Web bengali.cri.cn   
রকেট তরুণ হু চেন ইউয়ু
  2014-10-22 15:50:31  cri


১৯৯৩ সালে জন্মগহণ করেন হু চেন ইউয়ু। মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র থাকাকালেই তিনি বাড়িতে বিস্ফোরক তৈরি করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করেন রকেট। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি চীনে প্রথম ব্যাক্তিগত রকেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। এর মাধ্যমে বিশ্বে রকেট শিল্পে বৃহত শক্তিগুলোর একচেটিয়া ব্যবসা হোচট খায়। তার বন্ধুরা বলেন, ইউয়ুর জীবন শখ আর স্বপ্নের মিলনে একটি চলচ্চিত্রের মতো।

হু চেন ইউয়ুর অংশীদার ইয়ান ছেং সিয়াং বলেন, অনেক মানুষের স্বপ্ন আছে তবে অল্প মানুষ স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং নবায়ন আর উদ্ভাবন করতে পারে। হু চেন ইউয়ু এমন একজন মানুষ। ইয়ান ছেং সিয়াং হংকংয়ে বড় হয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করেছেন। এখন তিনি ছিংহু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি পড়ছেন। আগে তার ধারণা ছিল, মূল ভূভাগের ছাত্রছাত্রীরাই মেধাবী। কিন্তু হু চেন ইউয়ুর সঙ্গে দেখা হবার পর তার এ ধারণা বদলে যায়। তিনি তার চেয়ে ১০ বছরের ছোট ইউয়ুর ব্যবসার অংশীদারে পরিণত হন।

সম্প্রতি হু ছেন ইউয়ু একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছেন। যদিও দেখতে হু চেন ইউয়ু একজন তরুণের মতো, তবে তার কথা শুনে মনে হবে একজন বয়স্ক পোড়-খাওয়া লোক কথা বলছেন। তার রকেট কোম্পানি সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন একটি নতুন যুগ এবং আরও বেশি অনুরাগী বিমান ও মহাকাশের বিপ্লবে অংশ নেবে। অনেক প্রযুক্তি আবিষ্কার ও পরীক্ষার পর কাজে লাগবে। আমরা এ বিপ্লবের নেতা।

ছোটবেলা হু চেন ইউয়ু ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। তার পিতামাতাকে একবার তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ পর্যন্ত করতে হয়েছিল।

প্রাথমিক মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়ার সময় একদিন রসায়ন ক্লাস শেষে গোপনে হু চেন ইউয়ু ল্যাবরেটরি থেকে কেমিক্যাল নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেল এবং বাবা-মা ঘুমিয়ে যাবার পর রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে পরীক্ষা শুরু করল।

এভাবেই চলতে থাকে। একবার সে বাড়িতে পরীক্ষা করছিল এবং হঠাত ২০০ গ্রাম বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বিস্ফোরকের আধার পর্যন্ত গলে যায় এবং গরম তরল তার হাত পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার পর বাবা-মা তাকে কোনো রাসায়নিক পরীক্ষা চালাতে নিষেধ করেন এবং তাকে অর্থকড়ি দেওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু হু চেন ইউয়ু কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি। তিনি বন্ধুদের বাড়িতে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে লাগলেন।

হাই স্কুলে প্রবেশ করার পর হু চেন ইউয়ুর এ 'শখ' দিন দিন 'গুরুতর' আকার ধারণ করতে লাগল। একবার তিনি স্কুলে পরীক্ষা চালান এবং একটি ছোট বিস্ফোরকের বিস্ফোরণে গোটা স্কুল ক্যাম্পাস কেপে ওঠে। শিক্ষক তার পিতামাতার কাছে অভিযোগ করলেন। পিতামাতা পুলিশে খবর দিলেন। সবখানে তিনি একজন খারাপ ছেলে হিসেবে চিহ্নিত হলেন। এদিকে, স্কুল তাকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের অনুরোধে তিনি স্কুলে থাকার সুযোগ পেলেন।

২০১০ সালে সেপ্টেম্বরে হু চেন ইউয় হুয়া নান পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হাই স্কুলে রসায়ন ছাড়া কোন বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল না। তাই হু চেন ইউয়ু স্থাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত রসায়ন ছাড়া আর কিছুই বুঝতেন না।

শেষে প্রতিভাবান টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রসায়ন ক্লাস শোনার পর হু চেন ইউয়ু আবিষ্কার করেন যে তিনি এস সব তথ্য আগে থেকেই জানেন এবং শেষে নিজে নিজে লেখাপড়া করার সিদ্ধান্ত নেন।

 হু চেন ইউয়ুর জন্য আসল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ইন্টারনেটে খে ছুয়াং ফোরাম নামে একটি গ্রুপ। এটা চীনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুরাগীদের একটি ফোরাম এবং অনেক বুদ্ধিমান মানুষ এর সদস্য। এখানকার সদস্যদের একজন এক সপ্তাহের মধ্যে নকশা করা থেকে শুরু করে রকেট তৈরি করে ফেলতে পারেন। এখানে রয়েছে রেডিও, উপকরণ ও যন্ত্র নির্মাণ বিষয়ক প্রতিভাবান ব্যক্তি এবং এ ফোরামে হু চেন ইউয়ু নতুন শখ ও আগ্রহের উপাদান খুঁজে পান।

দুই-তিন বছর পর, বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ কেউ ছাত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়েছেন, কেউ কেউ সোসাইটির দায়িত্বশীল ব্যাক্তিতে পরিণত হয়েছেন, আর হু চেন ইউয়ু হয়েছেন ফোরামের তিন মেয়াদের মডারেটর। এসময় তিনি অনেক রকেট অনুরাগীর সঙ্গে পরিচিত হন।

 ২০১১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে তার প্রথম প্রকল্প দল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ দলের সব সদস্য কুয়াং চৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের রকেট-অনুরাগী। প্রথমে হু চেন ইউয়ু বেশি চিন্তা করেননি, কিন্তু বাস্তব অনেক কঠিন।

 তারা চুং সান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক ল্যাবরেটরির ছোট একটি জায়গা ভাড়া করে এবং ফোরামসংশ্লিষ্ট ফাইল ডাউনলোড করে লেখাপড়া করতে থাকে। জমানো সব টাকা নিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় করে এবং সাইকেলে করে এ সরঞ্জাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসে। দিন-রাত পরিশ্রম করে তারা লঞ্চ প্যাড নির্মাণ করে এবং সকাল ৬টায় শহরের বাইরে রকেট উত্ক্ষেপণের চেষ্টা চালায়।

 তবে বাটন প্রেস করার সময় রকেটটি বিস্ফোরিত হলে তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয়বারের পরীক্ষায় রকেটের পাশাপাশি লঞ্চ প্যাডও বিস্ফোরিত হয়।

  কয়েক মাস ও কয়েক হাজার ইউয়ান চলে গেছে এবং হু চেন ইউয়ু ও তার দলের প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা। ঠিক সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র তাদের ১ লাখ ইউয়ান দেন এবং এ টাকা নিয়ে হু চেন ইউয়ু তার রকেট গবেষণা অব্যাহত রাখে।

২০১৩ সালের জুলাই মাসে হু চেন ইউয়ু ও তার দল তাদের প্রথম Sounding Rocket তৈরির কাজ শেষ করে এবং সফলভাবে ইনার মঙ্গোলিয়ায় এ রকেট উৎক্ষেপণ করে।

  ২০১৪ সালে হু চেন ইউয়ু সেন চেন শহরে লিং খে হাং থিয়ান নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ২১ বছর বয়সী একজন তরুণ একটি রকেট কোম্পানি খুলে বসেছেন, এটা ছিল একটি চমকপ্রদ খবর। পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে অনেক খবর ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। তবে হু চেন ইউয়ু বলেন, আমি রকেট তৈরি করি, নিজের ঢোল নিজে পিটাই না।

  তার ব্যবসার অংশীদার হু চেন ইউয়ু বলেন, তাদের দুই জনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। দুজনই রকেট, পিয়ানো ও টেনিস পছন্দ করেন। তবে তারা দু রকমের পরিবারে বড় হয়েছেন। আজ তারা ব্যবসার অংশীদার এবং রকেটের প্রতি তাদের ভালবাসা নিয়ে এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

 আগে, রকেট প্রকল্পের টাকার জন্য হু চেন ইউয়ু শিশুদের পিয়ানো বাজাতে শিখিয়েছেন। তিনি লক্ষ্য করতেন, সংশ্লিষ্ট পিতা-মাতাদের অনেকেই লেখাপড়া বা পিয়ানো বাজানোয় ভালো না-করলে নিজ নিজ শিশু সন্তানকে মারধর করেন। তখন তার নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়তো। তিনি তাদের বলতেন, শিশুদের নিজেদের শখ নিজেদেরই বাছাইয়ের অধিকার থাকা উচিত।

  হু চেন ইউয়ুর মনে করেন, প্রতিটি শিশুর নিজস্ব একটা জগত আছে এবং তাদের একেক জনের শখ একেকরকম হবে, এটাই স্বাভাবিক।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040