Web bengali.cri.cn   
দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতায় চীনের নতুন মাত্রা যোগ
  2015-09-28 18:33:56  cri

সম্প্রতি নিউইয়র্কে চীন ও জাতিসংঘ যৌথভাবে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে। এ বৈঠকে চীন অংশগ্রহণ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতায় ইতোমধ্যেই নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সমাজ যখন ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন সমান তালে এগিয়ে চলেছে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাও। আর এ সহযোগিতায় চীন বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

'দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা' মানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আর্থনীতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা। উন্নয়নশীল দেশগুলো এ সহযোগিতা ব্যবস্থার প্রস্তাবক, সংগঠক ও পরিচালক। 'দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা' হচ্ছে অভিন্ন উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য পরিচালিত বহু পর্যায়ের সহযোগিতা। এ সহযোগিতা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অধিকাংশের অবস্থান পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে। আর এ কারণেই এ সহযোগিতার নামকরণ হয়েছে 'দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা'।

দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা গত শতাব্দীর ৫০'র দশক থেকে শুরু হয়। প্রথম দিকে এ সহযোগিতা সীমাবদ্ধ ছিল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। কিন্তু পরবর্তী কালে এ সহযোগিতা আর্থনীতিক ক্ষেত্রেও সম্প্রসারিত হয়। ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত বান্দুং সম্মেলনকে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার প্রথম মাইলফলক বলা যেতে পারে। আর ১৯৬১ সালে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন এবং ১৯৬৪ সালে ৭৭-জাতিগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা হচ্ছে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার প্রকৃত সূচনা।

চলতি বছর হচ্ছে জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নির্ধারিত শেষ বছর এবং জাতিসংঘের ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ শুরুর বছর। এ প্রেক্ষাপটেই আন্তর্জাতিক সমাজ দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান করেছে এবং সহযোগিতার নতুন কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেছে।

বেসরকারি সংগঠন দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার টেকসই উন্নয়ন নির্দেশনা কমিটির চেয়ারম্যান জন অ্যাশে আশা প্রকাশ করেছেন যে, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা জাতিসংঘের পরবর্তী উন্নয়ন কর্মসূচিতে অধিক গুরুত্ব পাবে। তিনি বলেন, "আমরা জানি, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা গত শতাব্দীর ৭০'র দশক থেকে নিরন্তরভাবে জোরদার হয়ে আসছে। আমরা আশা করি, ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন কর্মসূচির কাঠামোতে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা আরও বেশি গুরুত্ব পাবে এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্লাটফর্মে পরিণত হবে।"

এ ক্ষেত্রে চীন লক্ষ্যণীয় অবদান রেখেছে। চীন নিজের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছে এবং নিজের স্বার্থকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থের সাথে যুক্ত করে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মান উন্নত করতে অদ্বিতীয় ভূমিকা পালন করেছে।

অ্যাশে বলেন, চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' ধারণা পেশ করেছে। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার অভিজ্ঞতা থেকে এ ধরনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের কৌশল বের করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, "দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার অভিজ্ঞতা থেকে অনেককিছু শেখার আছে। বহু বছর ধরে অর্জিত দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার অভিজ্ঞতা 'এক অঞ্চল, এক পথ' ধারণা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।"

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহযোগিতার ক্ষেত্র দিন দিন প্রসারিত হয়েছে, সহযোগিতার মানও উন্নততর হয়েছে। 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের 'আন্তঃযোগাযোগ' কাঠামো গড়ে তোলা, এশিয়ার অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, রেশমপথ তহবিল প্রতিষ্ঠা, 'দ্রুতগতির রেলপথ কূটনীতি', রেনমিনপির আন্তর্জাতিকীকরণ, ইত্যাদি সবই ছিল দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতায় চীনের যোগ করা নতুন নতুন সব মাত্রা।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সহযোগিতা ও অভিন্ন কল্যাণভিত্তিক নতুন ধরণের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার কথা বলছেন। তিনি চীনের সাথে আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল, আরব বিশ্ব, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, ব্রাজিল ও পাকিস্তানের বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় কল্যাণমুখী সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছেন। তিনি বর্তমান জটিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে দিক্‌-নির্দেশনা দিয়েছেন।

এ কথা সত্য যে, উন্নয়নের পথ ধরে দক্ষিণের দেশগুলো সমানতালে এগুতে পারছে না। জাতিসংঘের উপাত্ত অনুযায়ী, বিশ্বে এখনও ২২০ কোটি মানুষ দরিদ্র বা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে; প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ বিদ্যুত্সুবিধা থেকে বঞ্চিত; ৯০ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি পায় না; ২৬০ কোটি মানুষ যথাযথ চিকিত্সাসেবা থেকে বঞ্চিত। বলা বাহুল্য, এসব মানুষের অধিকাংশই দক্ষিণের দেশগুলোতে বাস করেন। আর এ জন্যই দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ওপর বিশেষজ্ঞরা এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

আসলে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ভিত্তি হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা ও অভিন্ন স্বার্থ। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা হচ্ছে দক্ষিণ-উত্তর সহযোগিতার পরিপূরক। এ দুটো সহযোগিতা একে অপরের বিকল্প নয়। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা সম্প্রসারণের পাশাপাশি দক্ষিণ-উত্তর সংলাপকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, শিল্পোন্নত দেশগুলোকে আরও বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে। দক্ষিণ-উত্তর ব্যবধান কমিয়ে নতুন ধরণের বৈশ্বিক কাঠামো গড়ে তোলা বিশ্বের টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত বলেই আজকাল বিশ্বাস করা হয়। আর এ লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040