Web bengali.cri.cn   
চীনা সংস্কৃতি: ছি সি চিয়ে – চীনের নিজস্ব ভালবাসা দিবস
  2013-08-28 08:39:30  cri


সুপ্রিয় শ্রোতা, আজকের 'স্বর্ণার সাথে শিখুন' আসরে চীনের নিজস্ব ভালবাসা দিবস – ছি সি চিয়ের কথা আপনাদেরকে জানাবো আমি ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা।

চান্দ্র বর্ষের সপ্তম মাসের সপ্তম দিন চীনের ঐতিহ্যবাহী ছি সি উত্সব। উপকথায় বলা হয়েছে, এদিন আকাশের আলটাইর নক্ষত্র ও অভিজিত নক্ষত্রের মিলনের দিন। এই উত্সব সম্পর্কে একটি কাহিনী এখনো চীনাদের মুখে মুখে ফেরে।

প্রাচীনকালে একদিন নীল আকাশে কোনো মেঘ ছিল না। স্বর্গীয় রাজা মনে করলেন, আকাশে শুধু নীল রঙ আছে বলে সেটা সুন্দর দেখাচ্ছে না। তাই তিনি তার সাত মেয়েকে কাপড় বুনে আকাশের জন্য একটি পোশাক তৈরি করার আদেশ দেন। সাত মেয়ের মধ্যে ছয়টির বোনা কাপড়ের রঙ ছিল সাদা অথবা ধুসর; দেখতে তেমন সুন্দর নয়। রাজার কনিষ্ঠ মেয়েটি ছিল বুদ্ধিমতী। সে বাগানে এক ধরনের সাত রঙের ফুল আবিষ্কার করে। সে বাগান থেকে এই ধরনের সাত রঙের অনেক ফুল তুলে ফুলগুলো থেকে রস বের করে। তারপর সে ফুলের রস সুতার সংগে মিশিয়ে রঙিন সুতা তৈরি করে এবং সেই সুতা দিয়ে রংবেরঙের কাপড় বোনে। বড় ছয় বোন ছোট বোনের বোনা সুন্দর কাপড় দেখে তার প্রশংসা করে এবং এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, দিনের বেলায় আকাশ সাদা রঙের কাপড় পরবে, বৃষ্টির দিন ধুসর রঙের কাপড় পরবে এবং ভোর ও সন্ধ্যাবেলায় পরবে। রাজা এই খবর পেয়ে খুশি মনে তার কনিষ্ঠ কন্যাকে চিনুই অর্থাত বুনন ললনা নাম দেন।

বুনন ললনা রোজ কাপড় বুনতে থাকে। ক্লান্ত হলে মাথা নীচু করে আকাশের নীচের দৃশ্য দেখে। একদিন এক কৃষক যুবক রাজকন্যার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বুনন ললনা দেখতে পায়, ওই কৃষক সব সময় একা ক্ষেতে কাজ করে। বিশ্রামের সময় শুধু পাশে দাঁড়ানো গরুর সংগে কথা বলে। দেখে বুনন ললনার মনে মায়া জাগে। ওই কৃষকের নাম নিউ লাং।

একদিন হঠাত্ কৃষকের বুড়ো গরু তাকে বলল, আগামীকাল সপ্তম মাসের সপ্তম দিন। স্বর্গীয় রাজার সাত মেয়ে আগামীকাল আকাশ থেকে নেমে নদীতে গোসল করতে আসবে। তুমি বুনন ললনার কাপড় লুকিয়ে রাখবে, তাহলে মেয়েটি পরে তোমার স্ত্রী হবে। গরুর কথা শুনে নিউ লাং খুব খুশি হয়। সে গরুর কথামতো মেয়েটির কাপড় লুকিয়ে রাখতে মনস্থির করে।

পরদিন সকালে নিউ লাং নদীর তীরের শরবনে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। একটু পর আকাশ থেকে সাত টুকরো মেঘ ভেসে আসে; প্রতি টুকরো মেঘের উপর একটি পরী বসা। সাত পরী নদীর তীরে এসে কাপড় খুলে নদীতে গোসল করতে শুরু করে। ওই সময় নিউ লাং এক লাফে সবচেয়ে কনিষ্ঠ পরী অর্থাত বুনন ললনার কাপড় নিয়ে শরবন ত্যাগ করে। শরবনের পানির শর শর শব্দ শুনে নদীতে গোসলরত সাত পরী ভয় পেয়ে নদী থেকে তীরে ওঠে। ছয় পরী নিজেদের কাপড় পরে আকাশে উড়ে যায়। শুধু বুনন ললনা হতভম্ব হয়ে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকে নিজের কাপড় না পেয়ে। এই সময় নিউলাং তার কাছে গিয়ে আমতা আমতা করে বলে, তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হও, তাহলে আমি তোমার জামা-কাপড় ফেরত দিতে পারি। বুনন ললনা বুঝতে পারে, যে ছেলেটি তার সংগে কথা বলছে, সে-ই আকাশ থেকে আবিষ্কার করা সেই কৃষক যুবক। তাই সে কৃষক যুবককে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।

সে রাতে গরুকে সাক্ষী রেখে নিউলাং ও বুনন ললনার বিয়ে হয়। দু বছর পর তাদের একটি ছেলে ও এক মেয়ে হয়। স্বামী জমি চাষ করে, স্ত্রী কাপড় বোনে আর বাচ্চাদের দেখাশোনা করে। ভারী সুখে কাটছিল তাদের জীবন।

কিন্তু জীবনে সুখের সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়; সাত বছর পার হয়ে যায় দেখতে দেখতে। আকাশের একদিন পৃথিবীর এক বছরের সমান। প্রতি সাত দিন পর পর স্বর্গীয় রাজা তার সাত মেয়ের সংগে একবার দেখা করেন। তিনি যখন জানতে পারেন যে, তার কনিষ্ঠ মেয়ে আকাশে ফিরে আসে নি এবং পৃথিবীর এক কৃষকের সংগে তার বিয়ে হয়েছে, তখন তিনি ভীষণ রেগে যান।

বছরের সপ্তম মাসের সপ্তম দিন তিনি তার স্বর্গীয় সৈনিকদের পৃথিবী থেকে তার বুনন ললনাকে ধরে আকাশে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। স্বর্গীয় সৈনিকরা নিউ লাংয়ের হাত থেকে বুনন ললনাকে ছিনিয়ে আনে। স্ত্রীর পেছন পেছন নিউলাংও তার দু'টি সন্তানকে দু'টি বড় ঝুড়ির মধ্যে করে কাঁধে নিয়ে রওয়ানা হয়। তার গরু নিজের মাথার একটি সিং দিয়ে একটি উড়ন্ত নৌকা তৈরি করে দেয়। নিউলাং ও তার ছেলেমেয়ে এই উড়ন্ত নৌকাযোগে আকাশের দিকে ছুটে যায়। সন্তান ও নিউলাংয়ের চিত্কার শুনে বুনন ললনা স্বর্গীয় সৈনিকদের বাধা উপেক্ষা করে স্বামী ও ছেলেমেয়ের সংগে মিলনের চেষ্টা করে। ঠিক ওই সময় স্বর্গীয় রাজা হঠাত্ তার একটি বাহু বাড়িয়ে দিয়ে মুহুর্তের মধ্যে একটি ছায়াপথ তৈরি করেন, ঠিক নিউলাং ও বুনন ললনার মধ্যে। ওই সময় আকাশ থেকে বহু দোয়েল পাখি জড় হয়ে সেই ছায়াপথের উপর এক সেতু তৈরি করে ফেলে। নিউ লাং ও বুনন ললনা এই দোয়েল পাখির সেতুতে দাঁড়িয়ে মিলিত হয়। স্বর্গীয় রাজা নিউলাং ও বুনন ললনাকে প্রতি বছরের সপ্তম মাসের সপ্তম রাত্রে দোয়েল পাখির সেতুতে একবার মিলনের অনুমতি দেন।

পরবর্তীকালে চীনে মনে করা হয় যে, প্রতি বছরের সপ্তম মাসের সপ্তম দিন হচ্ছে অল্পবয়সী মেয়েদের বুনন ললনার কাছ থেকে বুনন কৌশল শেখার দিন। তাদের হাতে রঙিন সুতা ও সাতটি সুই থাকে। যারা খুব সহজেই সাতটি সুইয়ের ছিদ্রে রঙিন সুতা পরাতে পারে, তারা বুদ্ধিমতী ও কর্মদক্ষ মেয়ে। উপকথায় বলা হয়, সেদিন রাত্রে বাচ্চারা আঙুরের মাচার নীচে নিউলান ও বুনন ললনার কথাবার্তাও শুনতে পায়।

সুপ্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান এ পর্যন্ত। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। (ইয়াং ওয়েই মিং/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক