Web bengali.cri.cn   
সি ছিয়াং শহরের জোনহাইতে প্রাকৃতিক নির্মাণ
  2014-02-14 18:22:21  cri


চীনের উপগ্রহ উত্ক্ষেপণ কেন্দ্র সি ছাং শহরে অবস্থিত হওয়ার কারণে মানুষ সি ছাংকে উপগ্রহ শহর নামে অভিহিত করে। জোনহাই হ্রদ সি ছাংয়ের মাতৃহ্রদ এবং সি ছুয়ান প্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক মিঠেপানির হ্রদ। গত সত্তর ও আশির দশকে প্রণালীবদ্ধ পরিকল্পনার অভাব এবং যুক্তিহীন উন্নয়নের কারণে হ্রদের আয়তন ৩৪ বর্গ কিলোমিটার থেকে ২৭ কিলোমিটারে নেমে আসে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে সি ছাং সরকার 'জোনহাই সংরক্ষণ নীতিমালা' জারি করে এবং জোনহাই হ্রদের পরিবেশ অনাবিল করার জন্য কাজ শুরু করে। ২০১০ সাল থেকে জোনহাই জলাভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রকল্পও শুরু হয়। আজকের জোনহাইর দৃশ্য কেমন? এখন আমরা একসাথে সেটা দেখতে যাচ্ছি।

অস্তকালে হাই হ্রদের ওপর সুন্দর লাল রং করে সূর্য। নৌকায় করে বেড়ানোর সময় মাঝে মাঝে দেখতে পাই উড়ন্ত ইগ্রেট পাখি বা হ্রদের নলখাগড়ার ঝাড়ে বসা ধূসর সারস পাখি। এমনকি দেখতে পারি সাইবেরিয়া থেকে আসা ব্ল্যাক হোডেড গল পাখি। শীতকাল হলেও জোনহাই হ্রদে পর্যটক আসে; উষ্ণ রোদে পাখি দেখে। জোনহাইর শান্ত ও জলাভূমির প্রাকৃতিক দৃশ্য তাদের ভাল লাগে।

মাডাম চৌ ই তার স্বামীর সঙ্গে ছেং তু থেকে গাড়ি চালিয়ে জোনহাই আসেন এবং তারা এখানে কিছু দিন থাকতে চান। হ্রদে ছবি তোলার সময়ে তিনি জো হাইর দৃশ্যের প্রশংসা করে বলেন,

"আমরা এখানকার জলাভূমি খুব পছন্দ করি। মনে প্রশান্তি আসে। এখানকার আবহাওয়া ভাল, পরিবেশও ভাল। আমি কখনো এত বড় জলাভূমি দেখিনি এবং সুন্দর ছাড়া কিছুই বলতে পারছি না।"

জোনহাই কীভাবে পরিবর্তিত হলো? সি ছাং শহরের ভাইস-মেয়র ইউয়ু মিং লিয়াং সংবাদদাতাকে জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ ও বংশাবলীদের সুবিধার উদ্দেশ্যে সরকার ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেয়। তিনি বলেন,

"সরকার মনে করে যদিও আমরা জো হাইয়ের উন্নয়ন ঘটাতে পারি না, তবে আমরা জো হাই সংরক্ষণ করতে পারি। হ্রদের কাছে মাচান ঘর বাইরে সরে করি এবং বাক্স বা জাল দিয়ে মাছ চাষ নিষিদ্ধ করি। এর পাশাপাশি আমরা জোনহাই হ্রদে প্রবাহিত বর্জ্য পানি পরিশোধন করি এবং কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেই। আমাদের প্রচেষ্টায় জোনহাই হ্রদের পানির মান উন্নত হয়েছে।"

২০১০ সালে জোনহাই জলাভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রকল্প শুরু হয় এবং তৃতীয় বছরে চতুর্থ পর্যায়ের প্রকল্পের মাধ্যমে জোনহাই জলসীমার আয়তন বেড়ে ৩০ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়ায়। আগামী দু বছরে পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্যায়ের প্রকল্প শেষ হওয়ার পর জোনহাই জলসীমার আয়তন ৩৪ বর্গ কিলোমিটারে দাঁড়াবে এবং চীনের বৃহত্তম নগর জলাভূমিতে পরিণত হবে।

জোনহাই জলাভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রকল্প চলাকালে সবচেয়ে বড় কষ্টের ব্যাপার হলো অধিবাসীদের সরিয়ে নেওয়া। তারা এখানে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করার কারণে জায়গাটি ত্যাগ করতে চায় না। ৬৫ বছর বয়সী লি হুয়া উ একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈন্য। বর্তমানে তিনি একজন স্নানাদি কর্মী হিসেবে জোনহাই জলাভূমি সংরক্ষণ অঞ্চলে কাজ করেন। তিনি ছিলেন জোনহাই এলাকার একজন অধিবাসী এবং তিনিই প্রথম সেখান থেকে সরে যাওয়ার চুক্তিদে স্বাক্ষর করেন। প্রথমে তার প্রতিবেশীরা তাকে বুঝতে পারেন না, এমনকি তাকে ঘৃণা করেন। লি হুয়া উ বলেন,

"আমার মনে হয়, আমাদের কৃষকরা সরকারের এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। আমাদের আবাসিক পরিবেশ ভাল হবে এবং এই প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল কি সুন্দর! তখন আমি প্রথম এখান থেকে সরে যাওয়া চুক্তি স্বাক্ষর করি এবং যারা আমাকে প্রথম দিকে বুঝতে পারননি, তারা এখন বলেন আমার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। "

লি হুয়া উ যেমন বলছিলেন, তেমনিই বর্তমানে জোনহাইয়ের পুরনো অধিবাসীরা বেশ ভাল জীবনযাপন করছে। ক্ষতিপূরণ ছাড়াও, তারা কাজ ও জীবনযাপনসহ নানা বিষয়ে সরকারের সাহায্য পায়। মেয়ার ইউয়ু মিং লিয়াং বলেন,

"আমরা স্থানান্তরিত অধিবাসীদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা প্রদান করি। তাদের জন্য আমরা নতুন একটি আবাসিক এলাকা নির্মাণ করেছি এবং প্রত্যেককে ৭০ বর্গকিলোমিটারের একটি নতুন বাসা ও ২০ বর্গকিলোমিটার দোকান দেই। বিশেষ করে তিনি যদি পরিবারের একমাত্র সন্তান হন, তাহলে তাকে ১৪০ বর্গকিলোমিটার বাসা দেই। তাছাড়া, জলাভূমি সংরক্ষণ অঞ্চলের নির্মাণ শেষ হওয়ার পর, আমরা পুরনো অধিবাসীদের দিয়ে এখানকার কাজ করাই। আমদের স্নানাদি কর্মী, প্রহরী এবং গাইডসহ কর্মীদের অধিকাংশ জলাশয় এলাকার আদি বাসিন্দা। আদি বাসিন্দারা আমাদের কাজকে সমর্থন করে বলে জলাভূমি ফিরে দেওয়ার কাজ সুন্দরভাবে চলছে।"

চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির ১৮তম জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রতিবেদনে 'প্রাকৃতিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সুন্দর চীন নির্মাণ'-এর উদ্দেশ্য উপস্থাপন করা হয়। সি ছিয়াং সরকার জোনহাই জলাভূমি ফিরে দেওয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন করেছে। তাদের প্রচেষ্টায় প্রমাণিত হয় যে, প্রচেষ্টা নিলে প্রাকৃতিক সংস্কৃতি বাস্তবায়িত হয়।

সম্প্রতি সি ছাং উত্ক্ষেপণকেন্দ্র থেকে উত্ক্ষিপ্ত চীনের ছাং এ-৩ চাঁদ অনুসন্ধান উপগ্রহ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে সি ছাং শুধু মহাকাশযান নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক নগর হিসবে অনেক বেশি পর্যটক আকর্ষণ করবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক