একজন তরুণ শিল্পী যিনি বিড়ালের পেইন্টিং দিয়ে যোগাযোগের সেতু নির্মাণ করেছেন
2021-01-11 16:30:45

সম্প্রতি তুরস্কের আনাদোলু নিউজ এজেন্সি তরুণ চীনা শিল্পী লেই চুয়ান ই’র গল্প তুলে ধরেছে। তিনি চিত্রকলা ও শিল্পের বৈশিষ্ট্য একীভূত করতে শিল্পকে বাহক হিসাবে ব্যবহার করেছেন এবং দুই দেশের জনগণের গল্প প্রচার করেছেন। সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপের সংবাদদাতার এক সাক্ষাত্কারে লেই চুয়ান ই ইস্তাম্বুলের ‘বিড়াল শহরের’ মাধ্যমে তাঁর সৃজনশীল মন ও যাত্রার কথা বলেছেন।

 

ছোটবেলা থেকেই লেই চুয়ান ই তার বাবার মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং ধীরে ধীরে চিত্রশিল্পের পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে তিনি আরও পড়াশোনার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যান। আনাদোলু নিউজ এজেন্সি কেন একজন তরুণ চীনা চিত্রশিল্পীর দিকে মনোযোগ দিলো? কারণ, ইস্তাম্বুল ‘বিড়ালের শহর’ হিসেবে পরিচিত। লেই ছুয়ান ই ইস্তাম্বুলে বিড়ালের ছবি আঁকার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। বিড়ালের ছবি আঁকার মাধ্যমেই তিনি অনেক মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। লেই চুয়ান ই বলেন, তিনি আসলে ইস্তাম্বুল আসার আগে বিড়ালের ছবি আঁকার কাজ শুরু করেছিলেন। তবে, এখানে আসার পর তিনি দেখতে পান যে, স্থানীয়রা বিড়াল বেশ পছন্দ করে। এমনকি প্রিয় ‘নেট সেলিব্রিটি বিড়াল’ স্মরণে একটি মূর্তিও তৈরি করেছে। ধীরে ধীরে স্থানীয়দের বিড়াল ও ছোট এই প্রাণীর প্রতি স্নেহের সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয়ে লেই চুয়ান ই বিড়ালের প্রেমে পড়ে যান এবং বিড়াল লালনপালন শুরু করেন।

 

এক সময় বিড়াল তার ছবির ব্রাশের অন্যতম ‘হিরো’ হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ইস্তাম্বুল আসার পরে, ‘বিড়াল সিটির’ কারণে আমি সত্যিই বিড়ালগুলো পছন্দ করেছি এবং আমি নিজেই বিড়াল লালন-পালন শুরু করি। বিড়ালরা তুর্কদের অনুভূতি প্রতিফলিত করতে পারে। আমার মনে হয় পেইন্টিংয়ের বিড়ালগুলো এটি প্রতিফলিত করতে পারে। হতে পারে, ছবিগুলো দিয়ে বিড়ালের মাধ্যমে আমার অনুভূতি প্রকাশ পায়।

 

লেই চুয়ান ই বলেন, তুরস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চীনা চিত্রকলার সাথে সম্পর্কিত একটি ইভেন্টে তাঁর বিড়ালের কাজগুলো অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলেছিল। ২০১৯ সালে, লেই চুয়ান ই ও তাঁর বাবা- যিনি নিজেও একজন চিত্রশিল্পীও ছিলেন, চীনা চিত্রকলার উপর বক্তৃতা রাখেন। বক্তৃতা শুরু হলে, চীনা চিত্রকলার ইতিহাস কিছুটা বিরক্তিকর মনে হয়েছিল। আলোচনার বিষয়বস্তু বক্তৃতাকে নিস্তেজ করে তুলেছিল। কিন্তু, যখন লেই চুয়ান ই’র বিড়ালের স্লাইডগুলোতে দেখানো হয়, তখন এই জীবন্ত চিত্রগুলো তত্ক্ষণাত্ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ জাগিয়ে তোলে। তিনি বলেন,

বিড়ালের ছবি শিল্পের সীমানা ছাড়িয়ে যায়। এটি এমন একটি ভাষা তৈরি করতে পারে যা আরও বাধা-মুক্ত এবং সহজেই বোঝা যায়।

 

বিড়াল আঁকার প্রক্রিয়ায় লেই চুয়ান ই চীন ও তুরস্কের সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক কারণগুলো সমন্বিত করে একের পর এক প্রিয় শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন। "চীন-তুরস্ক ফ্রেন্ডশিপ ক্যাট" শীর্ষক একটি কাজ ইস্তাম্বুলে চীনা কনস্যুলেট জেনারেলের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে; যা প্রচারমূলক সামগ্রীতে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে ছাপা হয়েছিল।

 

দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে রাষ্ট্র দুটির জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতি। লেই চুয়ান ই বিশ্বাস করেন, সংস্কৃতি ও শিল্পের কোনও সীমানা নেই এবং এটি একটি ভাল ক্যারিয়ার হিসাবে সব দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন,

সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক বিনিময় আসলে একটি বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ ও কার্যকর সংলাপের ক্ষেত্র তৈরি করে। সবাই তা খুব পছন্দ করে। উদাহরণস্বরূপ, আমি এই বিড়ালগুলো আঁকলাম। আমি বিশ্বাস করি, যে কোনও দেশের লোকেরা এগুলো পছন্দ করবে। লেই চুয়ান ই বলেন, শিল্প সৃষ্টি করার সময় তিনি শিল্প গবেষণা ও তত্ত্বের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।

 

 

বর্তমানে তিনি "অটোমান পেইন্টিংসের ইতিহাস" বইটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করছেন। দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের জন্য কিছু বাস্তব কাজ করেছেন তিনি। লেই বলেন,

বর্তমানে শৈল্পিক সৃষ্টির পাশাপাশি, "অটোমান পেইন্টিংসের ইতিহাস" অনুবাদ করছি। এ কাজে আমার এখনও অনেক শক্তি আছে। সেই সঙ্গে, আমি এখনও স্থানীয় শিল্প ও মানবিকতার পরিচয় করিয়ে দিতে কিছু শিল্প-সম্পর্কিত নিবন্ধ লিখছি।