Web bengali.cri.cn   
ঘাড়ের ব্যথা থেকে বাঁচার উপায়
  2014-08-13 19:06:47  cri


প্রিয় শ্রোতা, শুনছেন পেইচিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। এখন রয়েছে আমাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন 'স্বাস্থ্য ও জীবন'। পরিবেশন করছি আমি ওয়াং হাইমান ঊর্মি এবং আলিমুল হক।

ঊর্মি: প্রিয় শ্রোতা, আপনার কি মাঝে মাঝে ঘাড়ে ব্যথা হয়? অনেকেই ঘাড়ে ব্যথা নিয়ে অভিযোগ করে থাকেন। নানান কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এ ব্যথা থেকে বেঁচে থাকারও উপায় আছে। আমরা আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানে ঘাড়ের ব্যথা নিয়ে আলোচনা করবো এবং এ ব্যথা থেকে বেঁচে থাকার জন্য চিকিত্সকদের দেওয়া কিছু পরামর্শ আপনাদের জানিয়ে দেব।

আলিম: হ্যাঁ, ঊর্মি, আসলে ঘাড় ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ হল 'সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস'। মেরুদন্ডের ক্ষয় রোগ হল 'স্পন্ডাইলোসিস'এবং মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশের ক্ষয়ে যাওয়া হল 'সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস'। আমাদের মেরুদন্ড হাড়, মাংশপেশী, গিঠ ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। কশেরুকা বা ভারটিব্রাগুলো একটার উপর আরেকটা ইন্টারভারটিব্রাল ডিস্ক এবং অন্যান্য গিঠ দিয়ে জুড়ে তৈরি হয় মেরুদন্ড। দুটো হাড়ের মাঝখানের ডিস্ক, অন্যান্য গিঠ, লিগামেন্ট সব কিছুই বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্ষয় হতে থাকে। মেরুদন্ডের হাড় ঘিরে রাখে একটা নালি বা ক্যানাল(ভারটিব্রাল ক্যানাল), যার ভিতর দিয়ে মস্তিস্ক থেকে নেমে আসে স্পাইনাল কর্ড এবং তা থেকে গাছের শিকড়ের মত নার্ভগুলো বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেরুদন্ডের হাড়ে পরিবর্তন হতে থাকে। ভারটিব্রা বা কশেরুকার মধ্যকার ডিস্কে তরল পদার্থ কমে গিয়ে ভঙ্গুর হয়,উচ্চতা কমে চিপ্টে যায় এবং তা অনেক সময় পিছনে সরে গিয়ে নার্ভের উপর চাপ দিয়ে ব্যাথার সৃষ্টি করে, যাকে বলে 'ডিস্ক প্রোলাপ্স'। এই ডিস্ক এর উচ্চতা কমার সাথে সাথে তৈরি হয় ছোটো ছোটো হাড়ের টুকরো বা অস্টিওফাইট। এই টুকরোগুলোও নার্ভের উপর চাপ দিয়ে ব্যথার সৃস্টি করতে পারে।

সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোসিস কেন হয়? অনেকে বলেন, এটি বৃদ্ধ বয়সের রোগ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কাও বাড়তে থাকে। নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হবার হার প্রায় সমান। সাধারণত ঘাড় সামনে ঝুকিয়ে কাজ করতে হয় এমন সব পেশার মানুষ এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। ঘাড়ে আঘাতের কারণেও এ রোগ হতে পারে।

এ রোগের মূল উপসর্গ হচ্ছে ব্যথা। এটা আগেই বলেছি। ঘাড়ের ব্যথা অনেক সময় কাঁধ থেকে উপরের পিঠে,বুকে, মাথার পিছনে বা বাহু হয়ে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সার্ভিক্যাল স্পন্ডোলাইসিসের সবচে মারাত্মক দিক হল যখন স্পাইনাল কর্ডের উপর চাপ পড়ে। এ থেকে চার হাত-পায়ে দুর্বলতা, হাটতে অসুবিধা,পায়খানা-প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া,ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে । এ ধরনের অবস্থাকে বলে সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোটিক মাইলোপ্যাথি (Crevical spondylotic myelopathy)। এ অবস্থায় ঘাড় নাড়াতে গেলে ব্যথা লাগে। অবস্থা মারাত্মক হলে ডাইনে-বায়ে ঘাড় ঘোরান মুস্কিল হয়; ঘাড় জ্যাম হয়ে যায়।

প্রিয় শ্রোতা, অসুস্থ হলে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আপনার ঘাড়ে ব্যথা হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন এবং তার দেওয়া ব্যবস্থাপত্র অনুসারে রোগের চিকিত্সা করান। অন্যান্য রোগের মতো, ঘাড়ের ব্যথার ক্ষেত্রেও চিকিত্সকরা আগে রোগ ও রোগের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন, বিভিন্ন পরীক্ষা করেন এবং অবশেষে ওষুধ দেন, পরামর্শ দেন। আমাদেরকে অবশ্যই তাদের পরামর্শ অনুসারে চিকিত্সা করাতে হবে, ওষুধ খেতে হবে।

আমরা আজকের অনুষ্ঠানে ঘাড়ের ব্যথা থেকে বেঁচে থাকতে চিকিত্সকদের দেওয়া কয়েকটি পরামর্শ নিয়েই অালোচনা করবো। হ্যা, আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে নিলেই, অনেকক্ষেত্রে আমরা ঘাড়ের ব্যথা থেকে রেহাই পেতে পারি।

ঊর্মি: আলিম ভাইকে ধন্যবাদ। এখন আমি আজকের প্রথম পরামর্শটি নিয়ে আলোচনা করবো।

পরামর্শ ১: এসি'র ঠাণ্ডা বাতাস থেকে সাবধান থাকুন

গরমের সময় সাধারণত অফিস-আদালতে সারাক্ষণ এসি চলে। মাঝে মাঝে এসি বন্ধ রাখুন। আর যদি আপনার অফিসকক্ষটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত থাকে, তবে চেষ্টা করুন এসির ঠান্ডা বাতাস যেখান দিয়ে বেরিয়ে আসে, সেখান থেকে দূরে থাকতে। তা-ও সম্ভব না-হলে, গায়ে অতিরিক্ত কাপড় চাপান, ঠাণ্ডা থেকে নিজের শরীরকে বিশেষ করে মেরুদণ্ড ও মেরুদণ্ডের পেশীকে রক্ষা করুন। কেউকেউ অফিসে একটি জ্যাকেট রাখেন। এটি ভালো অভ্যাস। গরমের সময় আমরা সাধারণত বাসা থেকে হালকা কাপড় পড়ে বের হই। গরম কাপড় নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। অফিসে তাই একটা পাতলা জ্যাকেটজাতীয় কাপড় রাখা ভালো। মেয়েরাও একটি স্কার্ফ, জ্যাকেট বা চাদরজাতীয় কাপড় রাখতে পারেন। এ অভ্যাস আপনাকে ঘাড়ের ব্যথা থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে।

আলিম: পরামর্শ ২: দুপুরে স্বল্পকালীন বিশ্রামের সঠিক নিয়ম মেনে চলুন

অফিসে দুপুরের খাবারের পর খানিকটা বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। এ সময় নিজের আসনেই খানিকটা সময় ঘুমিয়ে নিতে পারেন। অনেকে আসনে বসে থেকেই চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। আবার কেউকেউ টেবিলে দু'হাত বিছিয়ে তার উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। এটা মোটেও ঠিক নয়। এভাবে ঘুমালে বা বিশ্রাম নিলে আপনার ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। আর যাদের ঘাড়ের ব্যথা আছে, তাদের ব্যথা এতে বেড়ে যাবার আশঙ্কা থাকবে। এক্ষেত্রে পেছনে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নিন। প্রয়োজনে মাথার পেছনে একটি ছোট বালিশ ব্যবহার করতে পারেন।

ঊর্মি: এখন আমি তিন নম্বর পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করি।

পরামর্শ ৩: কম্পিউটার ও টেলিভিশনের সামনে সময় ব্যয় করা কমিয়ে দিন

আগেই বলেছি, যারা কম্পিউটারে বেশি কাজ করেন, তাদের ঘাড়ের ব্যথা রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকে। তো, যাদের জীবিকার জন্য এ কাজ করতে হয়, তাদেরতো করতেই হয়। কিন্তু কম্পিউটারে কাজ করার সময়ও কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। যেমন: একটানা ২০ মিনিটের বেশি কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা উচিত নয়। প্রতি ২০ মিনিট পরপর উঠে দাঁড়ান, একটু হাঁটাহাঁটি করুন। আর ছুটির দিনে বাসায় চেষ্টা করুন কম্পিউটার থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে। পাশাপাশি টিভির সামনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করাও কমাতে হবে। যতক্ষণ ঘরে আছেন, চেষ্টা করুন ঘরের ছোটখাটো কাজ করতে, যেমন: ঘর পরিস্কার, জানালার কাঁচ মোছা ইত্যাদি। এতে আপনার শরীরও ভালো থাকবে, মেরুদণ্ডও ভালো থাকবে।

আলিম: এখন আমি পরামর্শ ৪ সবাইকে জানিয়ে দেব।

পরামর্শ ৪: ঘুমের সময় বেশি এপাশ-ওপাশ করলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।

ঘুমানোর সময় মানুষ মাঝে মাঝে এপাশ-ওপাশ করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ঘন ঘন এপাশ-ওপাশ করা ঘাড়ের জন্য ভালো নয়। তাতে ঘাড়ে স্টিফনেস দেখা দিতে পারে। আসলে, ঘরের তাপমাত্রা যথাযথ না-হলে, আমাদের সাউন্ড স্লিপ হয় না। ঠিক তখনই ঘুমের মধ্যে এপাশ-ওপাশ করার সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই, ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করুন।

ঊর্মি: পরামর্শ ৫: মেজাজ শান্ত রাখুন, দুশ্চিন্তা পরিহার করে চলুন

গরমে আমাদের মেজাজ একটু বেশিই চড়া থাকে। কিন্তু মেজাজ চড়ে গেলে বা অধিক দুশ্চিন্তা করলে আমাদের হাড়, হাড়ের জয়েন্ট ও হাড়ের পেশীর ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমরা যখন রিলাক্স মুডে থাকি, তখন আমাদের ঘাড় তথা মেরুদন্ডের হাড় ও পেশীগুলোও রিলাক্স থাকে, বিশ্রাম পায়। আমাদের মেজাজ যখন চড়া থাকে এবং আমরা যখন দুশ্চিন্তা করি, তখন ঠিক উল্টোটা ঘটে। তাই উত্তেজনা পরিহার করুন, দুশ্চিন্তাকে দূরে ঠেলে দিন। তাতে ঘাড়ের ব্যথাও আপনার কাছ থেকে দূরে থাকবে।

আলিম: আসলে মেজাজ খারাপ করা ভালো নয়। দুশ্চিন্তাও কোনো উপকারে আসে না। তাই আমাদের এ দুটোই পরিহার করি উচিত। তো, আমি এখন আজকের শেষ পরামর্শটি শ্রোতাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।

পরামর্শ ৬: পর্যাপ্ত সময় ধরে ঘুমান।

ঘুম মানেই বিশ্রাম। ঘুমের সময় শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো মেরুদণ্ড ও মেরুদণ্ডের হাড় ও পেশীগুলোও বিশ্রাম পায়। তাই পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। গরমকালে সাধারণত দিন বড় এবং রাত ছোট হয়। আর আমাদের অভ্যাস হচ্ছে, আমরা দিনের বেলায় কাজ করি। এর অর্থ, দিনের বেলা মেরুদণ্ড বিশ্রাম পায় না। আবার রাত ছোট হবার কারণে অনেক সময় রাতেও পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না শরীর। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দিনে ও রাতে মিলিয়ে যেন আমাদের শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ঊর্মি: কথা বলতে বলতে সময় ফুরিয়ে এলো। এখন বিদায় নেওয়ার পালা। প্রিয় শ্রোতা, আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন'এখানে শেষ করতে হচ্ছে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনার মতামত থাকলে আমাদের জানাতে কিন্তু ভুল করবেন না। আপনার সুচিন্তিত ও পর্যালোচনামূলক মতামতের প্রত্যাশায় রইলাম।

আলিম: আশা করি, ইমেইল বা টেলিফোনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমাদের ইমেইল ঠিকানো হলো ben@cri.com.cn

ঊর্মি: সরাসরি আমাকেও ইমেল পাঠাতে পারেন। আমার নিজস্ব ইমেল ঠিকানা হলো wanghaiman@cri.com.cn

আলিম: সবাই ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন। আবার কথা হবে আসছে রোববার একই সময়ে। চাই চিয়ান। (ওয়াং হাইমান/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040