ব্যবসা-বাণিজ্য
2021-01-18 12:37:13

সম্প্রতি চীনের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্ম সম্মেলনে বলা হয়, শিল্প ও সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হচ্ছে নতুন উন্নয়ন কাঠামো নির্মাণের ভিত্তি।

 

ভবিষ্যতে চীন কীভাবে নিরাপদ ও উচ্চ কার্যকর শিল্প ও সরবরাহ চেইন তৈরী করবে? সম্প্রতি চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী সিয়াও ইয়াছিং এক সাক্ষাত্কারে এর উত্তর দিয়েছেন। তাহলে এখন তাঁর উত্তর জানিয়ে দেই আপনাদের।

ব্যবসা-বাণিজ্য

চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী সিয়াও ইয়াছিং

মন্ত্রী সিয়াও বলেন, বড় নির্মাণ শিল্পের রাষ্ট্র হিসেবে চীনের স্বাধীন ও সম্পূর্ণ শিল্প ব্যবস্থা আছে। শিল্পের মাত্রা ও আনুষঙ্গিক প্রাধান্য সুস্পষ্ট। শিল্প ও  সরবরাহ চেইনের তুলনামূলক শক্তি ও সহনশীলতা আছে। কিন্তু এখনও ভিত্তি দৃঢ় নয় এবং মানও উঁচু হয়নি। পরবর্তীতে শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ভিত্তির অগ্রগতি এবং শিল্প ও  সরবরাহ চেইনের আধুনিকায়ন’কে কেন্দ্র করে, গুরুত্বপূর্ণভাবে তিনটি বিষয়ে কাজ করবে।

১. শিল্পের ভিত্তি পুনরায় তৈরী করার প্রকল্প কার্যকর করে, শিল্পের দূর্বল লিংক’কে কেন্দ্র করে মৌলিক প্রযুক্তি ও পণ্যের মূল সমস্যাগুলি পরিকল্পিতভাবে মোকাবেলা করে, সার্বিক গুণগতমানের প্রশাসন নিশ্চিত করে, কিছু সংখ্যক রাষ্ট্রীয় নির্মাণ শিল্পের সৃজনশীল কেন্দ্র নির্মাণ করবে।

 

২. ঐতিহ্যবাহী শিল্পায়নের উচ্চমান সম্পন্ন, বুদ্ধিমান ও সবুজ রূপান্তর, এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে, নতুন তথ্য প্রযুক্তি ও নির্মাণ শিল্পের গভীর সংমিশ্রন দ্রুততর করে, শৈল্পিক প্রধান ক্ষেত্রকে গভীরতর করার পাশাপাশি কিছু সংখ্যক নির্মাণ শিল্পগ্রুপ তৈরী করবে।

 

৩. বড় ধরনের প্রতিষ্ঠান আরও শক্তিশালী ও শ্রেষ্ঠ করতে সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি মাঝারি ও ছোট আকারের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিশেষায়নের ক্ষমতা উন্নীত করতে সমর্থন দেবে।

 

বিদেশি সংস্থাগুলি চীনে ব্যবসায়ের আরও সুযোগ অন্বেষণ করছে

বন্ধুরা, চীনে মহামারী চলাকালেও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে এমনটা বিরল। ২০২০ সালে চীনে বিদেশি অর্থের আসল ব্যবহার ১৪,০০০কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা একটি নতুন রেকর্ড। চীনে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার বলছেন, চীন নতুন উন্নয়ন-কাঠামো গড়ে তুলছে ও বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় দেশটিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার সুযোগ আরও বাড়ছে।

 

‘২০২০ সালে আমরা চীনে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়েছি এবং গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণ করেছি’—বললেন জার্মানির নর-ব্রেমসি রেলপথ গ্রুপের চীনা অংশের নির্বাহী পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক হান চু জুন। তিনি বলেন, চীনে মহামারী মোকাবিলায় মহাসাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশটির অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়েছে। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় চালিকাশক্তি যুগিয়েছে এবং চীনে বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উত্সাহিত করছে।

 

চীনের তৃতীয় আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় নর-ব্রেমসি গ্রুপের রেলগাড়ি ডিজিটাইজিং পণ্য, নতুন প্রজন্মের ইঞ্জিন এবং ধুলো অপসারণ, জীবাণুমুক্তকরণ, অ্যান্টি-ভাইরাস এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম প্রদর্শিত হয়। হান বলেন, চীনের পরিবহন অবকাঠামো ব্যবস্থার অনেক উন্নতি ঘটেছে। দ্রুতগতির রেলপথ ও শহুরে রেলপরিবহনের দিক দিয়ে চীন বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। নর-ব্রেমসি গ্রুপ এতে বিরাট উন্নয়নের সুযোগ পেয়েছে। চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনায় চীন অবকাঠামো নির্মাণের নতুন প্রকল্প রাখবে। চীন পরিবহন খাতে শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠছে। নর-ব্রেমসি গ্রুপ নিজের প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে চীনের রেলপরিবহন খাতে অংশ নেবে।

 

নিউজিল্যান্ডের দি ল্যান্ড দুগ্ধজাত কোম্পানির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সিইও শেং ওয়েন হাও বলেন, চীনের উচ্চমানের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের জন্য, চীনে দি ল্যান্ডের রফতানিকৃত দুধের পরিমাণ সপ্তাহে ৩হাজার থেকে বেড়ে ৮০হাজার কনটেইনারে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে কোম্পানিটি অনলাইনে প্রতি তিন মিনিটে ২৮কনটেইনার দুধ বিক্রয় করেছে।

 

বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট পরিষেবা ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সিবিআরই’র চীনের গবেষণা বিভাগের পরিচালক স্যিয়ে ছেন বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চীনে বিদেশি অর্থের প্রকৃত ব্যবহার গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬.৩ শতাংশ বেশি ছিল। এর মধ্যে পরিষেবা শিল্পে বিদেশি অর্থের প্রকৃত ব্যবহার বৃদ্ধি পায় ১৬.১শতাংশ। আর উচ্চপ্রযুক্তি পরিষেবা খাতে এর বৃদ্ধির হার ৩১.৬ শতাংশ। এতে চীনা বাজারের বিরাট সুপ্তশক্তি প্রতিফলিত হয়। স্যিয়ে বলেন, তাঁর কোম্পানি ২০২০ সালে চীনে নতুন কার্যালয় ও কৌশলগত উপদেষ্টা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। কোম্পানিটি চীন সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে শহর উন্নয়নের কৌশল, ট্রাফিক ওরিয়েন্টেড উন্নয়ন ও শিল্পসম্পদ আমদানি খাতে পরিষেবা দিয়েছে।

 

ক্যানন কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও ওজাওয়া হিদেকি মনে করেন, চীন সার্বিকভাবে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ আইন ও সংশ্লিষ্ট নিয়ম কার্যকর করার মাধ্যমে নতুন উন্নয়নের কাঠামো গড়ে তুলেছে। চীনে বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ বৃদ্ধির কারণে বিদেশি প্রতিষ্ঠাগুলো আরও ফেয়ার, স্বচ্ছ ও সুবিধাজনক পরিবেশে এদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে পারছে। তিনি বলেন, চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন-ধারণায় পরিবর্তন, ক্যাননের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

 

  “এক অঞ্চল এক পথ” মহামারী চলাকালে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উষ্ণ স্রোতের কাজ করেছে

ব্যবসা-বাণিজ্য_fororder_src=http___n.sinaimg.cn_xj_94_w1080h614_20190313_3N89-hufnxfm9434027&refer=http___n.sinaimg

সম্প্রতি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ দেশগুলোতে চীনের অ-আর্থিক সরাসরি বিনিয়োগ ছিল ১৫.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ২৪.৯ শতাংশ বেশি। মহামারীর পরিস্থিতিতে এই পরিসংখ্যান পুরোপুরিভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’-এর শক্তিশালী সহনশীলতা ও প্রাণশক্তির প্রতিফলন হয়েছে। পাশাপাশি চীনের ইতিবাচক কার্যকলাপ ও বড় রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন তুলে ধরেছে।। বিশ্ব অর্থনীতির ‘শীতকাল-এর জন্য উষ্ণ স্রোতের কাজ করেছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য_fororder_下載

প্রথমত, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ মহামারী প্রতিরোধের জন্য জীবনের রাজপথ সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের অংশীদারগণ মহামারীতে একে অপরকে সমর্থন দিয়ে সংহতির মাধ্যমে মহামারী মোকাবিলা করার পাশাপাশি অভিন্ন উন্নয়ন করেছে। বিশ্ব মহামারী প্রতিরোধে বৃহত্তম সরঞ্জাম সরবরাহ দেশ হিসেবে চীন পর পর দেড়শ’রও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২শ’ ৮০টিরও বেশি জরুরি মহামারী প্রতিরোধ সরঞ্জাম সহায়তা দিয়েছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য_fororder_u=2420886297,872597048&fm=15&gp=0

দ্বিতীয়ত, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বৃদ্ধির রাজপথ তৈরী করেছে। মহামারী চলাকালে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রকাল্প বন্ধ হয়নি, বরং দ্রুতভাবে উত্পাদন পুনরুদ্ধার করেছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক কোরিডরের প্রথম বড় ধরনের ট্র্যাক নির্ভর যানবাহন প্রকল্প—পাকিস্তান লাহোর কমলা লাইনের প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়ে পাকিস্তানের ‘পাতাল রেল যুগ’ শুরু করেছে। একই সময় চীন অনেক ‘এক অঞ্চল, এক পথ, অংশীদার দেশের সঙ্গে মাল পরিবহনে সবুজ রাজপথ এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগের দ্রুত রাজপথ  প্রতিষ্ঠা করেছে। ফলে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

 

তৃতীয়ত, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ এর অধীনে ‘উইন-উইন সেতু’ প্রতিষ্ঠা করেছে। গত এক বছরে চীন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সহযোগিতামূলক অংশীদারদের সঙ্গে দ্রুততার সাথে আঞ্চলিক অর্থনীতির একীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে। বেশ কয়েকটি দলিল স্বাক্ষর করেছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য নতুন চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। বর্তমানে  ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সহযোগিতা ‘সিল্ক রোড ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্য’, ডিজিট্যাল পরিবহন করিডোর নির্মাণ, আন্তঃসীমান্ত অপটিকল কেবল তথ্য চ্যানেল নির্মাণ, চীন-আসিয়ান তথ্য বন্দর নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক ফলপ্রসূ হয়েছে।

 

(প্রেমা/এনাম)