চীনা গল্প বলার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ অনুসন্ধান করা সার্বিয়ার পরিচালক মুলাদেন কোভাছেভিচ
2021-08-25 15:52:41

‘আমি চীনা গল্প বলার জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি অনুসন্ধান করছি। এই দৃষ্টিকোণটি আগের পশ্চিমা সিনেমাগুলোতে তুলে ধরা চীনা গল্প থেকে আলাদা কিছু নয়, বরং পশ্চিমা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো ঘটনা।’ সম্প্রতি সিনহুয়া বার্তা সংস্থার সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে মুলাদেন কোভাছেভিচ একথা বলেন।

 

মুলাদেন কোভাছেভিচের তৈরি প্রামাণ্যচিত্র ‘মেরি ক্রিসমাস, ই উ’তে চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের ই উ’র শত শত কারখানার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এসব কারাখানায় ক্রিসমাসের অলঙ্কার তৈরি করা হতো। তার এ তথ্যচিত্রে সাধারণ চীনা মানুষের ছোট ও বাস্তব জীবনের উপর দৃষ্টিপাত করা হয়। এতে চীনা সমাজ উন্নয়নের একটি শান্তিপূর্ণ এবং উষ্ণ অংশ ফুটে ওঠে।

 

কারখানার মালিক কাজ করার পাশাপাশি গান গায়, সে বিলিয়ার্ড হলে ভালোবাসা ও কষ্টের কথা জানায়। এ তথ্যচিত্রে বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নেই, বরং এতে ধীর ও দৈনন্দিন নানা ছবির মাধ্যমে সাধারণ কিছু মানুষের সাধারণ জীবনের কথা বলা হয়েছে। চলচ্চিত্রে ই উ শহরের স্থানীয় বাসিন্দা বা সেখানে অন্য জায়গা থেকে কাজ করতে আসা নতুন ই উ’বাসী রয়েছেন। তাদের আনন্দ আছে, দ্বন্দ্ব আছে, আছে কষ্টও। তবে তারা সুন্দর জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অব্যাহতভাবে  সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

কোভাছেভিচ বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাণিজ্যিক শহর হিসেবে ই উ শহরে বড় ও ছোট ক্রিসমাস অলঙ্কার উৎপাদনকারী শত শত কারখানা রয়েছে। সাধারণ চীনা শ্রমিকদের তৈরি এই ক্রিসমাস অলঙ্কারগুলি পশ্চিমা সমাজের হাজার হাজার ঘরে প্রবেশ করেছে। ই উ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চীনা গল্প বলার এমন একটি আদর্শ স্থান।

 

তিনি বলেন, ক্রিসমাস হলো পশ্চিমা জগতের খ্রিষ্ট ধর্মীয় মানুষদের সবচে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উত্সব। চীনে এমন একটি শহর আছে যেখানে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ ক্রিসমাস উপকরণ তৈরি করা হয়। আমি মনে করি এটি খুব আকর্ষণীয়।

২০১৭ সালে কোভাছেভিচ প্রথমবারের মতো চীনে আসেন। প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। ই উ শহরে তিনি চীনের উন্নয়নের স্পন্দন অনুভব করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এখন, সার্বিয়া এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার শ্রমিকদের তুলনায় ই উ’র শ্রমিকদের বেতন কয়েকগুণ বেশি। অনেক কারখানার পরিবেশ পশ্চিমা দেশগুলোর কারখানার মতোই। চীন সস্তা শ্রমের যুগকে বিদায় জানাচ্ছে।’

 

কোভাছেভিচ বলেন, তিনি পশ্চিমাদের তৈরি চীনের অর্থনৈতিক অলৌকিকতা নিয়ে অনেক তথ্যচিত্র দেখেছেন এবং সেগুলোতে চীন সম্পর্কে অনেক বদ্ধমূল ধারণা আছে। ‘আমি বিশ্বাস করি যে, এটা বিরক্তিকর।’ কোভাসেভিচ মনে করেন, লোকেরা প্রকৃত চীন দেখতে চান। একজন পরিচালককে অবশ্যই সততার সঙ্গে  তার মতামত প্রকাশ করতে হবে।

 

‘মেরি ক্রিসমাস, ই উ’ নামের এ প্রামাণ্যচিত্র চলচ্চিত্র উত্সবের বিচারকদের মুগ্ধ করেছে। তা ছাড়া, অনেক চীনা ভক্তের মনও জয় করেছে। পাশ্চাত্যের বাঁধাধরা দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চলচ্চিত্রের সচেতন প্রচেষ্টার উচ্ছ্বসিত স্বীকৃতি দিয়েছে চলচ্চিত্র ভক্তরা। ফ্রান্সে বসবাসকারী ই উ শহরের এক তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, একজন ইউরোপীয় পরিচালক ই উ’র সত্যিকারের দৃশ্য তুলে ধরেছেন যা অকল্পনীয়।

 

২০১৮ সালে ‘মেরি ক্রিসমাস, ই উ’ নামে এ প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ শুরু হয় এবং শরত্কালে এটি শেষ হয়। শুটিংয়ের সময় কোভাছেভিচ তিন বার চীনে আসেন। নিজের ক্যামেরা ধরা পড়া সাধারণ চীনা মানুষ এবং তার দলের চীনা সহকর্মীদের প্রতি তার সুগভীর অনুভূতি রয়েছে। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র আমার এবং চীন ও চীনা জনগণের মধ্যে একটি বন্ধন স্থাপন করেছে। আমার মনে চীনের জন্য একটি বিশেষ স্থান আছে; যাকে অন্য কোনও স্থানের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। (লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)