বিভিন্ন এলাকা থেকে দারিদ্র্যমুক্তির সুখবর অব্যাহতভাবে আসছে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ইনারমঙ্গোলিয়ার দরিদ্র জেলা এবং ছিংহাই প্রদেশের সকল দরিদ্র জেলার দারিদ্র্যমুক্তির খবর আসে। মে মাসে ইয়ুননান প্রদেশের ৩১টি দরিদ্র জেলা দারিদ্র্যমুক্ত হয়।

বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির বসবাস এলাকার উন্নয়ন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনের প্রতি মনোযোগ দেন সি; চীনের বিভিন্ন জাতির লোকদের নিয়ে একসাথে সচ্ছল সমাজে প্রবেশের আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

 

চলতি বছরের জুন মাসে তিনি নিংসিয়া হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উচুং শহরের একটি আবাসিক কমিউনিটি পরিদর্শন করেন। এ কমিউনিটিতে অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যালঘু জাতির লোক। কমিউনিটির চত্বরে তিনি বাসিন্দাদের সাথে কথাবার্তা বলেন। তিনি বলেন, দারিদ্র্যবিমোচন, আধুনিকায়ন ও সার্বিক সচ্ছল সমাজে কোনো জাতির অভাব থাকবে না; চীনা জনগণের যৌথ প্রয়াসে ভবিষ্যতের জীবন আরও সুখী ও সুন্দর হবে।

২০১৬ সালের মে মাসে হেইলুংচিয়াং প্রদেশ পরিদর্শনকালে স্থানীয় হ্যচে জাতির গ্রামবাসী ইউ কুই লানের বাড়িতে যান সি। তখন তিনি বলেন, মাতৃভূমির বড় পরিবারে ৫৬টি জাতি যেন আপন ভাই-বোনের মতো। বিভিন্ন জাতির লোকজন একসাথে সংগ্রাম করলে চীনা জাতি আরও উন্নত হবে এবং বিভিন্ন জাতির লোকদের জীবনও সমৃদ্ধ হবে।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ইনারমঙ্গোলিয়া, কুয়াংসি,তিব্বত, নিংসিয়া ও সিনচিয়াংসহ ৫টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ১৩ জন তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সাথে সেমিনারে বসেন। তাঁরা সি'র আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৬৬তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে বৈঠকে সি বলেন, চীনের কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় কাজের ওপর গুরুত্ব দেয়। বিভিন্ন জাতির বসবাস এলাকায় একতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে, যাতে বিভিন্ন জাতির বুদ্ধি ও শক্তি নিয়ে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।

 

ইয়ুননান প্রদেশের কুংশানের তুলুং জাতির গ্রামবাসীদের লেখা চিঠিতে সি লিখেছেন: 'তুলুং জাতি পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে জানতে পেরে অনেক খুশি হলাম। দারিদ্র্যবিমোচন প্রথম পদক্ষেপ, পরের জীবন আরও সুন্দর হবে। তুলুং জাতির লোকেরা আরও পরিশ্রম করে জন্মস্থানের উন্নয়ন করবে এবং সুখী জীবন বাস্তবায়ন করবে বলে বিশ্বাস করি।'

তিব্বতের লুংজি জেলার ইয়ুমাই উপজেলার পশুপালক জুওকা ও ইয়াংজুং বোনকে লেখা চিঠিতে সি বলেন, 'সবার প্রচেষ্টায় ইয়ুমাই উপজেলার জীবন আরও সুখের হবে এবং গ্রামবাসীদের আয়ও অব্যাহতভাবে বাড়বে।'

আসলে এসব গল্পের পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা আছে, আর তা হল, সময়ের সাথে প্রতিযোগিতা করা। সি বলেছিলেন যে, 'একটি দরিদ্র পরিবার ও দরিদ্র লোকের জীবনযাপন সমস্যা সমাধান না হলে শান্তিতে ও আরামে থাকা সম্ভব না। চীনা জনগণের সুখী জীবনযাপনের আশাআকাঙ্খা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা পরিশ্রমের সাথে সংগ্রাম করে যাবো।'

২০২০ সালে চীনের সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা ও দারিদ্র্যবিমোচন লক্ষ্যমাত্রার সন্ধিক্ষণ। কোভিড-১৯ মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে এ যুদ্ধে জয় পাওয়া আরও কঠিন। তবে, থেমে যাওয়া বা শিথিলতা প্রদর্শন চলবে না। ২০২০ সালে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র লোকদের দারিদ্র্যমুক্তকরণ চীন সরকারের প্রতিশ্রুতি, যা অবশ্যই সময়ের মধ্যেই পূরণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সি'র দৃঢ় প্রতিজ্ঞা রয়েছে।

তাই ২০২০ সালের শুরুর দিকে তিনি ইয়ুননান প্রদেশে যান। কারণ, ইয়ুননান প্রদেশে সংখ্যালঘু জাতির লোকসংখ্যা বেশি। মে মাসে দুই অধিবেশনের আগে তিনি মাওনান জাতির দারিদ্র্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করে মাওনান জাতির দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত দেন তিনি।

মে মাসে ইনারমঙ্গোলিয়ার প্রতিনিধি দলের পর্যালোচনায় জাতীয় স্বশাসন ব্যবস্থার সম্পূর্ণকরণ, বিভিন্ন জাতির আদান-প্রদান ও সংমিশ্রণ জোরদার করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন সি, যাতে সংখ্যালঘু জাতির বসবাস এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।

অগাস্ট মাসের শেষ দিকে তিব্বতের সপ্তম কর্ম-সেমিনারে সি জোর দিয়ে বলেন, দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য রক্ষায় আরো বেশি চেষ্টা করতে হবে। বিভিন্ন সহায়ক নীতিমালা ও ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে গ্রামাঞ্চলের পুনরুত্থানের সাথে তা যুক্ত করা যায়। যাতায়াত ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও বয়স্ক লোকদের পেনশেন ব্যবস্থাও উন্নত করতে হবে।

[বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির বসবাস এলাকার পরিবর্তন সম্পর্কে কিছু আলোচনা।]

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময়মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না-পাররে বা মিস করলে, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040