Web bengali.cri.cn   

হাই নান সফর-১

  2015-11-04 14:22:09  cri

গত ২৯ অক্টোবর সিআরআইর পক্ষ থেকে একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদল বিমানযোগে পৌঁছায় হাই নান। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট দলটিতে ছিলাম আমি ও বাংলা বিভাগের আলিম, হিন্দি বিভাগের ছাং সিয়াও ও আখিল, এবং তামিল বিভাগের ছাং থুং ই। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল সমুদ্র সৈকতের শহর ছান ইয়া। এর পর আমরা যাই যথাক্রমে ওয়ান নিং ও হাই কো শহর। আমাদের এ সাত দিনব্যাপী সফরে আমরা বিভিন্ন স্থানে গিয়েছি, অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রিয় শ্রোতা, এখন শুনবেন ছান ইয়ায় আমাদের ভ্রমণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন।

হাই নান যেমন চীনের একটি প্রদেশ তেমনি একটি দ্বীপও বটে। এটা চীনের মূল ভূখণ্ডের বৃহত্তম দ্বীপ। এর আয়তন ৩৫.৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। ছান ইয়া হাই নানের সবর্দক্ষিণে অবস্থিত একটি শহর। এ শহরের আয়তন ১৯০০ বর্গকিলোমিটার। এটি একটি ক্রান্তীয় উপকূলীয় শহর। চীনের এ শহরটির বায়ুর মান সবচে' ভাল। এখানে মানুষের গড় আয়ু ৮০ বছর। তাই শহরটিকে অনেকে 'দীর্ঘায়ু শহর' বলে ডাকেন।

ছান ইয়ার সমুদ্রের পানি নীল। এখানকার সমুদ্র সৈকত চীনের মধ্যে সর্বোত্তম। তাই এখানে সমুদ্রভিত্তিক পর্যটনশিল্প গড়ে উঠেছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা এখানে দিন দিন বাড়ছে। ছান ইয়ার স্থায়ী অধিবাসীর সংখ্যা ৭.৪ লাখ এবং তাদের মধ্যে লি জাতি ও মিয়াও জাতিসহ ২০টি সংখ্যালঘু জাতির মানুষ রয়েছে।

ছান ইয়ার সারা বছরজুড়ে গড় তাপমাত্রা থাকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে শীত নাই বললেই চলে। চীনের অন্যান্য স্থানে যখন তাপমাত্র শূন্যের নীচে নেমে যায়, ছাই ইয়ায় তখন গড় তাপমাত্রা থাকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালটা তাই অনেক সামর্থ্যবান চীনা পরিবার এখানে কাটাতে পছন্দ করেন। আর প্রচণ্ড শীত থেকে কয়েকটা দিনের জন্য হলেও অনেকেই ছান ইয়ায় ভীর জমান চীনের বিভিন্ন স্থানের মানুষ। আছে বিদেশি পর্যটকও।

আগেই বলেছি, ছান ইয়ার পর্যটনশিল্প গড়ে উঠেছে সমুদ্রকে কেন্দ্র করে। এখানে কয়েকটি সৈকত আছে। আমরা আমাদের তিন দিনের ছান ইয়া অবস্থানকালে তিনটি সৈকতে গিয়েছি। প্রথম দিনই আমরা হাজির হই তা তুং হাই সমুদ্র সৈকতে। সৈকতে পৌঁছে আমরা সবাই অভিভূত হই। বিশেষ করে আমাদের বাংলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ আলিমুল হকের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। বেলাভূমিতে বসে আমি তখন তার সঙ্গে তার অনভূতির কথা শুনেছি। এখন শুনুন সেই কথোপকথন।

ছান ইয়া সফরে আমাদের দ্বিতীয় দিনের গন্তব্য ছিল 'রোজ ভ্যালি' নামের একটি দর্শনীয় স্থান। জায়গাটি আগে ছিল লি জাতির একটি ছোট গ্রাম। এখন সেখানে গড়ে উঠেছে একটি স্থায়ী গোলাপ প্রদর্শন ও উত্পাদনকেন্দ্র। লান তে নামক একটি কোম্পানি ২০০৯ সালে পো হো নামের ছোট্ট গ্রামে প্রতিষ্ঠা করে গোলাপ চাষের কেন্দ্র। এর আগে ছান ইয়াতে গোলাপ-শিল্পের অস্তিত্ব ছিল না। ব্যবসার কথা মাথায় রেখে এখানে তখন গোলাপ চাষ হতো না। গ্রামে ধান চাষ হতো। তখন এখানকার পরিবারগুলো মাসে গড়ে ১০০০ ইউয়ান করে আয় করতে পারতো।

এমনি এক প্রেক্ষাপটে সেখানে লান তে কোম্পানির আবির্ভাব। গ্রামবাসীরা তাদের জমি কোম্পানির কাছে ভাড়া দিতে সম্মত হয়। এখন তারা তাদের জমির ভাড়া বাবদ মাসে গড়ে ৩০০০ ইউয়ান করে পায়। শুধু তাই নয়, তারা গোলাপ চাষ, এর প্যাকেজিং ও বিক্রি প্রক্রিয়ার সঙ্গেও নানাভাবে জড়িত। এ জন্যও তাদের অতিরিক্ত আয় হয়। গ্রামবাসীদের মধ্যে যারা প্রবীণ এবং ম্যান্ডারিন বলতে পারেন না তারা গোলাপ চাষ ও প্যাকেজিংয়ের সঙ্গে জড়িত। আর ম্যান্ডারিন জানা যুবক-যুবতীরা এখানকার গোলাপ পার্কে কাজ করেন গাইড হিসেবে। এখন গ্রামের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ইউয়ান, যা ছান ইয়ার অন্যান্য গ্রামের তুলনায় অনেক বেশি।

২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রোজ ভ্যালি পরিদর্শন করেন। তিনি গোলাপ চাষ ছাড়াও পর্যটনশিল্প উন্নয়নের নির্দেশ দেন। তারপর শরু হয় রোজ পার্ক তৈরির কাজ। পার্কে দেখা যায় ১৫০০টির বেশি ধরনের গোলাপ। এখানে গোলাপ দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন পণ্যও। যেমন: রোজ চা, সুগন্ধি, বিভিন্ন ধরনের খাবার ইত্যাদি।

সরকার ও কোম্পানির সাহায্যে এ গ্রামের মানুষের আয় বেড়েছে, জীবনমান উন্নত হয়েছে। পাশাপাশি এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এখানে পরিবেশবান্ধব উত্পাদন-প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। (শিশির)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040