0707jingji.m4a
|
চীন বর্তমান বিশ্বের যে-কোনো দেশের তুলনায় বেশি গাড়ি উত্পাদন করছে। দেশটিতে গাড়ি বিক্রিও হয় অন্য যে-কোনো দেশের তুলনায় বেশি। চীনের গাড়িশিল্প সমিতির হিসেব অনুসারে, ২০১২ সালে দেশে প্রায় দুই কোটি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চালু হওয়ার প্রথম বছর ১৯৭৮ সালে চীনে বার্ষিক গাড়ি উত্পাদনের সংখ্যা ছিল মাত্র ১ লাখ ৪৫ হাজার, যা বর্তমানের তুলনায় ১ শতাংশেরও কম। ১৯৭৮ সাল থেকে চীন বিদেশ থেকে গাড়িশিল্পসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি আমদানি করা শুরু করে। সে বছরই দেশটি জার্মানির ভক্সওয়াগনের সাথে যোগাযোগ শুরু করে এবং এর মধ্য দিয়ে উন্নত গাড়িশিল্প গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালায়।
১৯৭৮ সালে চীন সরকার জার্মানিতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়। প্রতিনিধিদলটি জার্মানির রাস্তায় ভক্সওয়াগনের বিভিন্ন মডেলের গাড়ি দেখার পর সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটির সদরদপ্তর পরিদর্শনের। ভক্সওয়াগন কর্তৃপক্ষ প্রতিনিধিদলটিকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানায়। কোম্পানির একমাত্র চীনা প্রকৌশলী লি ওয়েন পো প্রতিনিধিদলের জন্য অনুবাদকের কাজ করেন। পরিদর্শনের পর চীনের প্রতিনিধিদল ভক্সওয়াগনের প্রেসিডেন্টের কাছে চীনের গাড়িশিল্প উন্নয়নের ধারণা তুলে ধরে।
গত শতাব্দীর ৭০'র দশকের শেষ দিকে চীনে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে, মোটর গাড়ির চাহিদা বাড়তে থাকে। তখন চীন বাধ্য হয়ে প্রতি বছর, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে, বিদেশি মোটর গাড়ি আমদানি করতো। প্রতিনিধিদলটি জার্মানি সফর করার পর তত্কালীন জাতীয় পরিকল্পনা কমিটি প্রস্তাব করে যে, বিদেশ থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ এনে চীনে তা সংযোজন করা হোক। এভাবে উত্পাদিত গাড়ির এক-তৃতীয়াংশ আমদানিকৃত গাড়ির জায়গা দখল করবে এবং বাকি গাড়ি রপ্তানি করা যাবে।
এ প্রস্তাবের সাথে তখন 'আন্তর্জাতিক ব্যবসা' পত্রিকার গাড়ি সংস্করণের প্রধান সম্পাদক হো লুন একমত হতে পারেননি। তিনি বলেন, "বিদেশি গাড়ির পরিবর্তে নিজেদের তৈরি গাড়ি দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর এবং উদ্বৃত্ত গাড়ি রপ্তানি করার এই প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। কারণ, চীনের বিদ্যমান গাড়িশিল্পের ওপর নির্ভর করে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে এ খাতে বিদেশি পুঁজি এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে হবে।"
সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রথম দিকে, উন্নয়নের পদ্ধতি নিয়ে চীনে একাধিক অভিমত ছিল। বিদেশি কোম্পানির গাড়ি চীনের মাটিতে উত্পাদন করা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে ছিল নানা মুনির নানা মত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণালয়ের বহুজাতিক কোম্পানি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ওয়াং চি লো বলেন, "কেউকেউ বলেন, সব জিনিষ বিদেশ থেকে আমদানি করার দরকার নেই। অতীতে আমরা নিজের যোগ্যতাবলেই পারমাণবিক বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র ও কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করেছি। এর অর্থ, আমরা নিজেদের ওপর নির্ভর করে সব কাজ করতে পারবো। কিন্তু আমি মনে করি, এ ধারণা বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে। মনে রাখতে হবে, পারমাণবিক বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র ও কৃত্রিম উপগ্রহ বাজারে লেনদেন হয় না। এসব ক্ষেত্রে সরকার তার পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে দ্বিধা করে না। কিন্তু গাড়ি হচ্ছে বাজারে বিক্রয়যোগ্য পণ্য। স্রেফ একটা-দুটো গাড়ি উত্পাদন করলেই এক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জিত হয় না। এ ক্ষেত্রে চাই একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প গড়ে তোলা, যে শিল্পকে বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে।"
চীনে তৈরি প্রথম মোটর গাড়ি
১৯৫৮ সালে ছাংছু প্রথম গাড়ি উত্পাদন কারখানা চীনের প্রথম মোটর গাড়ি উত্পাদন করে। এ গাড়ির ব্র্যান্ড হচ্ছে 'তোংফাং'। হো লুন বলেন, তখন উত্পাদনের মান ভালো না হওয়ায়, এ গাড়িটির নকশার মানও কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি। তিনি বলেন, "এর মূল কারণ ছিল ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। সেটা কেবল একটি ইঞ্জিন বা একটি মোটরগাড়ির কাঠামোর দুর্বলতা ছিল না, সেটা ছিল সার্বিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। আমরা জানি, তখন একটি গাড়ি দশ হাজারেরও বেশি খুচরা যন্ত্রাংশ দিয়ে গঠিত হতো। এখন আরো জটিল, হয়তো ২০ হাজার খুচরা যন্ত্রাংশ লাগে। সে সময় চীন গাড়ির আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কোনো খুচরা যন্ত্রাংশ উত্পাদন করতে পারতো না। এটা ছিল সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।"