Web bengali.cri.cn   
ব্রাসেলসের পায়রি চিড়িয়াখানা
  2014-04-12 15:17:13  cri

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ৩১ মার্চ বেলজিয়ামে রাষ্ট্রীয় সফর করেন এবং ব্রাসেলসে বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ লিওপল্ড লুইস মারির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এদিন সি চিন পিং ও রাজা ফিলিপ ব্রাসেলসের স্থানীয় চিড়িয়াখানায় চীন থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া দুটি জায়ান্ট পান্ডার জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি বাগান উদ্বোধন করেন। যৌথ বৈজ্ঞানিক গবেষণার অংশ হিসেবে গত মাসের শেষ দিকে চীনের সিচুয়ান প্রদেশ থেকে হাউ হাউ এবং শিং হুই নামক পান্ডা দুটি ব্রাসেলসে পাঠানো হয়। চার বছর বয়সী পান্ডা দুটি আগামী ১৫ বছর ব্রাসেলসের এই বাগানে বসবাস করবে।

সি চিন পিং যে চিড়িয়াখানা সফর করেন তার নাম পায়রি।ফরাসি ভাষায় পায়রি মানে স্বর্গ। এ চিড়িয়াখানার বৈশিষ্ট্য,এর ইতিহাস এবং এর পিছনের ঘটনাসমূহ জানার জন্য আজ আমরা চিড়িয়াখানার মালিক এরিক ডোম্ব এর সঙ্গে পরিচিত হবো।

রাজধানী ব্রাসেলস থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পায়রি চিড়িয়াখানা খুব জনপ্রিয়। এক মাস আগে চীন থেকে সিং হুই ও হাও হাও নামে দুইটি পান্ডা এখানে নিয়ে আসা হয়। এ কারণে চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ডোম্ব খুব খুশি। তিনি বলেন, এক মাসের কোয়ারেনটাইন মেয়াদে দুটি পান্ডা ভালভাবে নতুন বাড়ির সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রেখে চলছে।

যখন পান্ডা দুটির কথা আসে তখন ডোম্ব-এর কথা শেষ হতে চায় না। তাঁর কাছে পান্ডা দুটি তাঁর দুজন বাচ্চার মতো। তিনি বলেন,"হাও হাও সব সময় খাবার খাচ্ছে এবং বেশ মোটাসোটা, হাও হাও সব সময় আনন্দ করছে। সে সব ধরণের বাঁশ পছন্দ করে এবং সুন্দর হাও হাও ম্যাডোনার মতো একজন তারকাতে পরিণত হচ্ছে। মানুষ যখন তার ছবি তোলে তখন সে অনেক আনন্দ পায়।

সিং হুইও খুব মজার। সে লাজুক ও স্নেহশীল। সে মানুষ দেখতে পছন্দ করে। তবে খাবার নিয়ে সে খুঁতখুঁতে, তাই আমরা তার পছন্দের বাঁশ খোঁজার জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।"

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও তাঁর স্ত্রী পেং লি ইউয়ানের চিড়িয়াখায় আসার খবর শুনে ডোম্ব আনন্দে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। একজন চীনা অনুরাগী হিসেবে নিজের চিড়িয়াখানায় চীনের প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানানো খুব গর্বের একটি ব্যাপার। তিনি ভাবছেন কিভাবে চিরিয়াখানার সবচেয়ে ভাল বিষয়গুলো প্রেসিডেন্টের সামনে তুলে ধরবেন এবং চিড়িয়াখানায় প্রেসিডেন্ট সি ও তাঁর স্ত্রী সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন। ডোম্ব বলেন,

"এ বারের এ সফরে তাঁদেরকে অভ্যর্থনা জানানো আমার সারা জীবনের একটি সুযোগ এবং প্রেসিডেন্ট সি ও তাঁর স্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে পারা আমার সৌভাগ্য। আমরা উত্তেজিত এবং সর্ব বিষয়ে সবচেয়ে ভাল করতে চাই। আমরা সব সময় বলি যে, মানুষের মনে প্রথম ছাপ ফেলার দ্বিতীয় সুযোগ নেই। প্রেসিডেন্টের মনে প্রথমেই ভালো ছাফ ফেলতে চাই আমি। চীন আমার স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকেই আমি এ দেশ ভালবাসি এবং চীনের সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে ভালবাসি। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে আমার উচিত্ চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য দেখানো। চীনা অতিথির আমার চিড়িয়াখানায় বিশ্রাম নেয়া আমার প্রত্যাশা। "

ছোটবেলা থেকে ডোম্ব চীনা সংস্কৃতিকে পছন্দ করেন। এমনকি নিজের চিড়িয়াখানায় বৃহত্তম একটি চীনা বাগান নির্মাণ করেন তিনি। ২০০৫ সালে নির্মিত হয় এ বাগান এবং নির্মাণে খরচ পড়ে ৮০ লাখ ইউরো। চীনা বাগানের প্রবেশ পথে চীনা সজ্জায় সজ্জিত তোরণে লেখা আছে তিনটি চীনা অক্ষর 'চুং কুও মেং', মানে চীনা স্বপ্ন।

ডোম্ব বলেন, তাঁর চীনা স্বপ্ন হল আরও বেশি মানুষের চীন সম্পর্কে জানতে পারা। তিনি বলেন, "১০ বছর আগে যখন আমি চীনা বাগান নির্মাণ শুরু করি তখন আমার একটি স্বপ্ন ছিল। আমি স্বচোখে চীনের সৌন্দর্য দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই শুধু চীনের বড় নগর বা শক্তিশালি অর্থনীতি তা নয়, আমি দেখতে চাই চীনের প্রাকৃতিক দৃশ্য, সংস্কৃতি, হস্তলিপিশিল্প, চিত্র, কবিতা ও খাবার। এগুলো আমার চীনা স্বপ্ন।"

অবশ্য প্রত্যেক বেলজিয়াম বা ইউরোপীয় মানুষের চোখে দেখা চীন এবং ডোম্বের দেখা চীন একই রকম নয়। কারণ তারা ডোম্বের মতো চীনকে এত ভালবাসেন না। তবে ডোম্ব কিন্তু এতে হতাশ হন না। তাঁর মতে যদি প্রত্যেকেই তাঁর মতো চীনকে পছন্দ করে তাহলে তাঁর স্বপ্নতো আর স্বপ্ন নয়। ডোম্ব একটি সত্য ও সার্বিক চীন মানুষের সামনে তুলে ধরতে চান এবং চীনের প্রতি মানুষের পক্ষপাতিত্ব পরিবর্তন করতে চান। তিনি বলেন, "অনেক মানুষই চীনকে ভয়াবহ একটি দেশ হিসেবে মনে করে। তাদের মনে চীন তার অর্থনৈতিক শক্তি নিয়ে এবিশ্বকে অতিক্রম করতে চায় । আমি চীন ও অন্য দেশের মৈত্রীর দূত হতে চাই এবং তাদেরকে জানাব চীন বিশ্বের সবচেয়ে ভাল দেশগুলোর অন্যতম। রহস্য ও অজ্ঞতা ভিন্ন জিনিস। রহস্য সবসময় থাকে, কারণ চীন ও আমাদের সংস্কৃতি এবং প্রথা ভিন্ন, তবে অজ্ঞতা একটি সমস্যা। চীন সম্পর্কে কিছু না জেনে ভুল ধারণা নিয়ে চীন দেখা একটি সমস্যা। চীনের একজন পুরাতন বন্ধু হিসেবে আমি ভুল ধারণা পরিবর্তন করতে চাই।"

বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে আসা মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন সবসময় একটি সমস্যা। তবে ডোম্ব এর মতে এটা ভয়ঙ্কর নয়, মজার একটি ব্যাপার এবং যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারেন তিনি। তিনি একটি গল্পের কথা উল্লেখ করেন, যখন তিনি চীনা বাগান নির্মাণ করছেন তখন তিনি প্রবেশ দ্বারে একটি পাথর দাঁড় করাতে চান । তিনি ইস্পাততুল্য দেয়ালের তাক ব্যবহার করতে চান, তবে নির্মাণ কাজে নিয়োজিত চীনা দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা এটির বিরোধিতা প্রকাশ করেন। তাদের মতে, নুড়ি দেয়ালের তাক হিসেবে ব্যবহার করা ভাল।

দু'জন এ নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে ডোম্ব বুঝতে পারেন যে, ইস্পাতে মরচে পড়বে, তবে নুড়িতে মরচে হবে না এবং তাঁর চীনা দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিতে সমস্যা দেখতে পান। ডোম্ব বলেন, "এ ব্যাপারটি আমাকে ভাল একটি শিক্ষা দেয়। সমাপ্তীর আগে অন্য মানুষের ধারণা বোঝার জন্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত্। আমি এ বিষয়টি কখনও ভুলে যাবো না।"

ডোম্ব নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বুঝতে পারেন যে, যোগাযোগের জন্য ধৈর্য প্রয়োজন। তবে প্রথমেই পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানো উচিত্। চীনের ব্যাপক ও বিশাল সংস্কৃতি অনেক জেনেছেন ডোম্ব, তবে অন্য ইউরোপীয় মানুষের জন্য চীনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, "চীনকে জানার জন্য একটি জীবন যথেষ্ট নয়। আমি ২০ বারের মতো চীনে গিয়েছি, তবে চীন সম্পর্কে আমার অজানা জিনিস অনেক। চীন বিশাল একটি দেশ। চীনের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের খাবার ও সংস্কৃতি ভিন্ন। সহজ বিষয় থেকে আমি আরও বেশি চীনকে জানতে চাই। এ চীনা বাগান ও পান্ডা থেকে আমাকে অনেক কাজ করতে হবে।"

ডোম্ব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, প্রচেষ্টা চালালে অবশেষে সুন্দর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040