চীনে রয়েছে সত্যিকারের জনগণতন্ত্র
2021-10-18 18:06:48

চীনে রয়েছে সত্যিকারের জনগণতন্ত্র_fororder_e3aa4221a69f4ea28f84e7f83c697cac

এখনো আমার মনে আছে, ২০০৩ সালে আমি যখন বাংলাদেশে লেখাপড়া করতাম, তখন অনেক স্থানীয় বন্ধু আমাকে চীনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করতেন। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করতেন, চীন কি একদল শাসিত দেশ? তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমি সব সময় বলেছি, চীন একটি গণতান্ত্রিক দেশ। চীনের জনগণ নিজেদের ব্যাপারে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেন। মানুষের সুখী জীবন নিশ্চিত করা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। সে সময় থেকে এখন অনেক বছর পার হয়েছে। বর্তমানে চীনের উন্মুক্ততার আওতা ও গতি আরো বেগবান হয়েছে। চীন সম্পর্কে বহিঃবিশ্বের লোকজন আরও বেশি জানতে পারছেন। চীনাদের সুখী জীবন দেখে অনেকে চীনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বুঝতে পারছেন। এখন আর কেউ চীনের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন না। 

সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় জাতীয় গণকংগ্রেসের এক কর্মসভায় গণতন্ত্রের সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যায় আমার বাংলাদেশী বন্ধুদের সেসব প্রশ্নের একটি সম্পূর্ণ উত্তর রয়েছে।

    প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন,  ‘একটি দেশ গণতান্ত্রিক কি না? তা নির্ভর করে জনগণ নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে কি না- তার ওপর’।  

 

গত ১৩ ও ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় জাতীয় গণকংগ্রেসের কর্মসভায় প্রেসিডেন্ট সি ‘পূর্ণাঙ্গ জনগণতন্ত্র’ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ‘পূর্ণাঙ্গ জনগণতন্ত্র’ বলতে জনগণের নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারাকে বুঝায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ জনগণতন্ত্র’ নিশ্চিত করতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। সিপিসি’র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর থেকে মোট একশ সাতাশিটি আইনের খসড়া চীনের সকলের মতামতের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে। এগারো লাখের বেশি মানুষ সেগুলো সম্পর্কে ৩ কোটির বেশি অভিমত প্রদান করেছেন। আইনগুলোতে তাদের অধিকাংশ মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।

২০২১ সালে চীনে ‘দুই অধিবেশন’ চলকালে তাদের প্রতিনিধিরা পূর্বে জনসাধারণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অভিমতের ভিত্তিতে ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ ও ‘২০৩৫ এজেন্ডা’ প্রস্তাবের ৫৫টি ধারা সংশোধন করেছেন। সেসবে চীনের ‘পূর্ণাঙ্গ জনগণতন্ত্র’ বাস্তব প্রতিফলন হয়েছে।

 

‘পূর্ণাঙ্গ জনগণতন্ত্রে’ জনগণই মূল ক্ষমতার অধিকারী। ক্ষমতাসীন পার্টি হিসেবে সিপিসি তার জন্মলগ্ন থেকে গণতন্ত্রের প্রতীক। সিপিসি’র দ্বিতীয় কংগ্রস থেকে সবগুলো কংগ্রেসে জনগণের অগ্রাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সবগুলো কংগ্রেসে চীনের অধিকাংশ জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধি এবং পুরো জাতির প্রতিনিধিত্ব ছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিপিসি’র নেতৃত্বে চীন সরকার জাতীয় গণকংগ্রস এবং জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন নামে দুটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যাতে জনগণের দেশ শাসনে সম্পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত হয়।

 

সি চিন পিং বলেন, ‘জনগণ আমাদের সিপিসি’র চালিকাশক্তি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ভিত্তি। সিপিসি জনগণ দ্বারা, এবং জনগণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি,  জনগণের জন্য শক্তিশালী হয়েছে সিপিসি। তাই সর্বদাই জনগণকে অগ্রাধিকার দেয় সিপিসি। ফলে চীনের কমিউনিস্ট র্পাটি ও চীনের সরকার জনগণের মন ও আস্থা জয় করতে পেরেছে। ২০২০ সালে মার্কিন একটি জরিপ প্রতিষ্ঠানের এক জরিপের ফলাফলে বলা হয়, ৯৫ শতাংশ চীনা জনগণের তাদের সরকারের ওপর আস্থা রয়েছে, যা কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। এ হার জরিপে অংশগ্রহণকারী সব দেশের মধ্যে সবেচয়ে বেশি। চীন টানা ৩ বছর এ ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে শীর্ষ স্থান ধরে রাখে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা দেশগুলোর এক শ্রেণীর মানুষ চীনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও দেশটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে উপেক্ষা করে চীনের ওপর ‘পশ্চিমা গণতন্ত্র’ চাপিয়ে দেয়ার হীন প্রয়াস চালাচ্ছে। বৃটেনের বিখ্যাত পন্ডিত মার্ক জ্যাকুইস সম্প্রতি চীনা গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন,  পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক চীনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ সত্যিকারের চীনকে জানেন না। এর কারণ হচ্ছে তারা বড় হওয়ার পথে যে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, তা  হলো: ‘পশ্চিমা দেশগুলোর কাজ করার পদ্ধতি হলো বিশ্বের অন্য দেশের জন্য শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। পশ্চিমা দেশগুলোর সবকিছু অন্য দেশের তুলনায় সুষ্ঠু’।

 

পশ্চিমা ধাচের গণতন্ত্রই কি সবার জন্য প্রযোজ্য? এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় ২০২১ সালের ৪ মে স্পেনের চীনবিষয়ক পর্যবেক্ষণ ওয়বেসাইটে ‘গণতন্ত্র মানে আস্থা’ শীর্ষক প্রবন্ধে। তাতে বলা হয়, কথিত অধিকাংশ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশের তুলনায় চীনের সরকার তার জনগণের কাছ থেকে বেশি সমর্থন পেয়ে আসছে। পশ্চিমারা  এ বিষয়টি অস্বীকার করে, যা অন্যায্য। যে কোনো দেশ  অন্য দেশের ওপর গণতন্ত্রসহ তাদের নিজস্ব চিন্তাধারা চাপালে আধিপাত্যবাদ কায়েম হয়। সেখানে আর গণতন্ত্র থাকে না।

 

মার্টিন জ্যাকুইস তাঁর সাক্ষাত্কারে বলেন, বর্তমানে সিপিসি’র নেতৃত্বে চীন খুব ভালো সময় পার করছে। চীনের বর্তমান অবস্থা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। তাঁর সাক্ষাত্কারের নিচে নেটিজেনরা বলেন, “কারণ চীনে জনগণ নিজেদের বিষয়ে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেয়”। এটি অনেক চীনার মনের কথা। আমরা সবাই এজন্য গর্বিত।

 

রুবি/এনাম