0410yin01
|
ভিয়েতনামের পরিবহন ব্যবস্থা বেশ পুরানো ধাঁচের। মোটরসাইকেল হলো জনসাধারণের যাতায়াতের প্রধান বাহন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি এতে যোগ হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই ভিয়েতনামের লোকজনের ড্রাফট বিয়ার খাওয়ার অভ্যাস থাকায় মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো ও দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির পরিবহন বিভাগ মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো ঠেকানোর বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নেয়। গাড়িচালকের সিটবেল্ট বাঁধা, মদ খাওয়ার পর গাড়ি না চালানোর জন্য জনসাধারণকে সচেতন করা হলেও মাতাল অবস্থায় ড্রাইভিংয়ের দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
ভিয়েতনামের জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা কমিটির উপ-পরিচালক বলেছেন, মোটর-সাইকেল হোক, হাজার কোটি টাকার গাড়ি হোক, সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো। দুর্ঘটনার সময় গাড়ির দামে কোনো পার্থক্য তৈরি হয় না। পরিবহন দুর্ঘটনার জন্য গাড়িচালকদের ওপর আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভিয়েতনামের অনেক মানুষ মাতাল অবস্থায় চালানো গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা দেশের সংবিধান ও বিদ্যমান আইনি বিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিনা-তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এ সম্পর্কে দেশটির এক আইন প্রণেতা বলেছেন, কংগ্রেসের কাছে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ওদিকে কংগ্রেসের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, তিনি কংগ্রেসকে গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার মানদণ্ড প্রণয়নের প্রস্তাব দেবেন, যেনো মানুষ মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর বিপদ সম্পর্কে সচেতন হয় এবং পরিবার সদস্য ও নিজের কথা চিন্তা করে মাতাল অবস্থায় গাড়ি না চলায়।
কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য হলো, ভিয়েতনামে ধার করা গাড়ি-চালানোর প্রবণতা খুব বেশি। অনেক মানুষ মনে করে, প্রশাসনের পদক্ষেপ বিভিন্ন কৌশলে মোকাবিলা করা উচিত।
গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হলো ব্যক্তিগত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা। ভিয়েতনামের অনেক মানুষ মনে করে, গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা পরিবহন আইনের অতিরিক্ত বিষয়। বার বার পরিবহন আইন লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে এ শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার আইনগত ভিত্তি সম্পর্কে ভিয়েতনামের আইন প্রণয়নকারী গবেষণালয়ের প্রধান বলেছেন, ২০১৩ সালে ভিয়েতনামের সংশোধিত সংবিধানে স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে যে, নাগরিকদের ব্যক্তিগত সম্পদের ওপর কঠোর আইনগত সংস্কার কার্যকর করা উচিত নয়। ভিয়েতনামের অনেক মানুষের কাছে গাড়ি ও মোটরসাইকেল হলো বড় ধরনের ব্যক্তিগত সম্পদ। ইচ্ছা করলেই তা বাজেয়াপ্ত করা উচিত নয়।
তিনি মনে করেন, ভিয়েতনামের আইনে অন্য মানুষের গাড়ি ধার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই। সুতরাং যে লোক মাতাল হয়ে গাড়ি চালায়, তার ওপর শাস্তি দেয়া উচিত। যদি নির্দোষ তৃতীয় পক্ষের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, তাহলে তা অনেক জটিল সামাজিক সমস্যার সৃষ্ট করবে। এছাড়া মাতাল গাড়িচালকের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু প্রতিকূলতা সামনে আসবে।
ভিয়েতনামের জনসাধারণ মনে করে, গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চালু হলে কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়া, পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংঘর্ষ এবং গাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হবে। সুতরাং ভিয়েতনামের পরিবহন বিভাগকে মাতাল ড্রাইভিং বন্ধের জন্য অন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন জরিমানার মাত্রা বাড়ানো, গাড়ি আটকে রাখার সময় বাড়ানো এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স আটকে রাখা বা বাজেয়াপ্ত করা ইত্যাদি।
ভিয়েতনামের গণমাধ্যম মনে করে, মাতাল গাড়িচালনা বাজেয়াপ্ত করার প্রতিবন্ধকতা অনেক বেশি। বর্তমানে বিশ্বের খুব কম দেশেই এ ধরনের নিয়ম রয়েছে। বেশিরভাগ দেশ মাতাল গাড়িচালককে জরিমানা বা কারাদণ্ড দেয়। এ থেকে দেখা যায় যে, মাতাল অবস্থায় গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রে অনেক বিরোধ রয়েছে এবং নির্দিষ্ট সমস্যা অনুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে এর বিশ্লেষণ করতে হবে।