ফুচিয়ান লংথান গ্রাম: প্রাচীনকালীন স্থাপত্যের রূপান্তর
2021-01-16 19:01:20

ফুচিয়ান লংথান গ্রাম: প্রাচীনকালীন স্থাপত্যের রূপান্তর_fororder___172.100.100.3_temp_9500041_1_9500041_1_1_13b739b7-dfaf-4c84-a396-21098bc7bd67

ফুচিয়ান প্রদেশের নিংদ্যে শহরের ফিংনান জেলার লংথান গ্রাম পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত। কয়েক বছর আগে গ্রামটি বিখ্যাত ছিল না। গ্রামটিতে মিং ও ছিং রাজবংশ আমলের তথা কয়েক শতাধিক বছর আগের প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে। গ্রামে একসময় শুধুমাত্র বুড়োবুড়ি ও শিশুদের বাস ছিল। বাকিরা শহরে গিয়ে কাজ করতেন। কিন্তু বর্তমানে লংথান গ্রাম চীনের ইন্টারনেট সেলিব্রিটি গ্রাম হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে। আগে যারা বাইরে কাজ করতেন, তাদের অনেকে গ্রামে ফিরে এসেছেন এবং আরো অনেক নতুন বাসিন্দা আসি আসি করছেন। ছুটির সময় প্রচুর পর্যটক গ্রামটিতে ভ্রমণে আসেন। এ সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা মাদাম ফান বলেন, “আমি এখানে পর্যটন ব্যবসা করি। আমার ব্যবসা ভাল, প্রতি মাসে আমার আয় যথেষ্ট। ছুটিতে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও ফিরতে চান গ্রামে।”

মাদাম ফান হলেন লংথান গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা। আগে তিনি বাইরে ব্যবসা করতেন। গত মে মাসে তিনি লংথান গ্রামে ফিরে এসে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বলেন, প্রাচীন সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে এখানে পর্যটন শিল্প উন্নত হয়েছে।

যদিও লংথান গ্রাম শুধুমাত্র একটি ছোট গ্রাম, তবুও গ্রামটিতে প্রচুর মিং বা ছিং রাজবংশ আমলের স্থাপত্য এবং অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রয়েছে। যেমন, চীনের জাতীয় অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার স্যিফিং অপেরা ও ফুচিয়ান প্রাদেশিক পর্যায়ের অবৈষয়িক উত্তরাধিকার হলুদ মদ উত্পাদিত হয় এখানে। সেজন্য এখানে সংস্কৃতিভিত্তিক পর্যটন উন্নয়নের প্রাকৃতিক শর্ত রয়েছে। লংথান গ্রামে সংস্কৃতিভিত্তিক পর্যটনের শুরুটা কখন হয়েছিল? এ সম্পর্কে লংথান গ্রামের প্রথম সম্পাদক স্যিয়া স্যিং ইয়ং বলেন,

“আমরা প্রাচীন সংস্কৃতি উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রাচীনকালের স্থাপত্য রূপান্তরের পাশাপাশি সুরক্ষার ব্যবস্থা করি। আমরা পুরানো স্থাপত্য সুরক্ষার পাশাপাশি পর্যটনশিল্প উন্নয়ন করি।”

জানা গেছে, এখানে ব্যবসায়ীরা খুবই কম দামে পুরানো স্থাপত্য অধিগ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু শর্ত হচ্ছে, তাঁদেরকে পুরানো স্থাপত্যের সংশোধন ও সুরক্ষার খরচ দিতে হবে। ফুচৌ শহরের ৬১ বছর বয়সী বাসিন্দা লি ইয়ং বন্ধুর আমন্ত্রণে লংথান গ্রামে ভ্রমণ করেন। তিনি এ ধরণের উন্নয়নের পদ্ধতি অনেক পছন্দ করেন। তিনি গ্রামটির পরিবেশ অনেক পছন্দ করেন। সেজন্য তিনি একটি প্রাচীন স্থাপত্যভবন ভাড়া নিয়ে পারিবারিক হোটেল খুলে বসেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

ফুচিয়ান লংথান গ্রাম: প্রাচীনকালীন স্থাপত্যের রূপান্তর_fororder___172.100.100.3_temp_9500041_1_9500041_1_1_2122c9aa-2753-4f0c-b0af-404fe640569e

“এ আইডিয়া আমি পছন্দ করি। যদিও এ বছর মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে, তবুও এ আইডিয়ায় গড়ে তোলা ব্যবসায় আমাদের ক্ষতি বেশি না। কারণ, ভাড়ার খরচ বেশি না। আমার কোনো চাপ ছিল না। আমি স্বেচ্ছায় স্থাপত্য মেরামত করি, কারণ মুনাফা ছাড়াও আমি এ প্রাচীন স্থাপত্য পছন্দ করি।”

লিন চেং লু হলেন নানফিং জেলার ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি গ্রামের প্রধান পরিকল্পনাকারী। তিনি ২০১৪ সালে ইতালিতে গিয়ে প্রদর্শনে অংশ নেন। তিনি ইতালিতে দেখেছেন নানা জায়গায় শতাধিক বছরেরও বেশি প্রাচীন স্থাপত্য দেখা যায়। তখন থেকে তিনি চীনে প্রাচীন স্থাপত্য মেরামত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, তিনি ও তাঁর টিম লংথান গ্রামে নতুন অর্থনৈতিক ধারণা এনে দিয়েছেন, স্থানীয় বৈশিষ্ট্যময় শিল্প উন্নয়ন করেছেন।

লংথান গ্রামের একটি পুরানো স্থাপত্যের দেয়ালে সুন্দর সুন্দর ছবি দেখা যায়। ছবিগুলোয় প্রাচীনের সঙ্গে নতুনের মিল রয়েছে।  লংথান গ্রামে চিত্রশালা আছে। বাসিন্দারা বিনামূল্যে সেখানে আঁকা শিখতে পারেন। চিত্রশালার দেয়ালে বাসিন্দাদের নিজেদের আঁকা ছবি আছে। এ সম্পর্কে লিন চেং লু বলেন,

“৭০ বছর বয়সী এক ম্যাডামের ছবিও আছে। তিনি কোনো পেশাদার প্রশিক্ষণ নেননি। কিন্তু তাঁর ছবি খুবই সুন্দর। আরেকটি ছবি এঁকেছে একটি শিশু। তার ছবিতে আত্মবিশ্বাস দেখা যায়।”

প্রত্যেক মানুষই শিল্পী। এটি হলো লিন চেং লুর ধারণা। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে বিশ্বাস করান, তাদের নিজেদের শিল্প সৃষ্টি ক্ষমতা আছে।

ইন্টারনেটে মাধ্যমে গ্রামটির বাসিন্দারা এখন সহজে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তাঁরা লাইভের মাধ্যমে গ্রামের শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে বাইরের দুনিয়াকে পরিচয় করিয়ে দেন। এভাবেই গ্রামটির পর্যটনশিল্প হয়ে উঠেছে উন্নত।

লংথান গ্রামের বাসিন্দারা ইতোমধ্যেই দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। তাঁদের জীবন আগের তুলনায় সুন্দর হয়েছে। বস্তুত, চীনের দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে শুধু একটি উপায়ে নয়, বরং বিভিন্ন উপায়ে।