Web bengali.cri.cn   
চীনের কৃষিজমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনার উদ্যোগ
  2015-08-18 15:45:38  cri

রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার ইতোমধ্যেই চীনের প্রতিবেশের অনেক ক্ষতি করেছে। এর ফলে খাদ্য-নিরাপত্তার বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটেই দেশটিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

১৩০ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিতে চীনের খুবই সামান্য কৃষিসম্পদ আছে। এ কথা সত্য যে, বিগত ১১ বছর ধরে দেশটিতে টানা বেড়েছে খাদ্যশস্যের উত্পাদন। কিন্তু এর জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। তাই সরকার আরও কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলতেচাইছে।

চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হেইলুংচিয়াংয়ে উত্পন্ন হয় দেশের প্রায় এক-দশমাংশ শস্য। কিন্তু এখানে ভূমিদূষণের মত কিছু কারণে একদিকে উত্পাদন-খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে উত্পাদনের পরিমাণ। এর জন্য কৃষকরা দায়ী করছেন রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে দিলে শস্য-উত্পাদন আরও কমে যাবে।

চীনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, দেশের অন্তত ১৬ শতাংশ কৃষিজমিতে অতিরিক্ত দূষণকারী পদার্থ আছে; ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের এক-তৃতীয়াংশেরও কম ফসল দ্বারা শোষিত হয়; জমিতে উত্পাদিত প্লাস্টিক শিটের দুই-তৃতীয়াংশেরও কম রিসাইকেল করা যায়; গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খামারের বর্জ্যের অর্ধেকেরও কম প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভব হয়, ইত্যাদি। এ সব কিছুই চীনের কৃষিজমিকে দূষিত করছে এবং পরিবেশ হচ্ছে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত।

ক্রমবর্ধমান মরুকরণ, পানিসম্পদের উত্স কমে যাওয়া, শিল্পদূষণ, এবং পর্যাপ্ত চাষযোগ্য জমি ধরে রাখার মত ব্যাপারগুলো নিয়েও উদ্বিগ্নকৃষি মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ তথা দেশটির মন্ত্রিপরিষদ সেচ সুবিধা বাড়ানো এবং কম-উত্পাদনক্ষম কৃষিজমির উত্পাদনক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। পরিকল্পনা অনুসারে, কৃষিকাজে একদিকে ফ্রেস পানির ব্যবহার যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনা হবে এবং অন্যদিকে দূষিত পানি ও বর্জ্যের পুনঃব্যবহার-প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদের মতে, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বড় সমস্যার একটি ছোট অংশ মাত্র।

চীনের কৃষিপণ্যের অধিকাংশই উত্পাদন করে ক্ষুদ্র চাষী বা ক্ষুদ্র চাষীদের গ্রুপগুলো। এরা কমিউনাল জমি চাষ করে। বলা হচ্ছে, খাদ্য উত্পাদন বাড়াতে এ ধারা পরিবর্তন করে বড় বড় কৃষিপণ্য উত্পাদক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।

উন্নত দেশগুলোতেও শুরুর দিকে কৃষি উত্পাদন বাড়ানোর দিকেই ছিল সকল মনোযোগ। উত্পাদন বাড়ানোর বিভিন্ন কলা-কৌশল পরিবেশের ওপর কী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, সে নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামানো হত না। চীনের কৃষিও এতদিন একই পথে চলেছে। চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির পল্লী উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষক লী কুওসিয়াং মনে করেন, কৃষি-ব্যবস্থাপনা খরচ এবং রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব।

চীনের কৃষি মন্ত্রণালয় গত মে মাসে একটি টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ পরিকল্পনা আগামী ১৫ বছরে কৃষিখাতে উন্নয়নের জন্য একটি সাধারণ দিক্‌নির্দেশনা। পরিকল্পনা অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পদের সর্বোচ্চ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং কৃষি অঞ্চলগুলোতে সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি উত্পাদন স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

চলতি বছরের শুরু থেকেই চীন সরকার দেশের উত্তরের কিছু অঞ্চলে স্বনির্ভরতা অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অঞ্চলগুলোতে একই সঙ্গে ফসল উত্পাদন ও গবাদিপশুপালন প্রকল্প চালু করা হয়। লি কুওসিয়াং মনে করেন, মানুষের জন্য খাদ্যশস্য উত্পাদনের চেয়ে, গবাদিপশুর জন্য পর্যাপ্ত আলফালফা ও শস্য উত্পাদন প্রকল্প ইনার মঙ্গোলিয়ায় ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ও কৃষকদের উত্সাহিত করতে ভর্তুকি ও প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।

হেইলুংচিয়াংয়ে একটি কোম্পানি ধানের খেতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে হাঁস পালন করেছে। হাঁসগুলো জমির আগাছা ও কীটপতঙ্গ খেয়ে কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে এবং তাদের মলমূত্র ধানের জমিতে জৈব সার হিসেবে কাজ করে। হাঁসের মলমূত্রে ধানগাছের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান থাকে। সমস্যা হচ্ছে, এ পদ্ধতিতে উত্পাদিত ধানের দাম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে উত্পাদিত ধানের চেয়ে দশ গুণ বেশি!

মোদ্দাকথা, চীনে কৃষিকাজে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনা সহজ কাজ হবে না। কিন্তু দেশের কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষা করতে এই কঠিন কাজটিই করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কেন্দ্রীয় সরকার। (আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040