বোআও এশীয় ফোরামে চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য ও অভিজ্ঞতাকে ফোকাস করা হয়েছে
2021-04-21 11:18:15

 

এপ্রিল ২১: গত ১৯ এপ্রিল বোআও এশীয় ফোরামের ২০২১ সালের বার্ষিক সম্মেলনে ‘২০৩০ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রম ও গ্রামের অবিরাম উন্নয়ন’ নিয়ে একটি শাখা ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারী অতিথিরা চীনা দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে মতবিনিময় করেন। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি মোকাবিলা করতে বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানান তারা। আজকের ‘সংবাদ পর্যালোচনা’য় আমি এই বিষয়ে আলোচনা করবো।

২০২১ সালের শুরুতে, চীন বিনীতভাবে বিশ্বের সামনে ঘোষণা করেছে যে, সে সময়মতো হতদারিদ্র্য থেকে নিজের জনগণকে সম্পূর্ণ মুক্ত করেছে। বর্তমান মান অনুযায়ী, ৯ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার গ্রামীণ অধিবাসীর সবাই হতদারিদ্র্যমুক্ত হন। ৮৩২টি দরিদ্র জেলা এবং ১ লাখ ২৮ হাজার দরিদ্র গ্রামও দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। আঞ্চলিক দারিদ্র্য সমস্যা সামষ্টিকভাবে সমাধান হয়েছে। চীনের জাতীয় গ্রাম পুনরুদ্ধার ব্যুরোর মহাপরিচালক ওয়াং চেং ফু এবারের ফোরামে বলেছেন, চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য বৈশ্বিক দারিদ্র্যবিমোচন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন

 

“চীন দারিদ্র্যবিমোচনের লড়াইয়ে সার্বিকভাবে জয়ী হওয়ায় কোটি কোটি চীনার জীবন বদলে গেছে। এখন তারা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এবং সুখী জীবন কাটাতে সক্ষম। দরিদ্র অঞ্চলের লোকেরা চীনের আধুনিকায়নকাজেও এখন যোগ দিতে পারেন। এতে সামষ্টিক পরিস্থিতিতে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এসেছে। এটি সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বৈশ্বিক দারিদ্র্যবিমোচনকাজেও চীনা বুদ্ধি, চীনা বাস্তবতা ও চীনা চালিকাশক্তির যোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে।”  

 

চীনের উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচন ব্রতে অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে বোআও ফোরামের আয়োজনস্থল—চীনের হাইনান প্রদেশও বিগত কয়েক দশকের মধ্যে একটি অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ সীমান্ত দ্বীপ থেকে এমন একটি অঞ্চলে পরিবর্তিত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সক্ষম।  একে চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের এক দৃষ্টান্ত বলে মনে করা হয়। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র হাইনান প্রাদেশিক পার্টি কমিটির সহ-সম্পাদক লি চুন বলেন, দারিদ্র্যবিমোচনে হাইনানের সাফল্য সকলের কাছে সুস্পষ্ট। এটি কার্যকরভাবে অতীতের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন

 

“হাইনান চীনের একটি মিনিয়েচার। হাইনানে নিবন্ধিত ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৭ শ দরিদ্র মানুষের সবাই দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন।”

 

ইতালির অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী এবং অর্থনীতির  অধ্যাপক মিশেল গেরাসি চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি মনে করেন, চীনের ‘লক্ষ্যযুক্ত দারিদ্র্যবিমোচনের’ কৌশল বিশ্বের দারিদ্র্য সমস্যার মুখোমুখি সকল দেশের জন্য উদাহরণস্বরূপ। এই সম্পর্কে তিনি বলেন

 

“চীন ‘লক্ষ্যযুক্ত দারিদ্র্যবিমোচনের’ কৌশল কাজে লাগিয়েছে এবং এসংশ্লিষ্ট একটি ডাটাবেস গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে রয়েছে সকল দরিদ্র মানুষের নাম এবং পারিবারিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত তথ্য। দারিদ্র্য কেবল যে আফ্রিকা ও এশিয়ায় আছে তা নয়, লন্ডন থেকে রোম পর্যন্ত সকল উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর জন্য একটি একটি চ্যালেঞ্জ। সুতরাং, প্রতিটি দরিদ্র মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য চীন যে ‘লক্ষ্যযুক্ত দারিদ্র্যবিমোচনের’ কৌশল কাজে লাগিয়েছে, তা থেকে আমাদের শেখা দরকার।”

 

দারিদ্র্যবিমোচনের কাজটি সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হয়েছে এমন এক নতুন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চীন সার্বিকভাবে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজ করেছে। চীনের জাতীয় গ্রামীণ পুনরুদ্ধার ব্যুরোর মহাপরিচালক ওয়াং চেং ফু বলেন, মহামারীজনিত দারিদ্র্যের ঝুঁকির মুখে চীন বোআও এশীয় ফোরামসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক। এই প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যবিমোচন খাতে  বিনিময় ও সহযোগিতার সুষ্ঠু প্রবণতা বজায় রাখা সম্ভব। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)