Web bengali.cri.cn   
যে হোটেল পরিচালনা করছে রোবটরা
  2015-10-19 15:02:41  cri


যদি আপনি জাপানের 'হেন-না' হোটেলে প্রবেশ করেন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন, হোটেলটিতে রিসেপশনের কাজ করছে রোবট, লাগেজ রুমে পাঠানোর কাজ করছে রোবট। এমন কি রুম সার্ভিসের কাজটিও করছে রোবট। এটি যেন সত্যিই রোবটদের দ্বারা পরিচালিত একটি হোটেল।

হোটেলটির কয়েকটি রোবটরিসেপশন লাগেজ নেয়া, লাগেজ সংগ্রহ করে রাখা ও অতিথিদের সেবা করে।

এ ছাড়া রয়েছে আরো কয়েকটি রোবট, যারা বিশেষ করে অতিথিদের আনন্দ দিয়ে থাকে।

যদি আপনি এ হোটেলে প্রবেশ করেন, তাহলে রিসেপশনে স্যুট পরা একটি রোবট ডাইনোসর আপনাকে বলবে, যদি আপনি চেক ইন করতে চান, তাহলে "১" প্রেস করুন প্লিজ"। আপনি তার কথা মত "১" প্রেস করার পর টাচস্ক্রিনে ব্যক্তিগত তথ্য নিবন্ধন করার পর চেক ইন করতে পারবেন।

হয়তো আপনি মনে করতে পারেন ডাইনোসর চেহারার রোবট দেখতে ততটা সুন্দর নয়, তাহলে আপনি তার কাছে দাঁড়ানো মৃদুহাসিমাখা বড় চোখের সুন্দরী রিসেপশনিস্টকে বাছাই করতে পারেন। অবশ্য সেও রোবট।

রিসেপশন রোবট অতিথির জন্য চেক ইন ও চেক আউটের সেবা দিতে পারে। রোবট খুব ভালোভাবে কণ্ঠস্বর চিহ্নিত করতে পারে। জাপানি ভাষা ছাড়া সে ইংরেজি, চীনা ভাষা ও কোরিয়ান ভাষাও বুঝতে পারে।

চেক ইনের পর অতিথি দামি ও মূল্যবান জিনিসপত্র জমাকারী রোবটের কাছে রাখতে পারেন। সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা ধরে রোবটের কাছে পণ্য রাখতে পারেন।

এ রোবটকে একটি সিন্দুক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। দামি লাগেজ রোবটের কাছে রাখার পর অতিথি তার অন্য লাগেজকে অপর এক রোবটের কাছে দিতে পারেন, এ রোবট আপনার সব লাগেজ আপনার রুমে নিয়ে যাবে।

অতিথি শুধু লাগেজকে রোবটের ওপর রাখেন এবং টাচস্ক্রিনে রুম নং কনফার্ম করেন, এটাই যথেষ্ট। এই রোবট ৫০ কেজি লাগেজ পরিবহন করতে পারে এবং এর জন্য তাকে কোনো বকশিশও দিতে হয় না।

রোবটদের এই হোটেলরুমে প্রবেশের ক্ষেত্রে মুখ চিহ্নিত করার ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।

সাধারণত আমরা যখন হোটেল রুমে প্রবেশ করি তখন আমাদের কার্ডের প্রয়োজন হয়, তবে এই রোবট হোটেলে কোনো রুম কার্ড নেই। একটি ক্যামেরা আপনার মুখ চিহ্নিত করবে এবং তখন আপনার জন্য আপনার রুমের দরজা খুলে যাবে। তা অতিথির জন্য খুব ভালো ব্যবস্থা। কারণ আপনাকে আর চাবি বা রুম কার্ড হারানোর জন্য চিন্তা করতে হবে না। আর এতে থাকার নিরাপত্তাও হয়েছে আরো শক্তিশালী।

রুমে প্রবেশের পর একটি পুতুলের মত রোবট আপনার জন্য নাস্তার সময়সহ হোটেলের মূল তথ্য ব্যাখ্যা করবে।

রুমে আরো একটি ছোট রোবট আছে। সে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, যেমন বর্তমানের সময়, আজকের আবহাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ছাড়া সে আপনার জন্য বাতিও জ্বালাতে পারে।

এ রোবট রাখার প্রধান উদ্দেশ্য হলো অতিথিদের আরো ভালোভাবে হোটেলকে ঘিরে অবস্থিত পার্ক পরিদর্শনে সাহায্য করা। এ ছাড়া আপনি যদি স্থানীয় কিছু বিশেষ খাবার বা স্মারকবস্তু কিনতে চান, রোবট আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।

এ হোটেলটির কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন হোটেলের ৯০ শতাংশ সেবার কাজ রোবটরা করে থাকে। শুধুমাত্র নিরাপত্তা রক্ষা এবং বিছানা পরিস্কার করার কাজটি এখন রোবট করতে পারে না।

হেন-না হোটেল জাপানের নাগাসাকি শহরের 'হুয়িস টেন বশ্চ' নামে একটি থিম পার্কে অবস্থিত। এ পার্কের অন্যান্য হোটেলের রুমের ভাড়া ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ইয়েনের মত। তবে হেন-না হোটেলের রুম ভাড়া শুধুমাত্র ১০ হাজার ইয়েন।

এবার তাহলে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন এ রোবট হোটেলের ভাড়া এত কম?

আসলে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের কিছু বিষয় জানতে হবে।

তথ্য অনুযায়ী, হোটেল পরিচালনায় তিনটি ক্ষেত্রের খরচ অনেক বেশি। তা হলো নির্মাণের ফি, কর্মীর ফি এবং বিদ্যুত্ ও পানির ফি।

অন্য হোটেলের তুলনায় হেন-না হোটেলের রুমও অনেক বড়, তাহলে কি হেন-না হোটেলের ডিজাইন অনেক খারাপ?

আসলে এ হোটেলের ডিজাইন থেকে নির্মাণ সম্পন্ন পর্যন্ত তিন বছর সময় লেগেছে। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ডিজাইনার দল হোটেলটি ডিজাইন করেছেন।

এ ছাড়া রোবট ডিজাইন ও হোটেল পরিচালনা ক্ষেত্রের দুই শতাধিক বিশেষজ্ঞ একসাথে হোটেলের ডিজাইন ও নির্মাণ কাজ করেছেন। বলা যায়, জাপানের বিভিন্ন মহলের শ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ এতে অংশ নিয়েছেন।

আসলে হোটেলের রুমের ভাড়া কমের প্রধান কারণ হলো এ হোটেলে তত বেশি কর্মী নেই। রোবটকে বেতন দেওয়ার কোনো দরকার নেই। এ খরচ সাশ্রয় হয়েছে।

এ ছাড়া হোটেলটি সবচেয়ে উন্নত মানের পরিবেশ সুরক্ষা এবং জ্বালানি সাশ্রয় প্রযুক্তি ও ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে। এতে হোটেলের বিদ্যুত্ ও পানির ফিও সাশ্রয় হয়েছে।

চলতি বছরের জুলাই মাসে হোটেলের প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং তা চালু করা হয়েছে। এখন হোটেলটি দু'তলার। মোট ৭২টি রুম আছে। বর্তমানে হোটেলের দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী বছরের মার্চ মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। তখন রুমের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

আসলে হেন-না হোটেল চালু করার পর এটি যে কেবল জাপানেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা নয়, বিদেশেও এটি খুব বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। অনেক বিদেশি পর্যটক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ হোটেলের রুম বুক করে থাকেন।

আসলে মেশিন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি জাপানিদের একধরনের বিশেষ আবেগ লক্ষ্য করা যায়। কার্টুন থেকে চলচ্চিত্র পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই আমরা তা দেখতে পাই। যেমন বিশ্ববিখ্যাত কার্টুন 'ডোরেমন'। বাংলাদেশেও এটি খুব জনপ্রিয় ।

আপনি যদি জাপানি ভাষা বুঝতে পারেন, তাহলে এ হোটেলের নাম শুনে বুঝতে পারবেন যে, আসলে কি উদ্দেশ্য হোটেলটির।' হেন' মানে পরিবর্তন, মানে হোটেলটি নতুন কিছু চায়।

অনেকেই বলেন, হেন-না হোটেল জাপানের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এবার তাহলে প্রশ্ন জাপানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কি?

আসলে এ দেশটিতে জনগণের জীবনে রোবটের ভূমিকা দিন দিন বাড়ছে। লোকজন এখন রোবটের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ লোকজনও রোবট ব্যবহার করতে পছন্দ করছেন।

রোবট মানুষকে খুব জটিল কাজ থেকে মুক্তি দিয়েছে, এর ফলে লোকজন জীবনের সুবিধা উপভোগ করতে পারছেন, আর নষ্ট করতে হচ্ছে না সময়ও।

এর ফলে লোকজন আরো বেশি সময় নিয়ে চিন্তা করতে পারবেন। উদ্ভাবন বা আবিষ্কার করতে পারবেন অন্য কিছু যা জীবনকে করবে সহজ, সরল ও আকর্ষণীয়।

(ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040