Web bengali.cri.cn   
ব্রাসেলসের পায়রি চিড়িয়াখানা
  2014-04-12 15:17:13  cri

আগের একটি অনুষ্ঠানে আমরা বিশ্ব ভ্রমণ করা এক প্রবীণ দম্পতির সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম।আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আরেকটি প্রবীণ দম্পতির সঙ্গে পরিচিত হবো।

চু মেন চাই পেশায় ছিলেন একজন কূটনীতিক এবং বর্তমানে তাঁর বয়স ৭২ বছর । তিনি ১৯৬৫ সালে কুই চৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক হন। পরে তিনি বৈদেশিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। তিনি তান্জানিয়া, লাইবেরিয়া, মরিসাস, নেপাল ও কানাডায়ও কাজ করেছেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সুন লি না এবং বর্তমানে তাঁর বয়স ৬০ বছর। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজি শিক্ষিকা। অবসর নেওয়ার পর দু'জনেই পেইচিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন শুরু করেন। তবে ২০০৫ সালে দু'জন এ জীবনযাপন পরিত্যাগ করে কুই চৌ পাহাড়ী অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। গত ৮ বছরে দু'জন কুই চৌয়ের অনেক দরিদ্র অঞ্চলে যান এবং শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি তাদের মনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হয়ে ওঠে।

২০০৫ সালে চু মেন চাই ও সুন লি না আকস্মিক একটি সুযোগে টেলিভিশনে সু পেন ইউয়ু নামের এক তরুণের গল্প শুনে তাঁরা অভিভূত হন। তাঁরা জানেন না, একজন স্নাতক ছাত্র কিভাবে দারিদ্র্য ও নিঃসঙ্গতাকে সহ্য করে দরিদ্র শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন । সুন লি নাও এ তরুণের মতো কুই চৌ পাহাড়ী অঞ্চলে শিশুকে সাহায্য করতে চান। তাঁর স্বামী সু মিন চাইয়ের জন্মস্থান ঠিক কুই চৌ এবং স্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন তিনি। ২০০৫ সালের আগষ্ট মাসে সুন লি না ও চু মিন চাই কুই চৌ প্রদেশের ওয়াং মো জেলায় আসেন এবং তখন থেকে তাঁদের স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকের যাত্রা শুরু হয়। যেখানে শিক্ষকের অভাব, তাঁরা সেখানে যান এবং ৮ বছর ধরে তাঁরা অনেক গ্রামের প্রথমিক স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদেরকে পড়ান।

কুই চৌ পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চলের চিয়ান সান মিয়াও গ্রাম অনেকেরই অপরিচিত একটি জায়গা। ওখানকার শিশুরা শুধু মিয়াও জাতির ভাষা বলতে পারে এবং তারা হান ভাষা জানে না। সুন লি না ও চু মিন চাই অবাক হন যে, সারা স্কুলে শুধু একজন শিক্ষক । সুন লি না বলেন, নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর শুধু কয়েক জন শিক্ষক পাহাড়ে উঠেছেন এবং এখানে কাজ করেছেন। তাঁরা ঠিক এ স্কুলের ষষ্ঠ ও সপ্তম শিক্ষক। পাহাড়ে কোনো খাবার নেই, তাই নীচ থেকে খাবার নিয়ে পাহাড়ে উঠতে হয়। সুন লি না ও চু মিন চাইর আগের শিক্ষকরা সর্বোচ্চ ৬ মাস এখানে থাকতেন।

তবে শিক্ষার প্রতি এ গ্রামের মানুষের তীব্র উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখে সুন লি না ও চু মিন চাই এখানে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। আগে এ স্কুলে শুধু চীনা ভাষা ও গণিতবিদ্যা দু'টি ক্লাস ছিল। সুন লি না তাঁর ছাত্রছাত্রীর জন্য নতুন ক্লাস প্রণয়ন করেন। তিনি ইংরেজি,ক্রীড়া ও সংগীত ক্লাসে যোগ দেন। সকাল ৭টা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত সুন লি না ও চু মিন চাইয়ের কোনো বিশ্রাম নেই। কারণ শিক্ষক কম কিন্তু ছাত্রছাত্রী বেশি।

সারা স্কুলে শুধু ২টি ক্লাস রুম থাকার কারণে মানুষ এ স্কুলকে পকেট স্কুল বলে ডাকতেন। গ্রামের প্রতি পরিবার ৭ হাজার পাথর বহন করে নির্মাণ করেন এ স্কুল। স্কুলের শিক্ষক লি ইউয়ুন কুই গ্রামের একমাত্র সেকেন্ডারি স্কুলের স্নাতক ছাত্র এবং তখন তার মাসিক বেতন ছিল ১০০ ইউয়ান।

যখন সুন লি না ও চু মিন চাই চিয়ান সান প্রাথমিক স্কুলে আসেন তখন ক্লাস রুমে কোনো বিদ্যুত ছিল না, এমনকি জানালায় কোনো কাঁচও ছিল না। তাছাড়া, পাহাড়ের উপর কলের পানি নেই, যে পানি সবাই পান করে তা একটি পুকুরের পানি। অনেক সময় পুকুরের পানি এত ঘোলা থাকে যে, তা পান করা যায় না। পরিষ্কার পানি পান না করার কারণে সুন লি নার উদারাময় রোগ শুরু হয়। সুন লি না ও চু মিন চাই এ গ্রামে থাকার সময় ২ বছর তাঁরা কোনো ফল খান নি, তীব্র অতিবেগুনী আলোকরশ্মির কারণে সুন লি নার দৃষ্টিক্ষীণতা গুরুতর হয়ে ওঠে এবং শেষে তাঁর ডান চোখ অন্ধ হয়ে যায়। ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী চু মিন চাইয়ের শারীরিক পরিস্থিতিও ভাল নয় । তবে দু'জনের মতে তাদের কাজ অর্থবহ। সুন লি না বলেন, ' যখন আমরা এ স্কুল ছেড়ে চলে আসি তখন স্কুলের শিশুরা কয়েকটি ইংরেজি গান গাইতে পারে । এর আগে তারা কোন ইংরেজি জানতো না। এর চেয়ে টাকা ও খ্যাতির কোনো অর্থ নেই। '

তাদের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন মহল এ স্কুলকে সমর্থন দেয় বলে তাঁরা খুব আনন্দিত। এ সহযোগিতার ফলে স্কুলের শিশুরা নতুন কাপড় পায় এবং শিক্ষক লি ইউয়ুন কুইর বেতনও বৃদ্ধি হয় বলে স্কুলে অব্যাহতভাবে থাকতে পারেন তিনি।

বর্তমানে সুন লি না ও চুই মিন চাই কুই চৌ প্রদেশের চুন ই শহরের চুং সিন গ্রামের একটি প্রাথমিক স্কুলে কাজ করেন। আগের কয়েকটি স্কুলের চেয়ে এখানকার পরিস্থিতি ভাল, তবে এখনও এটি একটি অনগ্রসর স্কুল। চু মিন চাই আবিষ্কার করেন, এখানে যে ইংরেজি শিশুরা শেখে তা সব বোবা ইংরেজি, মানে তাদের কোন মৌখিক ইংরেজি পাঠ নেই। এখন চু মিন চাই মৌখিক ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন এবং তিনি ৯০ হাজার শব্দের একটি শিক্ষা-উপকরণ রচনা করেন এবং এ শিক্ষা-উপকরণ নিয়ে সারা জেলার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেন। বর্তমানে চু মিন চাইর ছাত্রছাত্রী ইংরেজি বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। চু মিন চাইর জন্য এটা সবচেয়ে ভাল একটি সুখবর।

৯ বছর আগে কুই চৌ আসার পর চু মিন চাই একবারও পেইচিংয়ে ফিরে আসেন নি। প্রতি বসন্ত উত্সব দু'জন স্কুলে কাটান । সুন লি নার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়, তাই প্রতি দু মাস অন্তর তিনি পেইচিংয়ে আসেন এবং কিছু ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কুই চৌ ফিরে যান। চুই মিন চাই বলেন, যতদিন কাজ করতে পারবেন তাঁরা ততদিন এ স্কুলে থাকবেন।


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040