Web bengali.cri.cn   
একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশমপথ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করবে মালদ্বীপ
  2014-11-25 19:07:03  cri

চীনা পর্যটকরা মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। এমনি এক প্রেক্ষাপটে, এই দ্বীপরাষ্ট্রটি চীনের প্রস্তাবিত একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশমপথ নির্মাণের প্রস্তাবকে সমর্থন করছে এবং এটি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আগ্রহও দেখাচ্ছে।

মালদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী আহমেদ আদিব আব্দুল গাফুর সম্প্রতি সিআরআইয়ের সংবাদদাতাকে বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই মালদ্বীপে চীনা পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং একসময় চীনা পর্যটকদের সংখ্যা ইউরোপীয় পর্যটকদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে মালদ্বীপে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগই চীনা নাগরিক। অন্যভাবে বললে, চীনা পর্যটকরা এখন মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পের অন্যতম চালিকাশক্তি।

আদিব বলেন, "অনুমান করা হচ্ছে, চলতি বছর মালদ্বীপে আসা চীনা পর্যটকের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। মালদ্বীপের নিকটবর্তী দেশগুলোর তুলনায় এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। চীনা পর্যটকরা ইউরোপীয় পর্যটকদের স্থান দখল করে নিয়েছে। এটা মালদ্বীপের জন্য অনুকূল। কারণ, আর্থিক সংকটের কারণে ইতালি, বৃটেনসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর পর্যটকের সংখ্যা এমনিতেই অনেক হ্রাস পেয়েছে।এ প্রেক্ষাপটে চীনা পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পের জন্য খুব ভালো খবর।"

মালদ্বীপের মোট জাতীয় আয়ের এক-তৃতীয়াংশই আসে পর্যটন খাত থেকে। তাই মালদ্বীপের পর্যটন খাতের যে-কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকে দেশটির সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। পর্যটনমন্ত্রী আদিব বলেন, বিপুলসংখ্যক চীনা পর্যটককেস্বাগতজানাতে মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পের বিভিন্ন বিভাগ নিজেদের কৌশল ও কার্যক্রম সমন্বয় করেছে, সুবিন্যস্ত করেছে। যেমন, হোটেল ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আজকাল চীনা ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, চীনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। রাজধানী মালে ও হুলহুমালেদ্বীপসহ কিছু জনবহুল অঞ্চলে চীনা রেঁস্তোরার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

পর্যটন শিল্প ছাড়া মালদ্বীপ অন্যান্য খাতেও সক্রিয়ভাবে চীনের সাথে সার্বিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো গভীর করতে চায়। মন্ত্রী বলেন, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের প্রস্তাবিত একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশমপথ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন এবং এ রেশমপথ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চান। মালদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, "আমি বিশ্বাস করি, মালদ্বীপ এ ব্যাপারে ভালোভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, মালদ্বীপের দ্বীপগুলোচারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। অনেক বিদেশি বাণিজ্য জাহাজকে মালদ্বীপের সমুদ্র অঞ্চল ব্যবহার করতে হয়। দেড় ডিগ্রি চ্যানেল এবং আট ডিগ্রি প্রণালীর মালদ্বীপের পাশ দিয়ে বহু বড় আকারের তেল ও কয়লাবাহী জাহাজ প্রতিনিয়ত অতিক্রম করে। মালদ্বীপের অবকাঠামো ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, এ কথা সত্য। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সামুদ্রিক রেশম পথ প্রতিষ্ঠিত হলে আমরা চীনের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে অবকাঠামো খাতে যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারবো।"

জনাব আদিব আরো বলেন, মালদ্বীপ সরকার আশা করে, চীন সক্রিয়ভাবে মালদ্বীপের পর্যটন, অবকাঠামো নির্মাণ এবং যুব উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে এবং এসবের নির্মাণকাজে অংশ নেবে। তিনি বলেন, এ সব প্রকল্প একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশম পথ নির্মাণের জন্য সহায়ক হবে।

ভারত মহাসাগরে অবস্থিত মালদ্বীপ প্রায় ১২০০টি দ্বীপ আর প্রবালদ্বীপ নিয়ে গঠিত। এ দেশের সর্বোচ্চ স্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১.৮ মিটার উঁচু। ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশটির ওপরসহজেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরে। তাই আন্তর্জাতিক সমাজ এ বিষয়ে মালদ্বীপের মতামতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। আদিব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবংঅর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য মালদ্বীপ একটি টেকসই উন্নয়নের পথ খুঁজে চলেছে। এ প্রক্রিয়ায় মালদ্বীপ চীনসহ আন্তর্জাতিক সমাজের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।

মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রী বলেন, "বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে মালদ্বীপ নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে এবং চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সাথে এ ব্যাপারে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখছে। আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, মালদ্বীপ বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় এবং টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে চায়। আমরা একদিকে পরবর্তী ১৫ বছর বা ৯৯ বছর ধরে ক্রমবর্ধমান হারে বিদেশী বিনিয়োগের প্রত্যাশা করবো এবং অন্যদিকে সাগরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রচার করবো—এটা হতে পারে না। আমরা বেঁচে থাকতে চাই। ইতোমধ্যে আমাদের পর্যটন শিল্পে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এটা দীর্ঘকালীন বিনিয়োগ। আমি বিশ্বাস করি, মালদ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই টিকে থাকবে।" (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040