Web bengali.cri.cn   
আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের ভূমিকা
  2015-06-08 19:20:33  cri

গত ৩ থেকে ৫ জুন ২৫তম বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের 'আফ্রিকা সম্মেলন' দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে অনুষ্ঠিত হয়। ৭৫টি দেশের প্রায় ১২৫০ জন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও সমাজের অন্যান্য মহলের প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে তারা নতুন যুগে আফ্রিকার অর্থনৈতিক সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আফ্রিকা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এ মহাদেশে বিনিয়োগ করে চলেছে। আফ্রিকার বিশাল বাজার চীনের অর্থনীতির জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে বলা যায়।

বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের 'আফ্রিকার মোবাইল যোগাযোগ প্রযুক্তি' বিষয়ক এক শাখা ফোরামে হুয়া ওয়েই কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট তিং শাও হুয়া ভাষণ দেন। তিনি বলেন, "ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়া যায়। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশের সম্পদ কাজে লাগানো যায় এবং সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন অর্জন করা যায়। আমাদের হুয়াওয়েই কোম্পানির জরিপ অনুযায়ী, তথ্য ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ২০ শতাংশ বাড়ালে একটি দেশের মোট দেশজ উত্পাদন ১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।"

হুয়াওয়েই আফ্রিকায় বিনিয়োগ শুরু করার দশ-বারো বছরের মধ্যেই সেখানকার অর্ধেকেরও বেশি ওয়্যারলেস বেস স্টেশন নির্মাণ করে। এর ফলে সেখানকার কিছু অঞ্চলের টেলিযোগাযোগের ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। এতে আফ্রিকান জনগণ উচ্চমানের টেলিযোগাযোগ সেবা পাচ্ছেন।

আফ্রিকার রেলপথ, সড়কপথ, সেতু, জলবিদ্যুতসহ বিভিন্ন খাতে চীন সরকার ও চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো গত কয়েক দশক ধরে বিপুল জনশক্তি ও অর্থ বিনিয়োগ করে এসেছে। ফোরামে চীন সরকারের আফ্রিকাবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি চোং চিয়ান হুয়া বলেন, আফ্রিকার অবকাঠামো নির্মাণ খাতে চীনের বিনিয়োগ আফ্রিকার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, "চীন-আফ্রিকা অর্থনৈতিক সম্পর্কের সাথে অতীতের ঔপনিবেশিকতাবাদী শক্তির সাথে আফ্রিকার অর্থনৈতিক সম্পর্কের পার্থক্য আছে। আমরা আফ্রিকাকে শিল্পায়নের পথে চলতে সাহায্য করেছি এবং আফ্রিকার শিল্পায়ন যুগের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছি।"

আফ্রিকার উন্নয়নে চীনের ভূমিকা বিশ্বে সবাই দেখেছে। গেটস ফাউন্ডেশানের বৈশ্বিক নীতি ও উদ্যোগ বিষয়ক প্রধান মার্ক সুসমান আফ্রিকার কৃষি উন্নয়নে চীনের অবদানের উচ্চ প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, "আমি মনে করি, গেল কয়েক দশক ধরেই চীন আফ্রিকার এক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রেখে এসেছে। বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে চীন ও আফ্রিকার মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতা রয়েছে। চীন আফ্রিকান দেশগুলোকে উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি সরবরাহ করেছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে ও দিচ্ছে। চীনা কোম্পানি ইথিওপিয়ায় গৃহপালিত পশুর টিকা নিয়ে গবেষণা করেছে, কেনিয়ায় ধান চাষ প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়েছে। চীনের কৃষিপ্রযুক্তির মাধ্যমে আফ্রিকার উন্নয়নের আরও অবকাশ আছে। চীন হচ্ছে বিশ্বের উত্পাদন খাতে বিপ্লবের দৃষ্টান্ত। এর কৃষিবিপ্লব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এবং আফ্রিকার জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।"

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর অনুমান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বিশ্বের যে দশটি দেশে সবচে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে, সে দশটি দেশের ৭টিই হবে আফ্রিকান। এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির হার বিশ্বের গড় প্রবৃদ্ধির হারের দ্বিগুণ হবে। আর আফ্রিকার অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশাল বাজার উপহার দেবে।

ফোরামে হুয়াওয়েই কোম্পানির দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার জনসংযোগ ব্যবস্থাপক ওয়াং সুন লি বলেন, "আফ্রিকায় প্রায় ১০০ কোটি মানুষ আছে। যদি এ অঞ্চলটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৪ থেকে ৫ শতাংশ ধরে রাখতে পারে, তাহলে দশ বছর পর সেখানকার অর্থনীতির আকার অনেক বড় হবে। তখন ভোগের পরিমাণও বাড়বে। বাজারও বড় হবে।"

এখন চীন আফ্রিকাকে সহায়তা দিচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো আফ্রিকা বিশ্ব অর্থনীতির নতুন চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে। আর তখন উল্টো আফ্রিকা-ই হয়তো চীনকে সাহায্য করবে। চীন সরকারের আফ্রিকা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি চোং চিয়ান হুয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, "যে-কোনো একটি দেশ বা অঞ্চল যখন অনুন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশ বা অঞ্চলে পরিণত হয়, তখন সে দেশ বা অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের চাহিদা সৃষ্টি হয়। তাই আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে চীন-আফ্রিকা অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার হবে। শুরুতে আমরা আফ্রিকাকে সাহায্য করেছি, মাঝে কাজ করবো সমতার ভিত্তিতে, এবং ভবিষ্যতে হয়তো খোদ আফ্রিকাই আমাদের বিভিন্ন খাতে সাহায্য করবে।"(ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040