প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নববর্ষের শুভেচ্ছা
2020-12-31 21:03:19

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নববর্ষের শুভেচ্ছা_fororder_1609413354437_555

প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা ভালো আছেন?  আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্য ইংরেজি নতুন বছর ২০২১ কে স্বাগত জানাতে যাচ্ছি। আমি বেইজিং থেকে আপনাদের সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই। শুভ নববর্ষ।

২০২০ সাল ছিল একটি ব্যতিক্রমী বছর। হঠাৎ কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়লে আমরা জনগণের জীবন রক্ষার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা একসঙ্গে পরিশ্রম করে মহামারী প্রতিরোধের মহা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। যৌথভাবে মহামারী প্রতিরোধের লড়াইতে অংশ নেয়ার সময় আমাদের সাহস, অদম্য পরিশ্রম, আত্মরক্ষা, বিপদ মোকাবিলা, আত্মত্যাগ, এবং পারস্পরিক সহায়তার মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। এ সময়ে চিকিত্সা কর্মী ও গণফৌজের সৈনিক, বিজ্ঞানী ও আবাসিক কমিউনিটির কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ও প্রকল্পের শ্রমিক, নবোতিপর বৃদ্ধ ও নতুন প্রজন্মের তরুণসহ অসংখ্য মানুষ নিজের মূল্যবান জীবন ও ভালবাসা দিয়ে অন্যদের জীবন রক্ষা করেছিলেন। নিজেদের শক্তি দিয়ে মহা শক্তি গড়ে তুলেছেন তাঁরা। প্রতিটি দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রত্যেকের হাতে হাত রেখে প্রতিটি মর্মস্পর্শী ঘটনায় নিজেদের মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। সাধারণ জনগণের বীরত্বগাথা মানব ইতিহাসে চির অমর হয়ে থাকবে। মহামারীর সময় প্রত্যেক চীনা মানুষ নিজেদের মহান হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন । আমি এখানে প্রত্যেক আক্রান্ত রোগীকে সমবেদনা জানাই! বীরদের শ্রদ্ধা জানাই! আমি আমাদের মহান দেশ ও জনগণ এবং পরিশ্রমী জাতির জন্য গর্বিত।

কঠিন ও কষ্টের সময়ে সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলতা অর্জিত হয়। আমরা মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য লাভ করেছি। ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে আমরা। এতে করে নতুন উন্নয়নের কাঠামো আরও দ্রুত নির্মাণ হবে এবং গুণগতমান সম্পন্ন উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে চীন সবার আগে মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে। বিদায়ী বছরে চীনের জিডিপিতে শতাধিক ট্রিলিয়ন ইউয়ান নতুন যোগ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। খাদ্যশস্যের উৎপাদনের পরিমাণ টানা ১৭বছর ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘থিয়ানওয়েন এ’, ‘ছাংএ্য ৫’, ‘ফেনতৌচে’সহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে অবাধ বাণিজ্য বন্দরের নির্মাণ শুরু হয়েছে। আমরা ভয়াবহ বন্যা সমস্যার সমাধান করেছি। অসংখ্য সৈন্য ও জনসাধারণ যৌথভাবে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনতে পেরেছে। আমি এ বছরে ১৩টি প্রদেশ ও শহর পরিদর্শন করে দেখেছি যে,সবাই ভালভাবে মহামারী প্রতিরোধের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছেন। সকলেই দ্রুত কাজ ও উত্পাদন পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছেন। সার্বিকভাবে উদ্ভাবনের চেষ্টা করেছেন। চীনের প্রতিটি মানুষ আত্মবিশ্বাসের বলে বলীয়ান ও দেশটি অসংখ্য চালিকাশক্তিতে ভরপুর বলে এমন দৃশ্য আমার চোখে পড়েছে।

২০২০ সালে সার্বিকভাবে স্বচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার পরিকল্পনার ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আমরা চরম দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টা করেছিলাম। আট বছরের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার পর বর্তমান মানদন্ডে গ্রামের প্রায় ১০কোটি দরিদ্র বাসিন্দা চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছেন। এর মাধ্যমে ৮৩২টি দরিদ্র জেলা দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমি চীনের ১৪টি চরম দরিদ্র এলাকা পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় বাসিন্দারা পাহাড়সম দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পরিশ্রম করেছেন। চরম দারিদ্রবিমোচন কাজের কর্মীগণ অনেক অবদান রেখেছেন। তাঁদের গল্প সবসময় আমার মনে থাকবে। তবে, আমাদের কখনো শিথিল ও অলস হলে চলবে না। কঠোর পরিশ্রমকে আগামিতেও অব্যাহত রাখতে হবে। গ্রামকে সমৃদ্ধ করে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে।

বিদায়ী বছরে আমরা শেনচেন অর্থনৈতিক বিশেষ এলাকা প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী, এবং শাংহাইয়ের ফুতং উন্মুক্ত এলাকা প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছি। দক্ষিণ চীন সাগরের তীরে অবস্থিত শেনচেন ও হুয়াংফু নদীর তটে অবস্থিত ফুতং এলাকা পরিদর্শন করার সময় আমি বিভিন্ন বিষয় অনুভব করেছিলাম। প্রথমে নির্মিত উন্মুক্ত ও উন্নয়ন এলাকাসমূহ বর্তমান চীনের আদর্শে পরিণত হয়েছে। অনুসন্ধান ও উদ্ভাবন এলাকাগুলো বর্তমানে দিকনির্দেশকের কাজ করছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ উন্নয়নের বিস্ময়কর ঘটনার জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে অবশ্যই আরও গভীরভাবে সংস্কার ও বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ উন্নত করবে চীন।

নৈতিক লোকেরা একাকী বোধ করে না, গোটা বিশ্ব একটি বৃহৎ পরিবার। এক বছরের কঠিন ও কষ্টকর সময় অতিবাহিত করার মাধ্যমে আমরা মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির তাত্পর্য আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি উপলব্ধি করছি। আমি আন্তর্জাতিক সমাজের বিভিন্ন নতুন ও পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে সংলাপ করেছি এবং অনেক ক্লাউড সম্মেলনে অংশ নিয়েছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করেছি যৌথভাবে মহামারী প্রতিরোধ করা নিয়ে। মহামারী প্রতিরোধের দায়িত্ব স্থায়ী এবং ভারী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের উচিৎ একসঙ্গে মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা এবং আরও সুন্দর পৃথীবি গড়ে তোলা।

২০২১ সাল হলো সিপিসি প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ সিপিসি’র প্রথম উদ্দেশ্যটি গত ১০০ বছরে কখনও পরিবর্তন হয় নি। শাংহাইয়ের শিখুমেন থেকে চিয়াস্যিংয়ের নানহু পর্যন্ত যখন সিপিসিকে লাল তরীর সঙ্গে তুলনা করা হতো,তখন থেকেই তার সদস্যগণ জনগণের স্বার্থ ও জাতির আশাকে নিজের দায়িত্ব হিসেবে কাঁধে তুলে নিয়েছে।সিপিসি কঠিন বিপদ ও কষ্টকর সময় কাটিয়ে চীনা জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে স্থিতিশীলভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মহা এক জাহাজে পরিণত হয়েছে আজ। আমরা জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে সবসময় পার্টির প্রাথমিক উদ্দেশ্য বহাল রাখবো এবং নিজের দায়িত্ব পালন করবো, যাতে চীনা জাতির মহা সমৃদ্ধি বাস্তবায়ন করা যায়। গত শতকে  এসব ছিল আমাদের অর্জন।

আগামি শতকে আমরা সার্বিক সমাজতান্ত্রিক ও আধুনিক চীন গড়ার ‘জাতীয় নতুন পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করব। উন্নয়নের পথ সব সময়ই সুদীর্ঘ ও পিচ্ছিল হয়। শুধুমাত্র পরিশ্রম করে ও চড়াই-উৎরাই পারি দিয়ে একে অর্জন করতে হয়। আমরা পরিশ্রম করতে থাকবো এবং আরও সুন্দর সাফল্য অর্জন করবো।

এখন আলোকমালায় সজ্জিত হচ্ছে পুরো দেশ। পরিবারগুলোর পুনর্মিলন হচ্ছে। নতুন বছর আসছে। এমন শুভ মুহূর্তে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ মাতৃভূমি এবং এর জনগণের নিরাপদ জীবন কামনা করছি! সম্প্রীতিময় ও সুখী জীবনের কামনা করছি!

সবাইকে ধন্যবাদ!

(ছাই/এনাম/ওয়াং হাইমান/সুবর্ণা)