০৪১৯ব্যবসা-বাণিজ্য-আলিবাবা কিনে নিল বাংলাদেশের অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ‘হাংরিনাকি’
2021-04-19 10:07:04

গত ১৮ মার্চ আলিবাবা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান দারাজ বাংলাদেশের অনলাইন ফুড ডেলিভারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হাংরিনাকি’কে কিনে নিয়েছে।  

০৪১৯ব্যবসা-বাণিজ্য-আলিবাবা কিনে নিল বাংলাদেশের অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ‘হাংরিনাকি’_fororder_微信圖片_20210419100805

ওই দিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দারাজ ও হাংরিনাকি একীভূত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে উভয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্ণধাররা।

 

সংবাদ সম্মেলনে দারাজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক এবং হাংরিনাকি’র প্রধান নির্বাহী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা এডি আহমেদসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এখন থেকে হাংরিনাকির সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেছে দারাজ। তবে এতে হাংরিনাকির বর্তমান ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না। হাংরিনাকির বর্তমান কর্মীরাই কাজে নিয়োজিত থাকবেন। সরাসরি দারাজের পরিচালনায় পৃথক ও স্বতন্ত্র ফুড প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচালিত হবে হাংরিনাকি।

 

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালে দারাজকে কিনে নিয়েছিল চীনা ই–কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা।

 

দারাজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদল হক বলেন, দারাজের ফুড ব্যবসা নেই। ফুড ব্যবসায় যেতে হাংরিনাকি কেনা হয়েছে। তা ছাড়া হাংরিনাকি নামটাও দারাজকে আকর্ষণ করেছিল। দারাজ যেমন ৬৪জেলায় আছে, হাংরিনাকিও ৬৪জেলায় থাকবে।

০৪১৯ব্যবসা-বাণিজ্য-আলিবাবা কিনে নিল বাংলাদেশের অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ‘হাংরিনাকি’_fororder_微信圖片_20210419100821

দারাজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ক্রেতাদের জন্য আমরা একটি ওয়ান স্টপ সল্যুশন হতে চাই। আর স্বাভাবিক পদক্ষেপ হিসেবেই ফুড ডেলিভারি ব্যবসায় প্রবেশ করেছি। একটি বিশ্বস্ত কাস্টমার বেজ নিয়ে হাংরিনাকি বাংলাদেশে ফুড ডেলিভারি ব্যবসায় পথিকৃৎ।

 

তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায় থেকে নিজেদের ফুড ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করার চেয়ে, হাংরিনাকি অধিগ্রহণ করা শ্রেয়। অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা হাংরিনাকিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব।

 

হাংরিনাকির প্রধান নির্বাহী এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা এডি আহমেদ বলেন, এ অধিগ্রহণের মাধ্যমে বোঝা যায় আমাদের ই-কমার্স খাত একটি আশাব্যঞ্জক অবস্থানে রয়েছে। এছাড়াও দেশীয় স্টার্ট-আপ এবং উদ্যোক্তাদের জন্য এটি সুখবর বয়ে আনবে। এমন অধিগ্রহণের দৃষ্টান্তর বাজারে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করবে এবং অর্থনীতিকে গতিশীল রাখবে।

 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফুড ডেলিভারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হাংরিনাকি। দেশের ৫টি শহরে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট, ক্লাউড কিচেন এবং হোম কিচেন নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি হাজার হাজার গ্রাহককে প্রতিদিন পৌঁছে দিচ্ছে সুস্বাদু খাবার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার ও নারায়ণগঞ্জে ৫লাখেরও বেশি মানুষ এখন তাদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার অর্ডার করতে হাংরিনাকি ব্যবহার করে থাকেন।

 

অন্যদিকে, দারাজ বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ স্থানীয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস। দারাজ ক্রেতা ও বিক্রেতার সংযোগ ঘটানোর মাধ্যমে লক্ষাধিক বিক্রেতার ক্ষমতায়নে কাজ করছে। শতাধিক ক্যাটাগরির আওতায় কোটিরও বেশি পণ্য পাওয়া যায় দারাজে, যার চাহিদা পূরণে প্রতিমাসে প্রতিষ্ঠানটি দেশের আনাচে-কানাচে ২০লাখেরও বেশি প্যাকেজ ডেলিভারি দিয়ে থাকে।

দেশটির প্রথম বিদ্যুত্-চালিত সাইক্লিং গাড়ীদলে অন্তর্ভূক্ত হয়ে খাদ্য ডেলিভারির নতুন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হিসেবে হাংরিনাকি পরিবেশ সংরক্ষণ করার চেষ্টা চালিয়ে শুণ্য কার্বন-মুক্ত বাস্তবায়ন প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। এরপর হাংরিনাকি বর্তমান ও নতুন পরিষেবা এবং সহযোগিতামূলক অংশীদার নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে রেস্তোঁরা, ক্লাউড রান্নাঘর ও পারিবারিক রান্নাঘর সেবাসহ তার পরিষেবার মাত্রা শতাধিক শহরে ছড়িয়ে দেয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার হাইপারলোকাল বিতরণের মূল অংশগ্রহণকারীতে পরিণত হয়।

০৪১৯ব্যবসা-বাণিজ্য-আলিবাবা কিনে নিল বাংলাদেশের অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ‘হাংরিনাকি’_fororder_微信圖片_20210419100825

দারাজের এবারের অধিগ্রহণ তাদের ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্য শিল্প দ্রুত উন্নয়নের প্রবণতার প্রতিফলন। এছাড়া অন্যান্য স্থানীয় নতুন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি এবং এ ধরনের অধিগ্রহণের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত।

 

মোটের উপর, হাংরিনাকি বাজার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। সমাজে দ্রুততার সাথে উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে  হাংরিনাকিসহ বিভিন্ন কোম্পানি উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার বড় সুযোগের প্রতীক।

 

তাহলে আলিবাবা কেন এ সময় কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে? আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা অনেক আগে বাংলাদেশের ডেলিভারি বাজারের প্রতি বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশ্বের জনসংখ্যা ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশের খাবার ডেলিভারি সেবার বাণিজ্য সুযোগ বেশ আকর্ষণীয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১লাখ অর্ডার হয়। বাজারের সুপ্তশক্তি বিরাট। হাংরিনাকি প্রতিষ্ঠিত হবার আগেই সদর দপ্তর বার্লিনে অবস্থিত ফুডপান্ডা বাংলাদেশে খাদ্য ডেলিভারি সেবা ব্যবস্থা চালু করে। এরপর সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক গোল্ডেন গেট ভেঞ্চারস ডেলিভারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান “সহজ”-এর জন্য ১৫মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করে।

 

“ফুডপান্ডা” ও “সহজ” এর মতো শক্তিশালী প্রতিযোগী ছাড়াও কমপক্ষে ৬টি স্থানীয় অ্যাপ অনলাইন ডেলিভারি বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নবাগতদের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে বাজারে স্থান পাওয়া সহজ নয়। আলিবাবার জন্য একটি পরিপক্ব কোম্পানি অধিগ্রহণ করা নতুন ডেলিভারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার চেয়ে অনেক সুবিধাজনক।

 

আলিবাবা জানায়, এবারের বিনিয়োগ ও অধিগ্রহণ শুধু আর্থিক কারণে নয়, বরং তার নিজের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা, কৌশলগত সমন্বয়ের ফলাফল এবং কোম্পানির সামগ্রিক মূল্য উন্নত করার ওপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য। আলিবাবা তার বিশ্বায়ন কৌশলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবারের অধিগ্রহণ দক্ষিণ এশিয়ায়  তার একটি পদক্ষেপ।

০৪১৯ব্যবসা-বাণিজ্য-আলিবাবা কিনে নিল বাংলাদেশের অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ‘হাংরিনাকি’_fororder_微信圖片_20210419100728

২০১২ সালে পাকিস্তানের বৃহত্তম বি-টু-সি ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। প্ল্যাটফর্মটি অনলাইনে ফ্যাশন বাণিজ্য থেকে সব ধরনের অনলাইন বাণিজ্যে উন্নত হয়েছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও নেপালে কোম্পানির ব্যবসা আছে। এসব দেশের ৫০কোটি জনসংখ্যা আছে। বিশেষ করে, পাকিস্তানে দারাজ সবচেয়ে জনপ্রিয় ইন্টারনেট কেনাকাটার প্ল্যাটফর্মগুলোর অন্যতম।

 

দারাজ’কে অধিগ্রহণ সম্পন্ন করার পর আলিবাবা প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্য, মোবাইল পেমেন্ট ও পণ্য স্থানান্তরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের নেতৃস্থানীয় ও অভিজ্ঞতা দারাজ’কে দিয়ে দেবে। যাতে দারাজের উন্নততর, পূর্ণাঙ্গ এবং একটি আন্তঃসীমান্ত  অনলাইন বাণিজ্য ব্যবস্থা তৈরী হয়। বর্তমানে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল (পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও নেপাল)-এর প্রায় ৭০ শতাংশ বাজারের শেয়ার আছে।

 

বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় আলিবাবা’র পরিষেবা প্রধানত বিনিয়োগের মাধ্যমে হয়। তবে, তার সম্প্রসারিত পরিকল্পনা খুবই কার্যকর।

 

প্রেমা/এনাম