রোববারের আলাপন- চীনা অলিম্পিক খেলোয়াড় চেন থাওয়ের গল্প
2021-09-26 14:32:01

সেপ্টেম্বর ২৬: টোকিও অলিম্পিক গেমসের পুরুষদের ৫০ মিটার বাটারফ্লাই সাঁতারের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় চীনের খেলোয়াড় চেন থাও মাত্র ৩০ সেকেন্ডে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জয় করেছেন। আজ আমরা তাঁর গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। 

১৯৯০ সালে চেন থাও চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইউননান প্রদেশের একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারটি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র হলেও ছোটবেলা তাঁর অনেক অনন্দে কেটেছিল। 

তবে একদিন একটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে তিনি তাঁর দুটা বাহু হারান। তারপর চেন থাও অত্যন্ত দুঃখে-কষ্টে জীবন যাপন করতে থাকেন। আগে তিনি সব সময় বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করতেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর তিনি সব সময় নিজের বাসায় একা থাকতে শুরু করেন। 

তাঁর অস্ত্রোপচারে পরিবারের সব জমানো টাকা খরচ হয়ে যায়। এছাড়া বাইরে থেকে অনেক ঋণও নিতে হয়েছে। ফলে চেন থাও লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। 

চেন থাও দুটি বাহু হারানোর পর চীনের অক্ষম ব্যক্তিদের ফেডারেশনের স্থানীয় শাখা তাঁর পরিবারকে কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। 

ফেডারেশনের সাহায্য ও সমর্থনে চেন থাও ক্রমশ ঘুরে দাঁড়াতে থাকেন। 

ধীরে ধীরে তিনি তাঁর পা ব্যবহার করে অনেক কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করেন। যেমন, তিনি পা দিয়ে খেতে পারেন, এবং পা দিয়ে মুখ ধোতে পারেন ইত্যাদি। 

সময় নদীর মত বয়ে যায়। এরই মধ্যে সাত বছর চলে গেছে। ২০০৪ সালের কোনো একদিন গ্রামের প্রধান চেন থাওয়ের বাসায় গিয়ে তাঁর বাবামা কে জানান, ইউননান প্রদেশের খেলোওয়াড় দল এখন খেলোওয়াড় সংগ্রহ করছে। প্রতিবন্ধী খেলোয়াড় হিসেবে চেন থাও চেষ্টা করে দেখতে পারে। 

তাঁর বাবামা এটি শুনার পর রাজি হননি। তাঁরা বলেন, “স্যার, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আপনি জানেন স্যার, চেন থাওয়ের বাহু নেই। সে কীভাবে খেলোয়াড় হতে পারবে। অনেক কষ্ট পাবে সে, তাইনা? আমরা এ ছেলের জীবনে আর কষ্ট চাই না।”

তাঁরা বলেন, “আমরা এ দুনিয়াতে এ ছেলের জীবনের একটা ব্যবস্থা করবই।”

তবে চেন থাও বাবামার মতামতের সাথে একমত নয় । তিনি বলেন, “স্যার, কষ্ট হলে সমস্যা নেই। আমি চেষ্টা করতে চাই, স্যার।”

মা তাঁর কথা শুনার পর আর কোনো কথা বলেননি। সেদিন সন্ধ্যায় মা তাঁর পরিবারের জন্য ভাল খাবার বানান। একই বছরের গ্রীষ্মকালে ১৪ বছর বয়সী চেন থাও সাঁতার কাটা শিখতে শুরু করেন। 

দুটো বাহু না-থাকার কারণে অন্য খেলোয়াড়দের চেয়ে তাঁর অনেক বেশি কষ্ট হয়েছে। তা মোকাবিলায় তিনি অন্যদের চেয়ে আরো বেশি পরিশ্রম করেন। অন্যরা সুইমিং পুলে পাঁচ ঘন্টা চর্চা করলেও তিনি নয় ঘন্টা চর্চা করেন। 

অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তিনি সাঁতার শিখে ফেলেন। দুটি বাহু না থাকলেও তাঁর সাঁতারের গতি অন্যদের চেয়ে ধীর নয়।

কয়েক মাস পর চেন থাওয়ের বাবামা সুইমিং পুলে আসেন তাঁকে দেখতে। চেন থাওয়ের সাঁতার দেখার পর বাবামা চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি। 

চেন থাও নিজের অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তাঁর সাঁতারের মান অব্যাহতভাবে উন্নত করতে থাকেন।

২০১২ সালের লন্ডন প্যারালিম্পিক গেমসে পুরুষদের ১০০ মিটার সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। ২০১৬ সালের রিও প্যারালিম্পিক গেমসেও তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। এবারের টোকিও প্যারালিম্পিক গেমসে তিনি পুরুষদের ৫০ মিটার বাটারফ্লাই সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হন। 

প্রশিক্ষণ শেষে চেন থাও গান শুনতে অনেক পছন্দ করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ‘নিজকে পরিবর্তন করা’ গানটি অনেক পছন্দ করি। কারণ আগে সব সময় আমার আত্নবিশ্বাসের অভাব ছিল।” 

আসলে ‘নিজকে পরিবর্তন করা’ শুধু একটি গান নয়, বরং চেন থাওয়ের জীবনের একটি বিশ্বাস। 

মানুষ চেন থাওকে সম্মান করে। শুধু তিনি অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন সে কারণে নয়, বরং তাঁর নিজেকে পরিবর্তন করা এবং নিজের অব্যাহত উন্নতির চেতনার কারণে। 

(আকাশ/এনাম/রুবি)