Web bengali.cri.cn   
চীনা সংস্কৃতি: চীনাদের বসন্ত উত্সব-ছুন চিয়ে
  2013-02-26 17:20:00  cri

    সুপ্রিয় শ্রোতা, আগামী সপ্তাহে চীনাদের সবচেয়ে বড় উত্সব-বসন্ত উত্সব শুরু হবে। বসন্ত উত্সবকে চীনা ভাষায় বলা হয় 'ছুন চিয়ে'। যুগের পরিবর্তনের সংগে সংগে বসন্ত উত্সবের বিষয়বস্তুরও কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নাগরিকদের বসন্ত উত্সব পালনের কায়দারও কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু চীনা নাগরিকদের জীবনে ও চিন্তাভাবনায় বসন্ত উত্সবের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় নি।

    ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে, চীনাদের বসন্ত উত্সবের ইতিহাস চার হাজার বছরেরও বেশি সময়ের। তবে তখন এই উত্সবের নাম বসন্ত উত্সব ছিল না, উত্সবের দিন তারিখও নির্দিষ্ট ছিল না। খ্রিষ্টপূর্ব দু হাজার এক শ' অব্দে তখনকার অধিবাসীরা বৃহষ্পতিগ্রহের একবার প্রদক্ষিণের সময়কে এক 'সুই' বলে অভিহিত করতেন। সে সময় বসন্ত উত্সবের নাম ছিল 'সুই'। খ্রিষ্টপূর্ব এক হাজার অব্দের কাছাকাছি সময় তখনকার অধিবাসীরা বসন্ত উত্সবকে চীনা ভাষায় 'নিয়েন' বলে ডাকতেন। 'নিয়েন' অর্থ বছর। তবে তখনকার বছরের অর্থ ছিল ভাল ফলন। যে বছর খাদ্যশস্যের ভালো ফলন হতো, সে বছরকে ফসলের নিয়েন বলা হতো। যে বছর খুব ভালো ফসল হতো, সে বছরকে ভালো ফসলের 'নিয়েন' বলা হতো।

    চীনের ঐতিহ্য অনুসারে, বসন্ত উত্সব চান্দ্রবর্ষের শেষ মাসের ২৩তম দিবস থেকে শুরু হয়ে নতুন বছরের প্রথম মাসের ১৫তম দিন অর্থাত্ লণ্ঠন উত্সব পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অর্থাত্ বসন্ত উত্সব উদযাপনের সময় প্রায় তিন সপ্তাহ। তবে পুরনো বছরের শেষ দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন হচ্ছে এ উত্সবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই দিন।

    বসন্ত উত্সবকে স্বাগত জানানোর জন্য চীনের শহরাঞ্চল ও পল্লী অঞ্চলের অধিবাসীরা নানা ধরনের আয়োজন করে থাকেন। চীনের গ্রামীণ অঞ্চলে উত্সব উদযাপনের প্রস্তুতির কাজ বছরের শেষ মাসের প্রথম দিক থেকেই শুরু হয়। কৃষকরা বাড়ীঘর পরিষ্কার করেন, লেপতোষক ধুয়ে পরিষ্কার করেন, বাজার থেকে বসন্ত উত্সবের খাবার এবং মেহমানদের আপ্যায়নের জন্য মিষ্টিজাতীয় খাবার, কেক, ফলমুল, মাছ-মাংস ইত্যাদি কিনেন।

    বড় বড় শহরে উদযাপনী প্রস্তুতিও উত্সবের অনেক দিন আগে থেকে শুরু হয়। সাংস্কৃতিক বিভাগগুলো ও বিভিন্ন শিল্পী দল উত্সবকালের সাংস্কৃতিক কর্মসূচি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে, টেলিভিশন কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়, বিভিন্ন পার্ক নানা ধরনের মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেয় আর বিপনি বিতানগুলো ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা ও বিদেশ থেকে পণ্য জোগাড় করে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বসন্ত উত্সবকালে চীনাদের কেনাকাটা তাদের গোটা বছরের কেনাকাটার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।

    চীন একটি বড় দেশ। কাজেই অঞ্চলভেদে বসন্ত উত্সব উদযাপনের রীতিনীতিতে খানিকটা ভিন্নতা আছে। তবে বসন্ত উত্সবের আগের রাত্রে অর্থাত্ পুরনো বছরের শেষ রাত্রে পরিবারের সবার এক সংগে মিলে বছরের শেষ খাওয়া সম্পন্ন করার প্রথা গোটা দেশে প্রায় একই। দক্ষিণ চীনে বছরের শেষ খাবারের টেবিলে দশ-বারো ধরনের খাবার থাকে। এগুলোর মধ্যে তৌফু অর্থাত্ সয়াবিনের দই ও মাছ থাকতেই হবে। কারণ এই দুটি খাবারের চীনা প্রতিশব্দের উচ্চারণের সংগে সমৃদ্ধির প্রতিশব্দের উচ্চারণের অনেক মিল আছে। এতে নতুন বছরে চীনাদের আশা-আকাংখা প্রতিফলিত হয়। উত্তর চীনে বছরের শেষ খাবারের টেবিলে চিয়াও চি নামক একটি খাবার অবশ্যই থাকতে হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই এক সংগে মিলে চিয়াও চি তৈরি করে। চিয়াউ চি চীনের একটি জনপ্রিয় খাবার। এটা মাংসের পুর দেওয়া এক ধরনের কুলি পিঠে। বছরের শেষ রাতে পরিবারের সকল সদস্য একসঙ্গে চিয়াও চি তৈরি করে ফুটন্ত পানির মধ্যে সেদ্ধ করে ভিনেগার ও অন্যান্য মশলা দিয়ে খায়।

    সুপ্রিয় শ্রোতা, এই হলো চীনের বসন্ত উত্সব উদযাপনের ইতিহাস ও রীতি। চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে প্রশ্নগুলো ইমেলে আমার কাছে পাঠাতে পারেন। আমাদের ইমেল ঠিকানা হচ্ছে: ben@cri.com.cn। আগামী আসরে আবার কথা হবে। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। জাই চিয়েন। (ইয়াং ওয়েই মিং/এসআর)

মন্তব্য
মন্তব্য
লিঙ্ক