চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তি দু’পক্ষ এবং বিশ্বের জন্য কল্যাণকর হবে
2021-01-07 14:38:43

 

জানুয়ারি ৪: গত ৩০ ডিসেম্বর জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকখোঁ, ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট মিশেল এবং ইউরোপীয় কমিশন (ইসি)-র প্রেসিডেন্ট ভন ডের লেইনের সঙ্গে এক ভিডিও-বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বৈঠকে দু’পক্ষ চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তির আলোচনা সময়মতো শেষ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে।   

৭ বছরে ৩৫ দফা বৈঠকের পর, ২০২০ সালের শেষ দিকে এসে চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তি আলোচনা শেষ হয়। এই আলোচনার প্রক্রিয়ায় সাসপেন্স ছিল, কখনও কখনও অগ্রগতি হয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে কম। তবে, শেষ ভাল মানে সবই ভাল। দু’পক্ষ যদি নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকে এবং একে অপরকে কোনো ছাড় দিতে নারাজি হয়, তবে কোনো আলোচনা সামানে আগায় না বা কোনও  মতৈক্যেও পৌঁছানো সম্ভব হয় না। যেকোনো চুক্তির উদ্দেশ্য পারস্পরিক কল্যাণ। এক পক্ষের জন্য কল্যাণকর হলে আলোচনার আসল উদ্দেশ্য সাধিত হয় না।  চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তি হবে পুরোপরি দু’পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টার ফল এবং দু’পক্ষের জন্যই কল্যাণকর।

চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয় এখনও প্রকাশ হয়নি। তবে আলোচনার এতো লম্বা সময় থেকে বোঝা যায় যে, এটি নিঃসন্দেহে একটি উচ্চমানের দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগচুক্তি হবে। অর্থ, জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুত্ এবং নতুন জ্বালানিচালিত গাড়িসহ বিভিন্ন খাতে চীন কতোটুকু উন্মুক্ত হবে, সেটা ইউরোপ দেখতে চায়। চীনের ইউরোপীয় চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান ইয়োর্গ ওয়াকি জার্মানির সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, এই চুক্তি ইউরোপের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, এই চুক্তি ইউরোপে আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সহায়ক হবে।

২০২০ সালের অক্টোবরে ইইউ’র ২৭টি দেশ এবং ইউরো অঞ্চলে কর্মচ্যূতির হার ছিল যথাক্রমে ৭.৬ ও ৮.৪ শতাংশ। সেই সঙ্গে, এই দুই অঞ্চলে ২০২০ সালের অর্থনীতি যথাক্রমে ৭.৪ ও ৭.৮ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারী ও বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদের দ্বৈত আঘাতে জর্জরিত ইইউ। এ প্রেক্ষাপটে ১৪০ কোটি মানুষের চীনের সঙ্গে বিনিয়োগচুক্তি হবে ইউরোপের জন্য খুবই তাত্পর্যপূর্ণ।

চীন ও ইউরোপের পারস্পরিক উন্মুক্তকরণ বৃদ্ধি ইউরোপ ও চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কল্যাণকর হবে। উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা চীনা অর্থনীতির জন্য ব্যাতিক্রমী কোনো ঘটনা নয়। ইইউ’র বাজারে প্রবেশ করতে সবুজ উত্পাদন এবং প্রকল্পের বিডিংয়ের স্বচ্ছতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানদণ্ড বাড়াবে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি, ইইউ’র অনেক শিল্পের মানদণ্ড ও তত্ত্বাবধানের নিয়ম বিশ্বমানের। এ কারণে, ইউরোপের সঙ্গে সহযোগিতা চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাশক্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।  

চীন-ইউরোপ বিনিয়োগচুক্তি বহুপক্ষবাদীদের জন্য ভাল খবর। আর যারা বিশ্বকে পুনরায় স্নায়ুযুদ্ধের দিকে টেনে নিতে চান, তাদের জন্য হতাশ হবার মতো ঘটনা হবে। রোডিয়াম গ্রুপের ইউরোপ ও চীনা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নোয়াহ বার্কিন বলেন, ‘ইইউ এক অত্যন্ত স্পষ্ট সংকেত পাঠিয়েছে। আর তা হলো, চীনের ইস্যুতে তারা নিজের পথে এগিয়ে যাবে।’ ব্রিটেনের ‘দি গার্ডিয়ান’ এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, চুক্তির সাহায্যে চীন ও ইউরোপের মতো দুটো বড় অর্থনৈতিক সত্ত্বা পরস্পরের আরও কাছাকাছি আসবে।  আর্থ-বাণিজ্যিক পুঁজি বিনিয়োগ খাতে চীন ও ইউরোপের সহযোগিতা জোরদার মানে অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ এবং উদীয়মান অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে হাতে হাত রেখে অর্থনীতির বৈশ্বিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)