আকাশ ছুঁতে চাই ৪৩
2021-10-14 19:15:23

চীনে নারী শিশুর উন্নয়নে রূপরেখা

কী আছে এবারের পর্বে

১. চীনে নারী শিশুর উন্নয়নে অগ্রাধিকার নীতি: প্রতিবেদন

২. সাক্ষাৎকার: কর্পোরেট জগতে নারী

৩. হানফু গ্র্যান্ডমা

৪. গান: আমি তোমাকে মিস করি

৫. শিশুদের নতুন জীবনের পথ দেখাচ্ছেন লিউ

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া।

আগামী এক দশকে চীনের নারী ও শিশুদের উন্নয়ন নীতির রূপরেখা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।  এতে নারী ও শিশুদের মৌলিক অধিকার রক্ষার পাশাপাশি সামগ্রিক বিকাশকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই রূপরেখা নারী ও শিশুদের উন্নয়নে অগ্রাধিকার নীতি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন।

চীনে নারী ও শিশুর উন্নয়নে অগ্রাধিকার নীতি

আকাশ ছুঁতে চাই ৪৩_fororder_a1.jpg

আকাশ ছুঁতে চাই ৪৩_fororder_a2.jpg

আগামী দশ বছরে চীনের নারী ও শিশু সংক্রান্ত নীতি উন্নয়নের রূপরেখা উন্মোচন করেছে দেশটির স্টেট কাউন্সিল। সম্প্রতি এটি প্রকাশ করা হয়। এ রূপরেখায় উল্লেখ করা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির নারীদের উন্নয়নে সঠিকভাবে জেন্ডার সমতার নীতি প্রয়োগ করা হবে। এছাড়া সমান অধিকারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সেবার পূর্ণাঙ্গ, শিক্ষার অধিকার, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করবে তারা। নারী ও শিশুদের জন্য ৭৫টি প্রধান লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে এবং ৯৩টি সহায়ক পরিকল্পনা প্রস্তাবনা করা হয়েছে। যার মধ্যে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং শিক্ষাসহ আটটি বিষয় স্থান পেয়েছে। শিশু উন্নয়নের রূপরেখা অনুযায়ী, শিশুদের অধিকার রক্ষা আইন বাস্তবায়ন করা হলে শহুরে এবং গ্রামাঞ্চলের শিশুদের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তা অনেকাংশেই কমে আসবে। সার্বিকভাবে শিশুদের বিকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে নথিতে আরো উল্লেখ করা হয়, আগামী এক দশকের মধ্যে শিশুরা মৌলিক জনসেবার অনুর্ভক্ত হয়ে সমাজের সব সযোগ সুবিধা আরো বেশি ভোগ করবে।

সাক্ষাৎকার: কর্পোরেট জগতে নারী

কর্পোরেট জগতে বাংলাদেশের নারীদের প্রবেশ খুব বেশি দিনের ঘটনা নয়। কিন্তু এরমধ্যেই সাফল্যের সঙ্গে নারীরা এগিয়ে চলেছেন। তারা ভালো অবস্থান গড়ে নিচ্ছেন। কর্পোরেট জগতে নারীদের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে এখন আমরা কথা বলবো লীনা পারভীনের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশের একটি বড় প্রতিষ্ঠান আগোরা লিমিটেডের জনসম্পদ বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। আমাদের অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাই।   বাংলাদেশে কর্পোরেট জগতে একজন সফল নারী লীনা পারভীন বলেন, এ পেশায় সফল হতে হলে দৃঢ় মনোবল থাকতে রাখতে হবে নারীকে। কারণ কর্পোরেট জগতে টিকে থাকতে হলে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এগোতে হয়। এখানে পদে পদে বাধা রয়েছে। লীনা মনে করেন, বাংলাদেশে কর্পোরেট জগতের পরিবেশ এখনও নারীবান্ধব নয়। এখানে মনে করা হয় নারী সব পদের জন্য উপযুক্ত নয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে নারীকে তার প্রাপ্য সুযোগ সুবিধাগুলো দেয়া হয় না। তবে লীনা পারভীন যে প্রতিষ্ঠানে রয়েছন সেখানে আই এল ও’র শ্রম আইন অনুসারে সব রকম সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং অন্যান্য সুবিধা দেয়ার বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন সমস্যা করে না। লীনা বলেন, ‘বাংলাদেশের কর্পোরেট জগতে নারী আগের তুলনায় অনেক এগিয়েছে তবে যতটা এগোনোর সম্ভাবনা ছিল ততোটা কিন্তু হয়নি।’ এর কারণ হিসেবে তিনি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে দায়ী মনে করেন। ব্যক্তিগত জীবনে লীনাকেও অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি যমজ সন্তানের মা। সংসারে মায়ের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের সকল দায়িত্ব তাকে পালন করতে হয়েছে। কঠোর পরিশ্রম সত্ত্বেও তিনি চাকরি ছাড়েননি। শত প্রতিকূলতা সহ্য করেও চাকরি ধরে রাখার এবং কর্পোরেট জগতে টিকে থাকার এই মনোবলই তার আজকের সাফল্যের কারণ বলে মনে করেন তিনি।

লীনা পারভীন সম্প্রতি নারীবাদী লেখালেখিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। লেখার জন্য তিনি সময় বের করে নেন। কারণ লেখাটা তার প্রাণের তাগিদ থেকে আসে। নিজের অন্তর্জগতকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই তিনি লেখালেখির জন্য সময় ম্যানেজ করে নেন।

কর্পোরেট জগতে আরও বেশি সংখ্যায় নারীরা এগিয়ে আসবেন এমন আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

আকাশ ছুঁতে চাই ৪৩_fororder_a3

আকাশ ছুঁতে চাই ৪৩_fororder_a4

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই। সাফল্য শুধু তরুণ বয়সে নয়, আসতে পারে প্রবীণ বয়সেও। একজন প্রবীণ নারী কিভাবে নিজের সংস্কৃতিকে ধারণ করে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা পেয়েছেন শুনুন সেই গল্প।

হানফু গ্র্যান্ডমা

 

আকাশ ছুঁতে চাই ৪৩_fororder_a5

আকাশ ছুঁতে চাই ৪৩_fororder_a6

৭৭ বছর বয়সী লিউ ওয়েইসিউ সম্প্রতি চীনের নেটিজেনদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। ভক্তরা তার নাম দিয়েছেন হানফু গ্র্যান্ডমা। চীনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হানফু পরা অবস্থায় তার ছবি তাকে সেলেব্রিটি বানিয়েছে। চায়না ইন্টারন্যাশনাল কার্টুন অ্যান্ড অ্যানিমেশন ফেস্টিভ্যালের ১৭তম আসরে অনেকের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছেন তিনি। অবসর গ্রহণের আগে তিনি ছিলেন পিকিং অপেরার একজন শিল্পী। তখন তিনি শুধু মঞ্চের জন্য হানফু পরতেন। গত বছর আগস্টে তিনি হানফু পরা অবস্থায় তার একটি শর্ট ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড দেন। এই ভিডিও তাকে অনেক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। ভিডিওটি বানাতে তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন তারই এক শিক্ষার্র্থী। সেই শিক্ষার্থী স্মারক হিসেবে তার ভিডিওটি মোবাইলে ধারণ করে। এটি ইন্টারনেটে দেয়ার পর ভাইরাল হয়। এরপর একবছরে তিনি অনেক হানফু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। যেখানেই গেছেন সবাই তাকে গ্র্যান্ড মা বলে স্বাগত জানিয়েছে। হানফু কালচার যদিও সম্প্রতি তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কিন্তু তিনি মনে করেন, মধ্য বয়স্ক ও প্রবীণরাও এই ঐতিহ্যবাহী পোশাকটি পরে জাতীয় সংস্কৃতিকে নতুন করে জাগাতে সাহায্য করতে পারেন।

 

সুপ্রিয় শ্রোতা এখন শুনবেন চীনের একটি জনপ্রিয় গান। গানটির শিরোনাম ‘আমি তোমাকে অনেক মিস করি’।

আকাশ ছুঁতে চাই ৪৩_fororder_a7

শিশুদের নতুন জীবনের পথ দেখাচ্ছেন লিউ

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের সাইন ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে নতুন জীবনের পথ দেখাচ্ছেন শিক্ষক লিউ লিংলি। এই অসামান্য নারীর কথা রয়েছে বিশেষ প্রতিবেদনে।

 

আকাশ ছুঁতে চাই ৪৩_fororder_a8

লিউ লিংলি। তিনি এমন একজন শিক্ষক যিনি নতুন জগত খুলে দিয়েছেন শিশুদের জন্য।  ছোট শিশু যারা কানে শুনতে পায় না এবং কথা বলতে পারে না তাদের তিনি শেখাচ্ছেন সাইন ল্যাংগুয়েজ। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী এই শিশুরা সাইন ল্যাংগুয়েজ শিখে অন্য দশজন শিশুর মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে চীনের চিয়াংসু প্রদেশের নানচিং শহরে স্পেশাল এডুকেশন বিষয়ে শিক্ষা নিয়েছেন লিউ।

শৈশবে তার একজন প্রিয় প্রতিবেশি ছিলেন যিনি ছিলেন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী সেই নারী শিশুদের প্রতি খুব সদয় হলেও তার প্রতিবন্ধিতার জন্য কোন কাজ পেতেন না। তার স্বামীও তার প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার করতো। প্রতিবেশি এই নারীর প্রতি সহানুভূতি থেকে সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখা শুরু করেন লিউ।

২০০৫ সালে লিউয়ের বয়স তখন ৩২ বছর একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু সন্তানের প্রতিবন্ধিতা ধরা পরে মাত্র ৭ মাস বয়সে। স্বামী লিউকে ডিভোর্স দেন। ব্যক্তিগত এই কষ্টের সময়টা লিউ ধৈর্যে্র সঙ্গে অতিক্রম করেছেন। তার ছেলেকে বিশেষ চিকিৎসার মাধ্যমে কথা বলতে শিখিয়েছেন। ১৬ বছর বয়সী ছেলেটি এখন হাইস্কুলে পড়ছে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।

লিউ পরম মমতায় তার ক্লাসে সাত থেকে দশ বছর বয়সী শিশুদের সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখান। যারা শুধু শ্রবণ প্রতিবন্ধী তাদের কথা বলতেও শেখান তিনি। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ জন শিক্ষার্থী পুরোপুরি স্বাভাবিক গতিতে কথা বলতে শিখেছেন। আর অসংখ্য শিশু ফিরে পেয়েছে জীবনের স্বচ্ছন্দ গতি। কমিউনিস্ট পার্টির একজন অনন্য সদস্য হিসেবে চলতি বছর জুনে সিপিসি সেন্টাল কমিটির সম্মাননাও পেয়েছেন লিউ লিংলি।

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

চীনে নারী ও শিশুর উন্নয়নে অগ্রাধিকার নীতি প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

হানফু গ্র্যান্ড মা এবং শিশুদের নতুন জীবনের পথ দেখাচ্ছেন লিউ, প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী