সেপ্টেম্বর ১২: গত ২৭ জুলাই টোকিও অলিম্পিক গেমসের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলের মিক্সড ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেন চীনের খেলোয়াড় ফাং ওয়েই। এটি ছিল চীনের খেলোয়াড়দের এবারের গেমসের ৭তম স্বর্ণপদক। আজ আমরা তাঁর জীবনের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
ফাং ওয়েই ১৯৮৬ সালে হ্যা পেই প্রদেশের পাও তিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি খেলনা বন্দুক অনেক পছন্দ করতেন। তাঁর বাসায় তখন সব ধরনের খেলনা বন্দুক ছিল।
তাঁর বয়স যখন ১৪ বছর, তখন তিনি বাসার বাইরে নতুন কেনা একটি খেলনা বন্দুক নিয়ে আনন্দ করছিলেন। ঠিক সে সময় তাঁর প্রতিবেশী এক মামা ফাং ওয়েইকে বলেন, “তুমি বন্দুক যেহেতু এত পছন্দ কর, তাহলে শুটিং শিখবা, কেমন?”
ফাং ওয়েই এ কথা শুনে অনেক আনন্দ পান। তিনি ভাবেন, সত্যি! যদি শুটিং শিখি, তাহলে খেলনা নয়, সত্যিকারের বন্দুক চালাতে পারব আমি। বাসায় ফিরে গিয়ে তিনি তাঁর বাবাকে অনুরোধ করেন, তাঁকে যেন শুটিং প্রশিক্ষিণে পাঠানো হয়।
ওই প্রতিবেশী মামা তাদের সাহায্য করেছেন। মামার এক বন্ধু পাও তিং ক্রীড়া স্কুলের শুটিং কোচ। তাঁর নাম চাং কুয়াং ওয়েই। মামার সাহায্যে তারা কোচের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
কোনো এক সকালে ফাং ওয়েইকে নিয়ে তাঁর বাবা পাও তিং ক্রীড়া স্কুলে যান। সেখানকার কোচ ফাং ওয়েইকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার বাসায় কি সাইকেল আছে?”
“জ্বী! স্যার, আছে!” উত্তর দেন ফাং ।
কোচ বলেন, “তাহলে আকামীকাল সকাল সাড়ে সাতটায়, তুমি সাইকেলে করে আমার বাসায় এসো, ঠিক আছে?”
পর দিন সকালে ফাং ওয়েই সাইকেল নিয়ে কোচের বাসার সামনে অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক সাড়ে সাতটায় কোচ চাং ব্যাগ নিয়ে বের হন। তিনি বলেন, “চলো, আমরা এখন ক্রীড়া স্কুলে যাব। আমি তোমার সাইকেলের পিছনের আসনে বসব, তুমি আমাকে নিয়ে যাবে।”
ফাং ওয়েই সবেমাত্র সাইকেল চালাতে শিখেছেন। তিনি কখনো কাউকে তাঁর সাইকেলে পরিবহন করেননি। তাই তিনি কোচের দিকে চেয়ে থাকেন। তিনি ভাবছেন, কোচ কি আমার সঙ্গে মজা করছেন?
কোচ চাং তা দেখে বলেন, “তোমার কী হয়েছে? বাবা। চলো, তাড়াতাড়ি করো।” এ কথা বলে কোচ তাঁর সাইকেলের পিছনের আসনে বসেন।
কোচের বাসা থেকে ক্রীড়া স্কুল মাত্র এক কিলোমিটার পথ। তাতেই ফাং ওয়েই অনেক ঘেমে গেছেন। আসলে কোচ কী চান, তা এখনো ফাং বুঝতে পারেননি। অনেক কষ্টের পর অবশেষে তাঁরা স্কুলে পৌঁছান।
কোচ চাং কোথা থেকে যেন চারটি ইট এনেছেন। তিনি ফাংকে বলেন, “তুমি দুটো ইটের উপর দু’পা ফাক করে দাঁড়াবা। পাশাপাশি, অপর দুটো ইট দুই হাতে ধরে সটান দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি ফিরে না-আসা পর্যন্ত তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে।”
কোচ এ কথা বলে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁর এমন আচরণে ফাং ওয়েই অনেক কষ্ট পান। এর আগে তিনি জীবনেও এমন আচরণের মুখোমুখি হননি। এমন কষ্টের কাজও করেননি। তবে কোচের নির্দেশ তিনি পালন করলেন। ফলে ১০ মিনিটের মধ্যে তাঁর পা দুটো কাপতে শুরু করল। বাহু দুটো ব্যথা করছিল।
প্রথম দিনটা এভাবেই কেটেছে তাঁর। ফাং ওয়েই যেন তাঁর বাহু এবং পায়ের বোধ হারিয়ে ফেলেন। আবার তিনি সাইকেলে করে কোচকে বাসায় পৌঁছে দেন। তখন কোচ তাঁকে আরেকটি মিশন দেন।
কোচ রান্নাঘর থেকে দুটি বাটি ও চপস্টিক নিয়ে আসেন। তিনি একটি বাটিতে সয়াবিন ঢালেন। তারপর তিনি বলেন, “এসো, তুমি চপস্টিক ব্যবহার করে এই বাটি থেকে সয়াবিনগুলো অপর বাটিতে রাখো। তা শেষ করে তুমি বাসায় ফিরে যেতে পারবে।”
ফাংয়ের হাত ইতোমধ্যে কাপছিল। তবে তিনি একটি একটি করে সয়াবিন সরাতে থাকেন। অবশেষে তিনি এ মিশনও সুন্দরভাবে শেষ করেন।
তারপর কোচ বলেন, “তুমি আমার সাথে রাতের খাবার খাও, ঠিক আছে? আমি ইতোমধ্যে তোমার আব্বুকে বলেছি।”
তখন থেকে ফাং ওয়েই কোচের নির্দেশনায় কঠোরভাবে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। ২০০২ সালে ১৬ বছর বয়সী ফাং ওয়েই চীনের জাতীয় তরুণতরুণী শুটিং প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। সেবার তিনি জাতীয় পর্যায়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন। ২০০৮ সাল বেইজিং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে তিনি আবার স্বর্ণ জিতেন।
(আকাশ/এনাম/রুবি)