আজ আমি ও সিআরআই'র বাংলা অনুষ্ঠান সম্পর্কে লিখতে গিয়ে কত কথাইনা মনে পড়ছে
2010-02-25 15:32:14 cri
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার শাহাদত হাসেন তাঁর রচনায় লিখেছেন, প্রায় বাইশ বছর আগের কথা। ১৯৮৯ সাল। সবেমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি।পড়াশোনার চাপ একদম নেই। ঘুরে বেড়াই, আড্ডা দেই। মজার সব কাল্ড কারখানায় নিজেকে জড়িয়ে রাখি। এমনই একদিন ডাকযোগে 'বাংলাদেশ ডিএক্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল' থেকে একটি প্যাকেট পেলাম। তাতে নানা উপহার সামগ্রীর সাথে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানসূচি এবং কিছু ভিউকার্ড। এত সুন্দর ভিউকার্ডের আগে আমি আর দেখিনি। অনুষ্ঠানসূচি পাওয়ার পর সেদিনই চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনলাম। চীনা কন্ঠে বাংলা ভাষার এক অদ্ভূত ঝংকার, যেন মোহনীয় সুরের সঙ্গীত। এমন মধুর কন্ঠে বাংলা একবার শুনলে বার বার শুনতে ইচ্ছে করে। আমার হলোও তাই। সেই যে শুরু করলাম, আজও সেই সু-মধুর কণ্ঠ না শুনলে ঘুমুতে পারিনা। আজ মাঝে মধ্যে অবাক হয়ে যাই। ২২ বছর আগে যে কাজটা শুরু করলাম, এখনো তা কী করে করছি। প্রায় দু'যুগ ধরে একটি বেতারের অনুষ্ঠান নিয়মিত শোনা তো কম ধৈর্য্যের কথা নয়। কিন্তু ভাবতে গিয়ে এ কৃতিত্ব নিজেকে দিতে পারি না। এ কৃতিত্ব, এ গৌরব, এ সাফল্য সিআরআই'র। কেননা সিআরআই আমাকে দীর্ঘদিন তার মোহনী শক্তি দ্বারা ধরে রাখতে পেরেছে। শুধু আমি নই, এমন অসংখ্য শ্রোতা সিআরআই'র দীর্ঘদিনের সঙ্গী। আজ আমি ও সিআরআই'র বাংলা অনুষ্ঠান সম্পর্কে লিখতে গিয়ে কত কথাইনা মনে পড়ছে। কত স্মৃতি, কত সুখের কথা। এই মুহুর্তে লেখাটা একটু থামিয়ে পুরোনো কিছু উপহার সামগ্রী বের করলাম। কিছু কিছু সযত্নে সংরক্ষণ করেছি, অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে বা অন্যকে উপহার দিয়েছি বা কালের গহবরে হারিয়ে গেছে। অনুষ্ঠান শুনার পাশাপাশি আমি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভিগে নিয়মিত চিঠিপত্র লিখতাম। প্রায়ই অনুষ্ঠানে সে সব চিঠি বা প্রশ্নের উত্তর শুনতে পেতাম। কী যে ভালো লাগত তখন। সিআরআই থেকে নিজের নাম প্রচার হওয়ায় নিজেকে তখন বিখ্যাত্ মানুষ মনে হত। ছাত্র জীবনে আমার কোন কোট ছিলনা। কিন্তু সিআরআই থেকে পাঠালো কোটপিন ছিল আমার কাছে সবচেয়ে মুল্যবান উপহার সামগ্রী। একটি কোট পিন পাওয়ার জন্য কত চিঠি যে লিখতাম। ছোট বড় যে কোন অনুষ্ঠানে সুযোগ পেলেই আমি শার্টে সেই কোট পিন পড়ে যেতাম। তখন নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা মনে হতো। এখনো তো হয়। গোল্ডন কালারের কোট পিনগুলো সত্যিই আকর্ষণীয়, বন্ধুদের মনে ঈর্ষা ধরিয়ে দেয়। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সিআরআই শুনে আসছি। আগের চেয়ে অনুষ্ঠানের মান বেড়েছে, সময় বেড়েছে। কিন্তু ভালবাসা আর আন্তরিকতা আছে আগের মতই। শুধু সুখের বশে বা ভালবাসার কারণে যে অনুষ্ঠান শোনা শুরু করেছিলাম, সেটা এখন আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। মৃত্যুর আগে এ নেশা ছাড়া যাবে না। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনতে শুনতে শুধু সিআরইকে নয়, চীনকেই ভালবেসে ফেলেছি। চীনের মানুষ, চীনের শুক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি সবই আমার প্রিয়। আমি চীনকে খুবই ভালবাসি। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের অনুষ্ঠান শুনতে শুনতেই একটি শ্রোতা সংঘ গড়ে তুলেছিলাম। তার নাম ইন্টারন্যাশনাল লিসেনার্স ক্লাব। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই আমি এ ক্লাবের সভাপতি। এখনো। ইন্টারন্যাশনাল লিসেনার্স ক্লাব সিআরআই'র অনুষ্ঠান নিয়ে সভা সেমিনার করে থাকে। জীবনে তো কত পরিবর্তনই এসেছে। এক সময় ছাত্র ছিলাম, এখন চাকুরি করি। একা ছিলাম, বিয়ে করেছি। এখন ছেলে মেয়েও আছে। কিন্তু জীবনের কোন পরিবর্তনই চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাথে আমার সখ্যতায় চিড় ধরাতে পারেনি। আগের মত এখনো শুনছি, নিয়মিত শুনছি, ভবিষ্যতেও শুনব। ভালবাসাও আছে আগের মতই, থাকবে ভবিষ্যতেও। চীন আন্তর্জাতিক বেতার তো এখন আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান আমার ভালবাসার নাম, আমার পরিবারের ভালবাসার নাম, আমার সমাজের ভালবাসার নাম। সিআরআই'র অনুষ্ঠান শুনি, নিয়মিত, কিন্তু খুব কম সময়ই একা একা অনুষ্ঠান শুনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাংলা অনুষ্ঠান শুনি পরিবারের সবাই মিলেমিশে আমার মা, স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলে সবাই এক সাথে। মাঝে মধ্যে অনুষ্ঠান শুনি বন্ধুদের সাথে বা ক্লাবের সদস্যদের সাথে এক সাথে। আমি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত বিধায় অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন-কেন আপনি নিয়মিত অনুষ্ঠান শুনেন? তাদেরকে বলি, মানুষ তার সব কাজই করে ভাললাগা আর ভালবাসা থেকে। আমিও ভালবাসা থেকেই সিআরআই'র অনুষ্ঠান শুনি। এ বছর, ২০০৯ সালে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপিত হয়েছে। সিআরআই'র বাংলা অনুষ্ঠানের ৪০ বছর পূর্তি আমি প্রাণভরে উপভোগ করেছি। আজ এই সন্ধিক্ষণে আশা করি, ২৩৬৯ সালে অসংখ্য শ্রোতার সাথে আমার কোন বংশধরও চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান ৪০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান উপভোগ করবে। আমার এ স্বপ্ন সত্যি হবে-সিআরআই'র জন্য সে সাফল্যই কামনা করি। শাহাদত হোসেন, প্রথমে আপনাকে আমাদেরকে অভিনন্দন জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমাদের অনেক আনন্দিত হই যে, এত বেশি শ্রোতা আমাদের সঙ্গে এত সুন্দর স্মুতি রয়েছে। আমরাও আশি ও বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে আমাদের মধ্যে আরো বেশি সুন্দর ও সুখ স্মৃতি হবে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা