Web bengali.cri.cn   
প্রাচীন কবিতার সাথে আধুনিক সংগীত
  2015-02-16 20:27:37  cri


চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। এবার শুনুন সুরের ধারা অনুষ্ঠান। আজকের এ অনুষ্ঠানে আপনাদের শুনাবো চীনের প্রাচীন কবিতা থেকে রচিত কয়েকটি গান। আশা করি, গানগুলো আপনাদের ভালো লাগবে।

বন্ধুরা, প্রথমে শুনুন কণ্ঠশিল্পী ওয়াং ফেই এর গাওয়া চীনের সোং রাজবংশ আমলের সাহিত্যিক সু শি'র কবিতা 'উজ্জ্বল চাঁদ কবে আসবে' নামের গানটি।

কবিতাটি লেখার সময় সু শি'র প্রায় সাত বছর ধরে তাঁর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়নি। মধ্য-শরত উত্সবের রাতে উজ্জ্বল চাঁদ দেখে তার আত্মীয়স্বজনের কথা মনে পড়ে। মনে এক জটিল আবেগ জেগে উঠলে এ কবিতা লেখেন তিনি। শুনুন তাহলে এই আবেগমিশ্রত কবিতাটি।

কবি সু শি

বন্ধুরা, তেং লি জুন হচ্ছেন বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে গোটা বিশ্বের চীনা সমাজে অতি প্রভাবশালী একজন সংগীতজ্ঞ। তিনি চীনা ভাষা, ক্যান্টনিজ, ইংরেজী, জাপানী, ইন্দোনেশীয়সহ নানা ভাষার তিন হাজারের অধিক গান গেয়েছেন। তাঁর ডিস্ক বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি।

এখন শুনুন তাইওয়ানের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী তেং লি জুনের গাওয়া 'একাই পশ্চিম ভবনে উঠি' নামের গানটি। এই গানটির কথা লি ইয়ু নামে চীনের প্রাচীনকালের একজন রাজার লেখা কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে। কবিতায় বর্ণনা করা হয়েছে, একজন লোক নীরবে একা একাই নির্জন পশ্চিম ভবনে উঠে আকাশের চাঁদ দেখেন। তখন তার মন বিদায়ের বেদনায় ভরে থাকে।'

ফাং ইয়ান চীনের একজন বিশিষ্ট গায়ক। তিনি নিজেই অনেক প্রাচীন কবিতাকে আধুনিক গানে রূপান্তর করেছেন। তাঁর গানগুলোতে শ্রোতারা প্রাচীন কবিতার মোহিনীয় সুর অনুভব করতে পারেন। ফাং ইয়ান সংগীতের তালে তালে প্রাচীন কবিতার উজ্জ্বলতা প্রতিফলন করেছেন। তাঁর গানগুলো চীনের ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

বন্ধুরা, এখন শুনুন থাং রাজবংশের কবি মাং হাও রেনের  কবিতা 'বসন্তের সকাল' অবলম্বনে রচিত গানটি। কবিতাটিতে বসন্তকালের এক সুন্দর সকালের ছবি বর্ণনা করা হয়েছে।

সুই সিয়াও ফেং বিংশ শতাব্দীর ষাট দশক থেকে হংকংয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি অনেক টেলিভিশন নাটকের থিম সোং গেয়েছেন এবং হংকংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়িকার অন্যতম ছিলেন। এবার শুনুন তাঁর গাওয়া 'দেখা যেমন কঠিন, বিদায় নেয়াও তেমনি কঠিন' নামের চমতকার গানটি।

থাং রাজবংশের কবি লি শাং ইন এর কবিতা থেকে এ গানটি রচনা করা হয়েছে। কবিতাটির প্রধান অর্থ হলো বিদায়। প্রেমিক ও প্রেমিকা বিদায় নেয়ার সময় মনের ব্যথা আর বিদায়ের পর পরস্পরকে স্মরণ করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে কবিতাটিতে।

বন্ধুরা, চীনের প্রাচীন সংগীত ও সাহিত্য হচ্ছে চীনের শিল্পকলা ক্ষেত্রের দুটি অতি আকর্ষণীয় ফুলের মত। কবিতা ও সংগীতের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। প্রাচীনকালের অনেক কবিতায় বর্তমান সময়ে সুর দেয়া হয়েছে।

এখন আপনারা শুনছেন চাং ইউয়ান ও ইং হোং চির গাওয়া 'ছাং চিয়াং নদীর পানি পূর্ব দিকে চলে যাচ্ছে' নামের একটি গান। এই গানটি মিং রাজবংশের সাহিত্যিক ইয়াং শেনের রচিত কবিতা। কবিতায় বলা হয়েছে, 'সুদীর্ঘ চাং চিয়াং নদীর পানি পূর্ব দিকে চলে যায়। কখনো পিছনে ফিরে দেখে না। কত বীর এ নদীর তরঙ্গে বিলীন হয়েছেন। জয় ও ব্যর্থতা কোনোটাই স্থায়ী হবে না। কেবল এ সবুজ পাহাড় সবসময় নিজ অস্তিত্ব নিয়ে দাড়িয়ে থাকবে কালের স্বাক্ষী হয়ে।' (শেষ)

প্রাচীনকালে চীনের রাজবংশগুলো ভিন্ন ধরনের কবিতায় সমৃদ্ধ ছিল। এখনো থাং রাজবংশ ও সোং রাজবংশের কবিতা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় বলা যায়। কারণ এ দুই আমলে অনেক বিখ্যাত কবি জন্মেছিলেন। তারা চমতকার সব কবিতা লিখে গেছেন। তবে অন্যান্য আমলেও সুন্দর সুন্দর কবিতা লেখা হয়েছিল।

এখন আপনারা শুনছেন পশ্চিম হান রাজবংশে লি ইয়ান নিয়েন  রচিত একটি গান। গানের নাম 'সুন্দরীর গান'। লি ইয়ান হান রাজবংশের সম্রাট হান উ ডি'র জন্য গানটি গেয়েছেন।

এই গানে বর্নণা করা হয়েছে, 'বিস্তীর্ণ উত্তর দেশে একজন অতি সুন্দরী মেয়ে ছিল। সৌন্দর্যে সারা বিশ্বে অদ্বিতীয় তিনি। তিনি কখনো অন্য মেয়ের সঙ্গে থাকতে চাইতেন না। সবসময় একাই কোথাও দাঁড়িয়ে থাকতেন। তিনি যদি সেনাবাহিনী দলের দিকে একবার তাকাতেন তাহলে সৈন্যরা অস্ত্র ছেড়ে দিতো। আর যুদ্ধ করতো না। তিনি যদি রাজার দিকে নজর দিতেন সে রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যেতো। নগর হোক, দেশ হোক, সব হারালে কী হবে, এ সুন্দরী মেয়ের সাথে দেখা করার সুযোগ কেউ হারাতে চাইতো না।

বন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সুরের ধারা আসর শুনছেন। এ অনুষ্ঠানে আপনাদের চীনের কয়েকটি প্রাচীন কবিতা থেকে রচিত গান শোনাচ্ছি।

এবার শুনুন শিল্পী লি শু তোংয়ের লেখা 'বিদায়ের গান'। গেয়েছেন হান লেই। এ গানটি 'শহরের পুরোনো গল্প' নামে চলচ্চিত্রের প্রতিপাদ্য সংগীত ছিলো। গানে দুই বন্ধু বিদায়ের সময় পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। একজন জিজ্ঞেস করলেন, 'কবে ফিরে আসবে? ফিরে আসতে সংকোচ করো না। একা একা থাকার সময় রাতে শীতের স্বপ্ন দেখো না।'

বন্ধুরা, একটু আগে আপনারা চীনের রাজা কবি লি ইয়ুর একটি কবিতা অবলস্বনে রচিত গান শুনেছেন। এবার তাঁর আরেকটি গান শুনুন। গানের নাম 'ইয়ু মেই রেন'। গেয়েছেন নিউ রোং।

এ গানে বলা হয়েছে, 'প্রতি বছর ফুল ফুটে। আকাশে পূর্ণিমা হয়। একই নিয়মে ঋতুচক্র আসে; ঋতুচক্র যায়। কিন্তু আমার অপেক্ষা আর শেষ হয় না। এই ঋতুচক্র কবে শেষ হবে? অতীতে আমার সব কিছু ছিল। এখন সব বিলীন হয়ে গেছে। দেশ হারিয়েছি এক বছর ধরে। স্বদেশের কথা মনে পড়লে বেদনা অনুভব করে চোখের জল আর থামাতে পারি না। অতীতের কথা আর স্মরণ করা যায় না।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের সবশেষে শুনুন 'লি শাং ইনের গান'। এটি ২০১৪ সালে গায়িকা তুং চেনের সুর দেয়া নতুন গান। গানের কথাগুলো সবই থাং রাজবংশের বিখ্যাত কবি লি শাং ইনের লেখা নানা কবিতা থেকে বাছাই করা হয়েছে।

শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের সুরের ধারা আসর এ পর্যন্তই। চীনের প্রাচীন কবিতা থেকে রূপান্তর গানগুলো আপনাদের কেমন লেগেছে?

সাহিত্য ও সংগীত বিশ্বের দুটি সবচেয়ে আকষণীয় বিষয়। খাওয়া দাওয়ার মতো আমাদের জীবনে তা অবিচ্ছেদ্য অংশ না হলেও সাহিত্য ও সংগীতের জন্য জীবনের রঙ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।

আশা করি, শ্রোতাবন্ধুরা সবসময় ভালো থাকবেন। আপনাদের জীবন ছন্দময় হয়ে উঠুক; সুন্দর হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশায় আজ আমি বিদায় নিচ্ছি। আবার কথা হবে। (ইয়ু / মান্না)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040