চীনের গ্রামাঞ্চল একটি সম্ভাবনাময় ভোক্তা বাজার
2021-10-06 17:14:03

প্রতি বছর অক্টোবর মাসে চীনে ফসল কাটা হয়। এ সময়ে জাতীয় দিবসের লম্বা ছুটিতে ভোগ্য বাজারও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। চলতি বছরের প্রথম আটমাসে চীনের গ্রামাঞ্চলে ভোগ্য পণ্যের খুচরা বিক্রির পরিমাণ ৩.৬৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.২ শতাংশ বেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত চীনের গ্রামাঞ্চলে ভোগ্য পণ্যের খুচরা বিক্রির পরিমাণ টানা আটবছর ধরে শহরের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

থাং সিয়াও ছিয়াং নামের ৫৩ বছর বয়সী এক কৃষক জাতীয় দিবসের ছুটিতে নতুন একটি এসইউভি গাড়ি কিনেছেন। তিনি বলেন, তার পুরাতন ভ্যানটি তিনি ১০ বছরের মতো ব্যবহার করেছেন, তাই এবার নতুন একটি গাড়ি কিনেছেন। বিশ বছর  আগে তিনি ১৪ ইঞ্চি একটি টিভি কিনেন, তখন তার জন্য ৪০০ ইউয়ানই অনেক বেশি মনে হয়েছিল, তবে এখন বড় টিভি ছাড়াও তিনি এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন নতুন করে কিনেছেন।

গ্রামাঞ্চলে মানুষের ভোগের ধারণা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তারা এখন মানের উপর আরও বেশি গুরুত্ব দেন। আগে তারা মাছ, মাংস খেতে চাইতেন, তবে এখন তারা স্বাস্থ্য রক্ষায় বেশি করে তাজা ফলমূল খান।

গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কেনাকাটার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্যের গুণগতমানও উন্নত হয়েছে। ২০২০ সালে চীনের গ্রামগুলোতে ভোগ্য পণ্যের খুচরা বিক্রির  পরিমাণ  ২০১৫ সালের ৪.১ ট্রিলিয়ন থেকে বেড়ে ৫.৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়ায়। এর মধ্যে গ্রামের বাসিন্দাদের বিনোদন, পরিবহন, চিকিত্সা ব্যয় ২০১৫ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৩৫.১, ৫৮.৩ ও ১৪.১ শতাংশ বেড়েছে।

স্থানীয় বৈশিষ্টসম্পন্ন শিল্প উন্নয়ন, শহরে কাজ করা এবং গ্রামে নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করানোসহ নানা পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকদের আয় লক্ষ্যণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পকেটে টাকা বেশি থাকলে কেনাকাটার ইচ্ছাও বেশি হয়। চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের গ্রামীণ বাসিন্দাদের মাথাপিছু নিষ্পত্তিযোগ্য আয় ছিল ৯,২৪৮ ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.১ শতাংশ বেশি।

তাদের ধারণার ও মানসিকতারও পরিবর্তন হয়েছে। আগে তারা সস্তা জিনিষ বেশি কিনতেন, এখন তারা আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রতি বেশি অনুরাগী। গ্রামের ভোক্তা শক্তিকে উদ্দীপনা দিতে নতুন নীতি তৈরি করছে সরকার। যেমন, কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ভর্তুকি দেয় সরকার। থং সিং গ্রাম একটি তরমুজ চাষের গ্রাম, পাশাপাশি সেখানে চাষ করা হয় অন্য ফলমূলও। থাং সিয়াও ছিয়াং বলেন, তিনি তরমুজ ও কিউই চাষে প্রতি বছর ২ লাখ ইউয়ান  আয় করে দুটি ট্রাক্টর কিনেছেন। সত্তর হাজার ইউয়ান দিয়ে ট্রাক্টর কিনলে, তার মধ্যে ১৯ হাজার ইউয়ান সরকার তাকে ভর্তুকি দিয়েছে। নতুন কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার সময়ে পুরাতন যন্ত্রপাতি বিক্রয় করা যায়। এনার্জি-সেভিং এয়ার কন্ডিশনার ক্রয় করলে সরকার ৩,০০০ ইউয়ান ভর্তুকি দেয়। এককথায়, সরকারের সাহায্যে কৃষকরা আরও বেশি ভোগ্য পণ্য ক্রয় করছেন।

অন্যদিকে, সুপারমার্কেট ও দোকানগুলো কৃষকদের জীবনযাপনকে আরও সুবিধাজনক করেছে। হুপেই প্রদেশের চৌ চিয়া ইউয়ু গ্রামে ৩০০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে একটি দোকান রয়েছে। সেখানে সবকিছু কিনতে পারেন কৃষকরা। আগে তারা ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাজারে যেতেন, এখন তারা এই দোকানে গিয়ে সবকিছু কিনতে পারেন। গ্রামের বাসিন্দা থিয়ান ছুং বলেন, কিছু দিন আগে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানের সবকিছু এ দোকানে পাওয়া গেছে। দোকনটির বার্ষিক ক্রয়-বিক্রয় পরিমাণ ২০ লাখ ইউয়ানের বেশি। আর এমন দোকান একটি গ্রামে রয়েছে চারটি। যদি আরও বেশি ধরনের পণ্য কিনতে চান, তাহলে জেলায় সুপারমার্কেটে যেতে পারেন। গৃহস্থালী যন্ত্রপাতিসহ ওখানে সব পাওয়া যায়। এখন সারা জেলায় দোকানের সংখ্যা ১,২৮১টি। আর ৮৯.৬ শতাংশ গ্রামে এমন দোকান রয়েছে।

চীনে মোট ২১ হাজারটি জেলা আছে। কৃষকরা জেলা শহরে বেশি কেনাকাটা করেন। আগে সুপারমার্কেট ও দোকানের অভাবের কারণে কৃষকদের ভোগ্য চাহিদা পূরণ হয়নি। ভবিষ্যতে দোকান ছাড়া, পণ্য ডেলিভারি সেবাও উন্নত হবে, তারা আরও সহজে কেনাকাটা করতে পারবেন।

অনলাইন কেনাকাটা চীনে এখন খুবই স্বাভাবিক। কৃষকরাও এ সুবিধা উপভোগ করছেন। চাও রু হুয়া অনলাইনে নিজের চাষের মিষ্টি আলু বিক্রয় করেন। একদিন তিনি ৪,০০০ অর্ডার পেয়েছেন। সে দিন তিনি ১০ হাজার কেজি মিষ্টি আলু বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বাজারে বিক্রির তুলনায় অনলাইনে বিক্রিতে তার আয় ২৫ শতাংশ বেশি হয়। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে চীনে অনলাইনে কৃষি পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ২০৮.৮২ বিলিয়ন ইউয়ান। পাশাপাশি, কৃষকরাও অনলাইনে কেনাকাটা করেন। চীনের জাতীয় পোস্টাল সার্ভিসের উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাতমাসে গ্রামাঞ্চলে প্যাকেজ ডেলিভারির পরিমাণ ছিল ২ বিলিয়নের বেশি। তাই সবমিলিয়ে  গ্রামাঞ্চল বর্তমানে চীনের সম্ভাবনাময় একটি ভোক্তা বাজারে পরিণত হচ্ছে। (শিশির/এনাম/রুবি)