এখন বেঁচে থাকাই কষ্ট!
2021-11-18 19:39:30

আজহার লিমন, ফরিদপুর: এমনিতেই ঘাম ঝরানো ফসল বাজারে নিলে ন্যায্য দাম পায় না কৃষক। এর ওপর বাড়লো ডিজেলের দাম। মাঠ পর্যায়ের চাষীরা বলছেন, নতুন এই দামে বিঘাপ্রতি অন্তত ২ হাজার টাকা বাড়বে উৎপাদন খরচ। তৃণমূলের এই মানুষেরা বলছে, করোনা অভিঘাতের এই প্রেক্ষাপটে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি তাদের ওপর মরার ওপর খাড়ার ঘা। এমন অবস্থায় কৃষকেরা ফসল ফলাতে উৎসাহ হারাবে কি?

এখন বেঁচে থাকাই কষ্ট!_fororder_jing1

সেলিনা বেগম

এ নিয়ে আমাদের কথা হচ্ছিলো বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা ফরিদপুরের কৃষিনির্ভর এক গ্রামের বাসিন্দা সেলিনা বেগমের সঙ্গে।

তিনি জানালেন, আগে যেখানে প্রতি বিঘা জমির পানির খরচ ছিলো ৮ হাজার সেখানে এখন বিঘাপ্রতি ১০ হাজার চাচ্ছে সেচযন্ত্র মালিকরা। প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ধান পাওয়া যায় ৩৫ থেকে ৪০ মণ যা বিক্রি করা যায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। কিন্তু প্রতি বিঘাতে নিজেদের পরিশ্রম বাদেই নগদ খরচ করতে হয় ৩৫ হাজারের বেশি। আক্ষেপ করে সেলিনা বেগম বলছিলেন, আমরা অভাবী মানুষ। বেশি খরচ করে কম আয় করার মত অবস্থাতো আমাদের নেই। পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে যে, আমাদের বেঁচে থাকাই কষ্ট।

এখন বেঁচে থাকাই কষ্ট!_fororder_jing2

 

হারেজ মাতুব্বর

পেঁয়াজের জন্য জমি তৈরি করতে লাঙল মাথায় ক্ষেতের দিকে ছুটছিলো কৃষক হারেজ মাতুব্বর। ডিজেলের দাম বাড়ার ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া, এই দাম না কমলে ক্ষেত খামার ছেড়ে দিতে হবে।

সেলিনা বেগম কিংবা হারেজের মতই অভিব্যক্তি গ্রামের অন্যান্য কৃষকের। দুলালী রানী নামের অরেক কৃষাণী বলছিলেন, গায়ে খেটে নিজের ফসল নিতে তুলি তাই বাঁচি না। যারা শুধু কামলা দেয় তাদের থাকে কী? কিছুই থাকে না।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে নভেম্বর শুরুর দিকে সরকারের ডিজেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর এভাবে বিপাকে পড়েছে দেশের ১৬ লাখ সেচযন্ত্রের গ্রাহক প্রান্তিক কৃষকেরা। এমনিতেই ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কষ্ট এর, ওপর আবার জ্বালানির এই দাম বাড়া, একে মরার ওপর খাড়ার ঘাই বলছেন তারা।

বাংলাদেশে যে পরিমাণ জ্বালানি আমদানি হয় তার ৪ ভাগের ৩ ভাগ ডিজেল। আর কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত জ্বালানির পুরোটাই ডিজেল। দেশে প্রতি বছর যে, ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টন ডিজেল আমদানি হয় তার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ টন ডিজেলই ব্যবহৃত হয় কৃষিতে। ২০ লাখ হেক্টর আমন জমিসহ দেশে সেচকৃত আবাদী জমির পরিমাণ ৭৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৭২ হেক্টর। আলোচনা হচ্ছে ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে কৃষকদের অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রান্তিক এই মানুষগুলোর জন্য কিছুই কী করার নেই? জানতে চেয়েছিলাম জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের কাছে।

 

তিনি বলেন, অবশ্যই কিছু করার ছিলো। কিন্তু এখন যেভাবে পোস্টমোর্টেম হচ্ছে তা না হয়ে আগে থেকে যারা নীতি নির্ধারক তারা চিন্তা করলে কোন সমাধান বের হতো। কিন্তু তারা তো তা করছে না।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, কেরোসিন কারা ব্যবহার করেন। এটা তো ব্যবহার করে একেবারে প্রান্তিক মানুষেরা। তাদের উৎপাদন কিংবা জীবন জীবিকার ব্যয় এভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হলো কিন্তু তাদের আয় তো বাড়ানো হলো না। মূলত সরকারি কর্মকর্তাদের মারাত্নক অবক্ষয় এবং জবাবদিহিতা না থাকার ধারাবাহিকতা এই তৃণমূল কিংবা মানুষের কষ্ট। এবং এটা হতেই থাকবে।

এখন বেঁচে থাকাই কষ্ট!_fororder_jing3

অধ্যাপাক ড. শামসুল আলাম

একদিকে ফসল উৎপাদনের জ্বালানির খরচ বৃদ্ধি অপরদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি। সবমিলিয়ে প্রান্তিক এই মানুষের জীবন যে ক্রমাগত কঠিন হচ্ছে সে কথাই বলছেন তারা।