আফ্রিকান তরুণ-তরুণীদের চোখে চীন
2021-09-09 14:33:43

আফ্রিকান তরুণ-তরুণীদের চোখে চীন_fororder_非洲

বর্তমানে আফ্রিকায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তরুণ জনগোষ্ঠী আছে। তরুণ আফ্রিকানদের কাছে চীন কেমন? সিনহুয়া বার্তা সংস্থার সাক্ষাত্কার থেকে দেখা যায় যে, অনেক আফ্রিকান যুবক শুধু কুংফু তারকাদের সঙ্গেই পরিচিত নয়, বরং তারা চীনা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকের প্রতিও গভীর আগ্রহী। তারা সাধারণত চীনের তৈরি ইলেকট্রনিক পণ্য, যেমন মোবাইল ফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটারসহ বিভিন্ন দ্রব্য পছন্দ করে। চীনের প্রতি তারা খুব আগ্রহী, তাদেরকে সহায়তা দেওয়ার জন্য চীনের প্রতি তারা কৃতজ্ঞ এবং আফ্রিকা-চীন বন্ধুত্বকে তারা অনেক গুরুত্ব দেয়। চীনের উন্নয়নে আফ্রিকা তথা বিশ্ব উপকৃত হবে বলে তারা বিশ্বাস করে।

 

ক্লিফোর্ড এমবোয়া, একজন তরুণ কেনিয়ান। যিনি চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক, গণ-কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন। চীনে আসার আগে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেটে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন এবং নানা খবর পড়েছেন। চীন ও চীনা মানুষ সম্পর্কে তিনি আরও বেশি জানতে চান। তিনি বলেন, তার জানা বেশিরভাগ তথ্য ছিল নেতিবাচক। সৌভাগ্যবশত, আমার কিছু চীনা বন্ধুর কারণে চীনকে বস্তুনিষ্ঠভাবে জানতে সক্ষম হয়েছি।

 

ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া এমবোয়া বলেন, ‘চীন প্রসঙ্গে আমার আগের জানাশোনার চেয়ে সত্যিকার চীন অনেকটাই আলাদা। সেখানে সব কিছু আশ্চর্যজনক।’ বিশ্বের যে কোনও দেশের মতো চীনও তার নিজস্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবে, চীন সরাসরি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এবং নিজের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য হৃদয় দিয়ে পরিশ্রম করে থাকে। আমি চীনা জনগণের লড়াইয়ের মনোভাব এবং স্বপ্ন অনুসরণে বাস্তব পদক্ষেপের প্রশংসা করি।’

 

তিনি বলেন, যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে চীন প্রসঙ্গে জানতে শুরু করেন এবং পুরো চীন কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে পারেন, আপনি তাদের সংস্কৃতি ও কাজ করার পদ্ধতির প্রশংসা করবেন। আপনি বুঝতে পারবেন যে, কেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি’র নেতৃত্বে চীন এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

আফ্রিকান তরুণ-তরুণীদের চোখে চীন_fororder_非洲1

এমবোয়া বলেন, চীনের উন্নয়নের পথ, সংস্কৃতি ও কাজের ধরন চিত্তাকর্ষক। ‘কোনও দেশ কাজ না করে কোনও কিছু অর্জন করতে পারে না। এর পেছনের বিভিন্ন প্রচেষ্টা আপনি কল্পনা করতে পারেন।’

 

বতসোয়ানার কলেজ অফ অ্যাকাউন্টিংয়ের ছাত্র কিউডাইতাই বলেন, পশ্চিমা মিডিয়ায় চীন সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য প্রচারের কারণে আফ্রিকার অনেক তরুণ প্রাথমিকভাবে মনে করতো যে, আফ্রিকায় চীনের সহায়তার অন্যান্য উদ্দেশ্য আছে। তবে, সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে। চীনের প্রতি জনগণের আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘চীনারা বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী জাতি। অনেক ক্ষেত্রে চীন এগিয়ে গেছে।’

 

কোনো কোনো আফ্রিকান তরুণ মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান সার্বিক জাতীয় শক্তি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা আনন্দের সাথে দেখতে পান যে, বড় দেশ হিসেবে চীন বিশ্বশান্তি বজায় রাখে এবং আফ্রিকা ও বৈশ্বিক উন্নয়ন বেগবানে সাহায্য করে থাকে।

 

চীনের সার্বিক রাষ্ট্রীয় শক্তি জোরদার হওয়া এবং আফ্রিকা ও চীনের বিনিময় গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আফ্রিকান তরুণদের চীন সম্পর্কে জানাশোনার পদ্ধতিও ধাপে ধাপে বাড়ছে। চীনের অর্থনীতি উন্নয়ন বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে অর্জিত সাফল্য নিয়ে তারা বিস্মিত।

 

আফ্রিকান যুবকরা চীনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট কোম্পানি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। যেমন, হুয়াওয়েই, লেনোভো, সিয়াওমি, টেনসেন্ট প্রভৃতি। তারা চীনের সেলফোন ও ট্যাবলেটসহ চীনের উত্পাদিত ইলেকট্রনিক পণ্য বেশ পছন্দ করে।

আফ্রিকান তরুণ-তরুণীদের চোখে চীন_fororder_非洲2

তানজানিয়ার তরুণ উইলিয়াম ডগলাস বলেন, চীনের কথা উল্লেখ করলে চীনের উত্পাদিত নানা সস্তা তবে ভালো গুণগত মানের পোশাক, খেলনা, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, নির্মাণসামগ্রী এবং যন্ত্রপাতির নাম মনে পড়ে। তানজানিয়ায় হুয়াওয়েই এবং অপ্পো সেলফোন অনেক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ক্যামেরোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওমর বলেন, ‘এখন চীনের তৈরি মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য স্থানীয় তরুণদের সমাদর পেয়েছে।’

 

আফ্রিকায় চীনা সংস্কৃতির প্রভাব অব্যাহতভাবে বাড়ছে। অনেক সাক্ষাত্কারে উত্তরদাতারা চীনের কংফু, চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক নিয়ে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে। অনেক কংফু তারকা আফ্রিকায় সুপরিচিত। ২৫ বছর বয়সী তানজানিয়ান তরুণ নুরুদ্দিন বলেন, আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক চীনা চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক উপভোগ করেছি। কংফু চলচ্চিত্রের পাশাপাশি আমি ও পরিবারের সদস্যরা চীনের টিভি নাটক দেখতে পছন্দ করি।

 

সেনেগালের ডাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইব্রাহিমা ডায়র মনে করেন, কয়েক বছর আগের তুলনায় চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে সেনেগালের তরুণদের জানাশোনা অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, চীনা ভাষা জানা মানুষের সংখ্যা যতো বাড়বে, চীনের সংস্কৃতি ততো বেশি মানুষের কাছে সুপরিচিত হবে এবং জনপ্রিয়তা পাবে।

 

ইথিওপিয়ান যুবক হাবুতাম ভোল্কু বলেন, চীন সম্পর্কে তার জ্ঞান প্রধানত এসেছে ইথিওপিয়ায় চীনের বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো নির্মাণের কার্যক্রম থেকে। তিনি বলেন, ‘ইথিওপিয়ায় চীনের বিনিয়োগকারী কোম্পানি ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করছে, এর মধ্যে রয়েছে নির্মাণাধীন আফ্রিকান রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের সদর দপ্তর, আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দপ্তর, আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলওয়ে এবং আদ্দিস আবাবা সিটি লাইট রেল ট্রান্সিটসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় অবকাঠামো প্রকল্প।’

আফ্রিকান তরুণ-তরুণীদের চোখে চীন_fororder_非洲3

সেনেগালের ডাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদু সেক সেনেগাল-চীন সম্পর্কের দ্রুত বিকাশে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, চীন সেনেগালকে অনেক সাহায্য দিয়েছে এবং আরো উন্নয়ন অর্জনে বরাবরই সেনেগালকে সমর্থন দেয়।

 

বতসোয়ানা স্কুল অফ অ্যাকাউন্টিংয়ের ছাত্র কিদেতাই বলেন, আফ্রিকান অবকাঠামো নির্মাণে চীনের সহায়তা দেখে তরুণ আফ্রিকানরা গভীরভাবে মুগ্ধ। ‘আমরা চীনের বন্ধুত্ব এবং সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞ। আমি মনে করি, চীনের সাহায্যে আফ্রিকান দেশগুলো আরো স্বাধীন হয়েছে।’

 

জনমত জরিপের সংগঠন ‘আফ্রিকান ব্যারোমিটার’-এর উদ্যোগে ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আফ্রিকায় চীনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবকে বেশিরভাগ উত্তরদাতারা একটি ভাল ব্যাপার হিসাবে বিবেচনা করেন। ১৮ টি আফ্রিকান দেশের প্রায় ২৬ হাজার আটশ উত্তরদাতা এ জরিপে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী উত্তরদাতার মধ্যে, প্রায় ৬০ শতাংশ উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন যে, আফ্রিকায় চীনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক’ বা ‘খুব ইতিবাচক’।

(লিলি/তৌহিদ)