Web bengali.cri.cn   
চীনের কুইচৌ প্রদেশের দারিদ্র্যমুক্তির পথ
  2015-06-22 20:01:42  cri

পশ্চিম-দক্ষিণ চীনের কুইচৌ প্রদেশ ইয়ুন কুই মালভূমিতে অবস্থিত। এখানে আবাদি জমি কম, পরিবহনব্যবস্থা সুবিধাজনক নয়, সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থাও অপেক্ষাকৃত অনুন্নত। বস্তুত, চীনের দরিদ্র প্রদেশগুলোর মধ্যে কুইচৌ অন্যতম।

প্রদেশটি ২০২০ সালের মধ্যে সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গঠনের লক্ষ্য স্থির করেছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কুইচৌ প্রদেশ জোরালোভাবে সরকারসমর্থিত দারিদ্র্য বিমোচন পদ্ধতির আলোকে দারিদ্র্যমুক্তির নিজস্ব একটা পথ বের করেছে, যা যথেষ্ট কার্যকর বলে ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।

কুইচৌ প্রদেশের পার্টি কমিটির সম্পাদক চাও খ্য চিই বলেন, "আমরা গোটা চীনের চেয়ে দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা চালাবো। ২০১৬ সালের মধ্যেই কুইচৌ প্রদেশে সার্বিক সচ্ছল সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ৮০ শতাংশ অর্জিত হবে। আর ২০২০ সালের মধ্যে কুইচৌ চীনের অন্যান্য অঞ্চলগুলোর মত সচ্ছল সমাজে পরিণত হবে। এ জন্য আমরা জোরালোভাবে অর্থনৈতিক কাঠামো বিন্যাস করবো, উন্নয়নের পদ্ধতি রূপান্তর করবো, প্রাকৃতিক নির্মাণ ও সংরক্ষণের কাজ জোরদার করবো। আমরা দারিদ্র্য বিমোচনের উপর গুরুত্বারোপ করবো, জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তুলবো এবং উন্নয়নের সুফল আরও ন্যায়সংগতভাবে জনসাধারণের দুয়ারে পৌঁছে দেব।"

লেইশান জেলার দেড় লাখ বাসিন্দার ৬০ হাজারই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। জেলাটি কুইচৌ প্রদেশের মিয়াও জাতিঅধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর অন্যতম। এ জেলাকে মিয়াও জাতির সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও বলা হয়। ফলে পর্যটনশিল্প উন্নয়নকে এ জেলার দারিদ্র্য বিমোচনের মূল উপায় হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। লেইশান জেলার সিচিয়াং ছিয়ানহু মিয়াও জাতির গ্রামকে 'চীনের মিয়াও জাতির প্রথম পল্লী' বলা হয়। ২০০৮ সালে পর্যটনশিল্প উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে স্থানীয় লোকদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ২০০৮ সালের আগের ৬০০ থেকে ৮০০ ইউয়ান থেকে বেড়ে ২০১৩ সালে ৩০০০ ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়।

সিচিয়াং দর্শনীয় স্থানের ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর উপ-প্রধান লি ফাং জানান, পর্যটনশিল্প উন্নয়নের আগে, স্থানীয় যুব কৃষকরা আয় বাড়ানোর জন্য বাইরে গিয়ে কাজ করতেন। এখন গ্রামবাসীরা পল্লী হোটেল পরিচালনা করে ভাল আয় করতে পারেন। তিনি বলেন, "অতীতে কৃষকদের আয় বলতে বোঝাতো বসন্ত উত্সবের জন্য শূকরপালন এবং হাঁস-মুরগি লালন। কিন্তু এ রকম জীবনযাপন খুব কষ্টের ছিল। ২০০৭ ও ২০০৮ সালের আগে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ গ্রামবাসী বাইরে কাজ করতেন। তখন মাথাপিছু বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৬০০ থেকে ৮০০ ইউয়ানের মত। ২০০৮ সালে পর্যটনশিল্প উন্নয়নের পর মাথাপিছু বার্ষিক আয় ১৩০০ ইউয়ান ছাড়িয়েছে। আর বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০০ ইউয়ানে।"

সিচিয়াং দর্শনীয় স্থানের টিকিট বিক্রি আয়ের ১৫ শতাংশ জাতিগত সংস্কৃতি সংরক্ষণের অর্থ হিসেবে গ্রামবাসীদের দেওয়া হয়, যাতে গ্রামবাসীরা পর্যটন উন্নয়নের মুনাফা ভোগ করতে পারেন।

পর্যটনশিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কৃষি উন্নয়ন হচ্ছে কুইচৌয়ের অনেক অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচনের বিকল্প পদ্ধতি। কুইচৌ প্রদেশের মধ্যাঞ্চলের আনসুন  শহরের থিয়ানলোং থানার আরকুয়ান গ্রাম স্থানীয় সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব কৃষি উন্নয়নের ধারণা বাস্তবায়ন করেছে। পল্লী কমিটির পরিচালক শিয়াও চেং ফাং জানান, মাত্র কয়েক বছরে গ্রামবাসীদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ১৬০০ ইউয়ান থেকে ৬৮০০ ইউয়ানে উন্নীত হয়। আর ২০১৫ সালে এখানকার গ্রামবাসীদের বার্ষিক আয় ১০০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

পল্লী কমিটির পরিচালক সিয়াও চেং ফাং বলেন,"২০০৫ সালের আগে আমাদের গ্রাম প্রধানতঐতিহ্যবাহী কৃষিনির্ভর ছিল। এতে গ্রামবাসীদের খাওয়া-পড়ার ব্যবস্থা হতো। ২০০৯ সালের পর আমাদের শিল্পকাঠামো ধাপে ধাপে সুবিন্যস্ত হয়। ২০১০ সালে আমরা আনসুন শহরের প্রথম ৬৬৬ হেক্টর আয়তনের এক সবজি বাগান প্রতিষ্ঠা করি। সে বছর এ গ্রামের মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ৩০৮০ ইউয়ানে। ২০১০ সালে তা বেড়ে ৪৭৮০ ইউয়ান, ২০১১ সালে ৫৬০০ ইউয়ান, ২০১২ সালে ৬৮০০ ইউয়ান হয়েছে। আর ২০১৫ সালে মাথাপিছু নিট আয় হবে ১০০০ মার্কিন ডলার।"

কুইচৌ প্রদেশে দারিদ্র্য বিমোচন খাতে কিছু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে সেখানকার অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনৈতিক ভিত্তি আর অবকাঠামো দারিদ্র্য বিমোচন প্রক্রিয়ার সামনে এখনও বড় বাধা। তা ছাড়া, কুইচৌয়ের কিছু পর্যটনস্থানের পরিবহনব্যবস্থা ভাল নয়। পর্যটন খাতেও রয়েছে নানান দুর্বলতা। এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কুইচৌয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। যেমন, অনাবৃষ্টির সময় বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার বিশেষ অর্থ সংগ্রহ করে দুর্গতদের সাহায্যকরে, কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি নামায় এবং গুরুতর দুর্গত অঞ্চলে পানিবাহী গাড়ি পাঠায়। এর পাশাপাশি, কৃষকরা খরার মধ্যেও চাষযোগ্য কিছু ফসল ফলিয়ে লোকসান কমানোর চেষ্টা করে। তা ছাড়া, সংশ্লিষ্ট বিভাগ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উপায়ে কৃষকদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সামর্থ্য বাড়ানোর চেষ্টাও করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণ খাতেও কুইচৌ অগ্রগতি অর্জন করেছে।

কুইচৌ ১০০টি শিল্প উদ্যান, ১০০টি দৃষ্টান্তমূলক কৃষিবাগান, ১০০টি পর্যটনকেন্দ্র ও ১০০টি দৃষ্টান্তমূলক ক্ষুদ্র নগর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছে। কুইচৌ আশা করে, এ সব প্রকল্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040